বেকার ছেলের হাত ধরে জিতলেন মারজানা!
বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত সেলিম আল দ্বীনের আবেগঘন স্ট্যাটাস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ আগস্ট ২০২৩, ৯:১০:৪৪ অপরাহ্ন

লবীব আহমদ : “এই সেই মহিলা, যে জেনেশুনে একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করেছিলেন। বিশ্বাসের জোরে আজ সে বিসিএস ক্যাডারের বউ।”- পোস্টটি মুহূর্তেই দেশজুড়ে ভাইরাল হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ার পোস্টটি সেলিম আল দ্বীন নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার। তিনি ৪১তম বিসিএস শিক্ষা (গণিত) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। সেলিম আল দ্বীন সিলেট সরকারি এমসি কলেজের সাবেক ছাত্র।
দেখা গেছে, সেলিম আল দ্বীন এর ফেইসবুক পোস্টটি শেয়ারের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রুপ ও বিশেষ ব্যক্তিবর্গ তাদের নিজস্ব ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট করতে থাকেন। অনেকে উদাহরণ টেনেছেন- বর্তমানে বেকার শুনলে কেউই বিয়ে তো দূরে থাক, সম্পর্কই করতে রাজি হন না। দীর্ঘ এগারো বছরের ভালোবাসার সম্পর্ককে পূর্ণতায় রূপ দিয়ে বেকার ছেলেকে বিশ্বাস করেছিলেন বলেই মারজানা গাজী পায়েল আজ বিসিএস ক্যাডারের বউ হতে পেরেছেন।
ফেইসবুকে এই পোস্ট করা সেলিম আল দ্বীন ৪১তম বিসিএস শিক্ষা (গণিত) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেখান থেকে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পড়ালেখা শেষ করেছেন। গণিত বিষয়ের প্রতি তার এতই জোক ছিলো যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেলেও সেখানে ভর্তি না হয়ে এমসি কলেজের গণিত বিভাগে ভর্তি হন। অনার্স শেষ করে ২০১৭ সালের দিকে তিনি বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নেন। বিসিএসের টেনশন তাকে ঠিকমতো ঘুমাতে দিতো না। সকাল থেকে পড়াশোনা শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলতো তার অবিরাম পড়াশোনা। সিলেটের পাবলিক লাইব্রেরিতে সকাল ১০টায় গিয়ে বসতেন পড়তেন আর বিকেল ৫টায় সেখান থেকে বাসায় ফিরতেন। পরে বাসায় ফিরেই আবার পড়াশোনা শুরু করতেন বলেও জানান সেলিম। রাতে ২/৩ টায় ঘুমাতেন নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশার কারণে অনেক সময় ঘুমই হতো না বলে জানান তিনি। বিসিএস প্রস্তুতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে চাকুরীর পরীক্ষা দেন। সেখানেও উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ৩৮ ও ৪০তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ হলেও রিটেনে গিয়ে আটকে যান। পরে ৪১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করেন সেলিম আল দ্বীন। সেলিম আল দ্বীন এর বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চর মধুয়ায়। বর্তমানে তিনি জনতা ব্যাংক লিমিটেডের কুমিল্লার কোম্পানিগঞ্জ শাখার সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি রূপালী ব্যাংক লিমিটেড ও প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকেও চাকুরী পান। ২০২০ সালে তার ভালোবাসার মানুষ মারজানা গাজী পায়েলের সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মারজানা গাজী পায়েল নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তারা দাম্পত্য জীবনে ১ কন্যা সন্তানের অধিকারী।
সেলিম আল দ্বীন জানান, বিসিএস ক্যাডারের পরিচয়ের জন্যে কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি! গভীর রাতে ঘুমাতে গিয়েও ঠিকঠাক ঘুম আসত না, এই স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপ দিবো এই আশায়। সবকিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ। আমার বাবা-মার পাশাপাশি আমার স্ত্রী পাশে থেকে আমার এই যাত্রায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে আমি সিলেটে থাকাকালীন আমার খালা ও খালু মদিনা মার্কেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মঈনুল ইসলাম আমাকে নিজের ছেলের মতো তাদের বাসায় রেখে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। তাদের বাসায় থেকেই আমি এমসি কলেজে পড়াশোনা শেষ করি এবং ১০বছর সেখানে থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএস-এর জন্য প্রস্তুতি নিই।
স্যারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেলিম বলেন, আমার বিসিএস যাত্রায় আমার কলেজের স্যাররা বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। যখন এমসি কলেজে প্রথম ভর্তি হই, তখন তারা বলেছিলেন বিসিএসের স্বপ্ন থাকলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশেষ করে কলেজের আনোয়ার স্যার, তপতী চৌধুরী ম্যাম, গিয়াস স্যার, সাগর স্যার ও দিলীপ স্যার আমাকে সবসময় কল দিয়ে খোঁজ নিয়েছেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বিশ্বাস যুগিয়েছিলেন যে, আমার বিসিএস হবে। শেষপর্যন্ত তাই হয়েছে।
ফেইসবুক স্ট্যাটাস সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা অনেক আগে থেকেই আমার মনের মধ্যে সাজানো ছিল। যে মেয়েটি আমার বেকার থাকা অবস্থায় পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়েছিল, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এই পোস্ট। সে সাপোর্ট দিয়েছিল বলেই তাকে বাসায় রেখে আমি বাইরে থেকে পড়াশোনা করতে পারছি।
নতুন বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়াদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যাদের স্বপ্ন বিসিএস, তাদেরকে আন্তরিকতার সাথে ধৈর্য্য নিয়ে পরিশ্রম করে যেতে হবে। হুট করেই বিসিএসে ভালো ফল পাওয়া যাবে না। প্রচুর পরিমাণে পড়াশোনা করতে হবে।
এমসি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দিলীপ রায় বলেন, ৩২তম বিসিএসের পর খরা চলছিল সিলেটের এমসি কলেজের গণিত বিভাগে। ৪১তম বিসিএসে এসে সেলিম সেই খরায় এক পশলা বৃষ্টি এনে দিল। তার পরিশ্রম তাকে এই সফলতায় পৌঁছাতে সহায়তা করেছে।