ওসমানী হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলন
সিলেটে কক্লিয়ার ইমপ্লান্টে শ্রবণশক্তি ফিরে পেলেন ৬২ জন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০২৪, ৪:০২:৫৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে জন্মগত শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের শ্রবণশক্তি ফিরিয়ে দিতে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সেন্টারের কার্যক্রম চলছে। এই সেন্টারের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৬২ জন তাদের শ্রবণশক্তি ফিরে পেয়েছেন। তারা সকলেই কানে শুনছে এবং কথা বলতে পারছে। অত্যাধুনিক এই যন্ত্রের দাম সাত থেকে সাতাশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর কমপ্লেক্সের দশম তলায় নাক কান গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ সকল তথ্য জানানো হয়।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কর্মসুচীর পরিচালক বিশিষ্ট নাক কান গলা ও হেড-নেক চিকিৎসক ডা. নূরুল হুদা নাঈম।
ডা. নুরুল হুদা নাঈম বলেন, ‘কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট’ কার্যক্রমে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগ শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছে। সরকারি অর্থায়নে এ পর্যন্ত সফলভাবে বধির ৬২ জনকে সার্জারি করে দেয়া হয়েছে অত্যাধুনিক ডিভাইস। এর মধ্যে পুরুষ ৩২ জন ও ৩০ জন হলেন নারী।
৬২ জনের মধ্যে ৩ জন বয়স্ক রোগীও আছেন। বর্তমানে আরও ৪২ জন রোগীর আবেদন জমা পড়েছে। এই সার্জারি প্রক্রিয়াটি অত্যান্ত জটিল। অভিজ্ঞ লোকবলের অভাবের কক্লিয়ার সার্জারি অনেক স্থানে করা সম্ভব না হলেও সিলেটের এই প্রধান হাসপাতালে ৬ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। সে জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসছেন রোগীরা । কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারি করা সকলেই কানে শুনছে এবং কথাও বলতে পারছে। সার্জারির পরে যে ডিভাইসটি কানের মধ্যে স্থাপন করে দেয়া হয় অত্যাধুনিক এই যন্ত্রের দাম সাত থেকে সাতাশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই ডিভাইসের অর্থায়ন করছে সরকারের সমাজসেবা অধিদফতর। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগ বাকি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করছে করে যাচ্ছে। কেবল সিলেট বিভাগ নয় ঝিনাইদহ, বি-বাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলার শিশুরাও এই সেন্টার থেকে সেবা পাচ্ছেন।
ডা. নাঈম আরও জানান, জন্মগতভাবে যে সব শিশু বধির তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ কানে শোনার যন্ত্র স্থাপন করা হয়। এই যন্ত্রটি নিয়ে মানুষ সাঁতার কাঁটতে পারে, যন্ত্রটির কোনো সমস্যা হয়না। যন্ত্রটি ব্যয়বহুল হওয়ায় সবাই ব্যবহার করতে পারেনা। কিন্তু সরকার এটি একেবারে বিনামূল্যে দিচ্ছে। যেসব শিশু জন্মগতভাবে বধির তাদেরকে পাঁচ বছর বয়সের আগেই এখানে নিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, পাঁচ বছরের আগে এটি করা হলে তুলনামূলক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট’ কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। যাতে করে সাধারণ লোকজন সরকারের এই সেবা গ্রহণ করতে পারেন। ২০২২ সালের ২২ মে প্রথম সার্জারি করার মধ্য দিয়ে শতভাগ সাফল্যের সাথে এই সেন্টার কাজ করছে। রাজধানীর বাইরে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারিতে সিলেট ওসমানী হাসপাতাল সুনাম অর্জন করেছে। হাসপাতালের মোট ছয়টি বিভাগের চিকিৎসকগণও এই কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। রোগীর ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার টেস্ট করা হয় একেবারে ফ্রি। সার্জারির পর বিনামূল্যে কেবিন দেয়া হয় যাতে করে সার্জারি করা শিশু বা রোগীর কোনো ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত না হয়। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারির পর রোগীকে অডিও থেরাপি দিতে হয়। অডিও থেরাপির জন্য পর্যাপ্ত জনবল নেই। থেরাপির জন্যে পর্যাপ্ত জনবল পাওয়া গেলে বহুলাংশে এই কার্যক্রম এগিয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছর সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারির জন্যে সমাজ সেবা অধিদপ্তর পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক, সমাজ সেবা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী, সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত প্রমুখ। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ওসমানী হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কৃষ্ণ কান্ত ভৌমিক ।