দায়িত্ব নেয়ার ১৯ দিনের মাথায় মারা গেলেন জগন্নাথপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আকমল হোসেন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:৩০:৩৭ অপরাহ্ন
আওয়ামী লীগের তিন দিনের শোক ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলের শোক
জগন্নাথপুর সুনামগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : দায়িত্ব গ্রহণের ১৯ দিনের মাথায় মারা গেলেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকমল হোসেন (৬৭)। সোমবার রাত দেড়টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
গত ২ নভেম্বর জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গত ৮ ডিসেম্বর তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নেন। দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ১৯ দিনের মাথায় তার মৃত্যু হলো। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৫ ছেলে, ৪ মেয়ে রেখে গেছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় সিলেট নগরীর নাইওরপুল জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে সকাল ১১ টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য লাশ জগন্নাথপুর আনা হবে। পরে বেলা আড়াইটায় উপজেলার মীরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসি স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
সূত্র জানায়, আকমল হোসেন গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় গিয়েছিলেন। রাজধানীর পল্টন এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে সোমবার রাত সাড়ে ১২ টায় তিনি আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়ার পর রাত দেড়টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে সাথে সাথে হাসপাতালে ছুটে যান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুক, উপজেলা পরিষদ সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমেদ মুক্তা, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন লালন। সেখান থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিলেটের বাসায় মরদেহ নিয়ে আসা হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতরণা হয়। সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাকে শেষবারের মতো দেখতে তাঁর বাসায় ভিড় করেন। পরে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে গোসল করিয়ে লাশ মরচুয়ারিতে রাখা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনী : মীরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসি গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তালেব আলীর সন্তান আকমল হোসেন ১৯৯৮ সালে মীরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মতো মীরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে গোল্ড মেডেল পান। ২০০৯ সালে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নেন। সে সময় চেয়ারম্যান পদের ফলাফল নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দিলে উচ্চ আদালতের রায়ে শাহারপাড়া এক কেন্দ্রে পুন:ভোটের মাধ্যমে তিনি ২০১১ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান মনোনীত হন। গত ২ নভেম্বর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি ফের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
আকমল হোসেন ১৯৯৮ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ গত ১৬ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি আবারও সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি একজন সৎ,পরিচ্ছন্ন, নির্ভীক, ধৈর্যশীল আপাদমস্তক সজ্জন রাজনীতিবিদ ছিলেন। শ্রীরামসি স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শহীদ স্মৃতি সংসদ শ্রীরামসির উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তাঁর চাচাতো ভাই সাদ উদ্দিন শহীদ হন।
তিনদিনের শোক : তাঁর মৃত্যুতে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ তিন দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকমল হোসেনের মৃত্যুতে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে তিন দিনের শোক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের কালো ব্যাজ ধারণ ও বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মরদেহে সকাল ১১ টায় শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকতে তিনি অনুরোধ করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রীর শোক : জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকমল হোসেনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জগন্নাথপুর- শান্তিগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এক শোকবার্তায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আকমল হোসেন ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের এক পরীক্ষিত কর্মী। তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও জনমানুষের প্রতি তাঁর সম্পৃক্ততা তাকে বার বার জনপ্রতিনিধির আসনে বসিয়েছে। সাম্প্রতিক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনকল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি আকমল হোসেনকে একজন সৎ নির্ভীক পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে চিনি। তাঁর অকাল মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
মহানগর আওয়ামী লীগের শোক
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আকমল হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
এক শোক বার্তায় মহানগর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ জাকির হোসেন তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
শোক বার্তায় তারা বলেন, তাঁর মৃত্যুতে জগন্নাথপুর রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হলো। যা পূরণ হবার নয়।
বিভিন্ন মহলের শোক : আকমল হোসেনের মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, সহ সভাপতি সিদ্দিক আহমেদ, সৈয়দ আবুল কাশেম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, মাহতাবুল হাসান সমুজ, উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব, মুক্তাদীর আহমেদ মুক্তা, জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম রিজু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান, সাবেক সহ সভাপতি সিরাজুল হক, আব্দুল কাইয়ুম মশাহিদ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান, সিরাজ উদ্দিন মাস্টার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম, জয়দ্বীপ সূত্রধর বীরেন্দ্র, প্রচার সম্পাদক আব্দুল জব্বার, সহ প্রচার ফিরোজ আলী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান, সহ প্রচার সম্পাদক ফিরোজ আলী, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আহাদ, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি দ্বিপঙ্কর কান্তি দে, সাবেক সভাপতি তনুজ কান্তি দেব, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন সহ সভাপতি সাইফুল ইসলাম রিপন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন লালন, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল মুকিত, সাধারণ সম্পাদক তাহা আহমেদ, জগন্নাথপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শংকর রায়, সহ-সভাপতি তাজ উদ্দিন আহমেদ, এনামুল হক রেনু, সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হাসান সুনু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অমিত দেব, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হাই, সদস্য আলী আহমেদ, সাংবাদিক জুয়েল আহমেদ, আমিনুল হক সিপন, রেজওয়ান কোরেশি, উপজেলা শিক্ষক প্রতিনিধি রূপক কান্তি দে, উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি নুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক জাহির উদ্দিন, জগন্নাথপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আফসর উদ্দিন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।