শীতজনিত রোগব্যাধী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:৫৪:৪৭ অপরাহ্ন

রঞ্জিত কুমার দে
বাংলাদেশে ষড়ঋতুর পঞ্চম ঋতু হলো শীত। শীত গ্রীষ্মের ঠিক বিপরীত। পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস নিয়ে শীতকাল। ইংরেজি মাসের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল হলেও মূলত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীত অনুভূত হয়। শীতকালে আমাদের দেশে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। শীতকালের তাপমাত্রা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে নিম্নে নেমে যায়। এ সময় তীব্র শীত পড়ে। শীতকালে দিন ছোট আর রাত হয় দীর্ঘ।
বাংলাদেশের বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের মাত্র ৪ শতাংশ শীতকালে হয়। দেশে শীতের প্রকোপ কতটা ভয়াবহ, তার চেয়েও জরুরি প্রশ্ন হলো সেই শীত নিবারণের সুযোগ ও সামর্থ্য আমাদের আছে কিনা। উন্নত দেশগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় নানারকম আগাম পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষগুলোর বাড়িঘর এতই নাজুক ও নড়বড়ে যে তা শীত ঠেকাতে পারে না। শীত মৌসুম শুরু হতেই হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ।
পরিবর্তিত আবহাওয়ায় বেশি ছড়াচ্ছে রোগজীবাণু। অন্যদের তুলনায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত বেশি হচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে রোগীর পরিমাণ বেড়েছে। শীতে প্রধানত বাড়ে শ্বাসতন্ত্রের রোগ। যদিও এসব রোগের প্রধান কারণ ভাইরাস, তবু তাপমাত্রার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। শীতের বাতাসের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে আর্দ্রতাও কমে যায়, যা শ্বাস নালির স্বাভাবিক কর্মপ্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে ভাইরাসের আক্রমণ সহজ করে। শুষ্ক আবহাওয়া বাতাসে ভাইরাস ছড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া ধুলাবালুর পরিমাণ বেড়ে যায়। ঠান্ডা, শুষ্ক বাতাস হাঁপানি রোগির শ্বাসনালিকে সরু করে দেয়, ফলে হাঁপানির টান বাড়ে।
আকস্মিক ঠান্ডায় নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়তে পারে। তরুণ, অল্পবয়স্ক, স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদেরও নিউমোনিয়া হতে পারে। বাংলাদেশে এখনো শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতন হলেই শিশুদের শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। সূর্য ডোবার আগে ও পরে ঘর যথাসম্ভব গরম রাখতে হবে। ধুলাবালু ধোয়া থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। হালকা কুসুম গরম পানি খাওয়াতে হবে এবং কুসুম গরম পানিতে গোসল করাতে হবে। বিশুদ্ধ খাবারের পাশাপাশি, তরল জাতীয় খাবার গরম করে খাওয়াতে হবে। অ্যালার্জি থেকে রক্ষা পেতে পরিষ্কার কাপড় পরাতে হবে এবং ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। তবে রোগী আশঙ্কাজনক হলে হাসপাতালে যেন সেবা পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়ায় প্রকোপ বেড়েছে। এতে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়।
যেহেতু গ্রীষ্মপ্রধান দেশ তাই শীতকাতর অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে প্রথমত প্রশাসন তথা সরকারকেই। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। দিনমজুর ও হতদরিদ্রের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে সবাই এগিয়ে এলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে না।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।