সিলেটসহ তিন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে বানভাসীরা, বেড়েছে ভোগান্তি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুন ২০২৪, ৪:৪২:১৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে নদ-নদীর পানি কমতে থাকলেও বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণের সংকট বিরাজ করছে। একই সাথে বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে নলকূপ। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের মধ্যে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজারের বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতেও একই দৃশ্য। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা চলছে। জেলা প্রশাসকগণ বলছেন, সরকার প্রয়োজনমত বরাদ্দ দিচ্ছে। তবে বানভাসীদের দাবি যা দেয়া হচ্ছে-তা একেবারেই অপ্রতুল। দৈনিক সিলেটের ডাক এর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন বিস্তারিত।
সিলেট: সিলেটে নদ-নদীর পানি ক্রমশ কমছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে অনেক নিচু এলাকাগুলোর সড়ক ও বাসাবাড়ি থেকে পুরোপুরি পানি নামেনি। অন্যদিকে জেলার প্রধান দুটি নদীর চারটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপরে অবস্থান করছে। লোকালয় থেকে পানি কমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বসতবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে বাসিন্দারা। জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ হিসেব মতে নগরীর ও জেলার সবকটা উপজেলায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো ২২ হাজার বন্যার্ত অবস্থান করছেন। এরমধ্যে যারা বাড়ি ফিরে গেছেন তাদের ভোগান্তির যেন অন্ত নেই্।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার। সুরমার পানি সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার নিচে নেমে গেছে। তবে বেড়েছে কুশিয়ারার পানি। বিকেল ৩টায় কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার, সন্ধ্যা ৬টায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ সেন্টিমিটারে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০১ সেন্টিমিটার এবং শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, নগরীর ১৩টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৩টি উপজেলার ২২ হাজার ৬২৩ জন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। জেলায় ৭২০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৩৬২টিতে বন্যাদুর্গতরা অবস্থান করছে। এছাড়া নগর ও জেলায় বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ ৭৮ হাজার।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ. মো. সজীব হোসাইন জানান, গত শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শনিবার তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। আবহাওয়া ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর অনেক এলাকার পানি কমতে শুরু করলেও এখনো অনেক বাড়িঘরে পানি আছে। মূল সড়ক থেকে পানি নামলেও পাড়া-মহল্লার গলিতে পানি দেখা গেছে। শেখঘাট কলাপাড়া এলাকায় এখনো পাড়ার রাস্তায় পানি রয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেও এখনো মানুষের ভিড়। সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের ঘোপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফাতেমা বেগম জানান, সুরমা নদী ঘেঁষা গ্রাম ঘোপাল। পানি বাড়লেই তাদের ঘরে পানি ঢুকে যায়। এবার একটু বেশি ক্ষতি করেছে। ভিটা ভেসে উঠলেও ঘরে থাকার মতো না। যার জন্য তারা এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন।
অন্যদিকে, গ্রামীণ এলাকাগুলো এখনো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পানি নেমে যায়নি এসব সড়ক থেকে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। জেলার সিলেট সদর, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে বন্যা দেখা দেয়।
সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানীঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা ঘুরে দেখা যায়, বাসাবাড়িতে হাঁটু সমান পানি। এসব এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রিজার্ভ ট্যাংকে নর্দমার পানি প্রবেশ করায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানি কমার সাথে সাথে দুর্ভোগও বাড়ছে বাসিন্দাদের। অনেক জায়গায় বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। রান্না বান্নায়ও কষ্ট হচ্ছে বন্যার্তদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যেসব ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে তা খুবই অপ্রতুল। বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে এলাকাগুলোতে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দেড় হাজার বন্যার্ত ১৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। সেখানেও ত্রাণের সংকট রয়েছে। এরমধ্যে অনেকে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। গবাদি পশুর খাবার নিয়েও বিপাকে রয়েছেন আশ্রিতরা।
আনোয়ারা বেগম নামের এক নারী বলেন, এখানে আসার পর এক প্রকার অসহায় দিন কাটাচ্ছি। খিচুড়ি নিয়ে আসলো। আমরা বললাম আমাদেরকে দেওয়ার জন্য, তখন তারা বলে তোমাদের নাম নেই। তাই আমরাও পেলাম না। অবশ্য শুক্রবার আমরা খিচুড়ি পেয়েছি। সাথে ছোট বাচ্চা ও গবাদিপশু রয়েছে। তাদেরও কোনো খাবার নেই।
রফিকুল ইসলাম নামে এক আশ্রিত জানান, আমার গরু রয়েছে ৬ টা। এগুলোরও পর্যাপ্ত খাবার নেই। সড়কে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করাচ্ছি। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে খাবার পর্যাপ্ত না।
একই উপজেলার তেলিখাল উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, অনেক পরিবারই উঠেছেন এই আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানে থাকা তেলিখালের রামাইলের সেলিম উদ্দিন ও সমছিয়া বেগম নামে দুজনের সাথে কথা হয়। তারা জানান, সাথে শিশু আছে। নিজেরাই ঠিকমতো খেতে পারছেন না, আর শিশুরা খাবে কি।
গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর কলেজে কথা হয় আলমগীর মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, একবেলা কেউ খিচুড়ি দেয়, মাঝে মাঝে কেউ মুড়ি চিড়া নিয়ে আসে। তা খেয়ে জীবন ধারণ করছি।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, বৃষ্টি কমে আসা এবং ভারত থেকে নতুন করে পাহাড়ি ঢল না নামায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির পথে। আবহাওয়া এরকম থাকলে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, যথেষ্ট সরকারি বরাদ্দ এসেছে। আমরা শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছি। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গ্রামীণ পর্যায়ে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, বন্যা পরবর্তী চিকিৎসা নিশ্চিত করনে মেডিকেল টিমও বন্যা কবলিত এলাকায় কাজ করছে। জেলা প্রশাসক আরো জানান, শুক্রবার থেকে কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় ঘণ্টায় ৬শ’ লিটার উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়েছে। যেখান থেকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জ থেকে শহীদনূর আহমেদ জানান, সুনামগঞ্জ শহরতলী ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট থেকে ধীরে ধীরে বানের পানি সরে যাচ্ছে । অনেকেই ঘরবাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। পানি সরে যাওয়ায় বন্যার্ত মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখা দিলেও ক্ষয়ক্ষতি ভেসে উঠায় বেড়েছে দুর্ভোগ। বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট।
জেলার হাওর এলাকায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও স্বস্তি নেই পানিবন্দী মানুষজন। বন্যার স্রোত ও হাওরের ঢেউয়ে বসতভিটার ব্যাপক ক্ষতি সাধান হওয়ায় অনেকেই বাড়ি ফিরতে পারেননি। আশ্রয় কেন্দ্রে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে বিপুল সংখ্যক পরিবার। আশ্রয় কেন্দ্র ও বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
এদিকে, যেসব এলাকায় পানি নেমে গেছে-সেসব এলাকায় পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে । পঁচা পানি ও দুর্গন্ধ যুক্ত আবর্জনায় পরিবেশে দূষিত করে রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে। দ্রুতই বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
পাউবো জানিয়েছে, উজানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা থেকে নেমে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি শহরের নবীনগর পয়েন্টে ৭.৬৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার।
অপরদিকে বন্যার পানিতে জেলার ১২ উপজেলার গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেতু,কালভার্ট, পাকাসড়ক, মাটির সড়কসহ ১০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার কৃষি ও মৎস্য খাতে। বানের পানিতে আউশধান তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে গ্রীষ্মকালীন সবজি। জেলায় ১৫০০ হেক্টর আউশধান ও ৫০০ হেক্টর সবজির ক্ষতি হওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম।
বানের জলে জেলার ১২ উপজেলায় ৮ হাজার পুকুরের মাছ ও পোনা মাছ ভেসেগেছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য অধিদপ্তর। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যা টাকার অঙ্কে শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামসুল করিম।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, এখন ত্রাণের কাজ চলমান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে সরকার।
মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা হোসাইন আহমদ জানান, মৌলভীবাজারে নদীতে পানি কমলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন নি¤œাঞ্চলের মানুষ। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বন্যার্তদের সংখ্যা বেড়েছে। তবে বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলার ২০৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তি, রাজনীতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন।
জেলায় মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুও খাদ্য সংকটে রয়েছে। এবারের ঈদুল আযহায় নায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেক খামার গরু বিক্রি করতে পারেননি। আবার অনেক কৃষকের ঘরেও গরু রয়েছে। এসব গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ।
গতকাল শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ৪৯টি ইউনিয়নের ৬৩ হাজার ২৫০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। ২০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ হাজার ৪শ ৯৫ জন বর্তমানে অবস্থান করছেন।
জেলার রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওর তীরের গ্রামগুলোর পানিবন্দি মানুষরা আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও সেখানে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার পাওয়া যায়নি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এরই মধ্যে পর্যাপ্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
ভোগান্তিতে পড়া সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের সালেক মিয়া বলেন, দুদিন ধরে ছেলে অসুস্থ, তাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। বছর বছর বন্যার এমন ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না।
বড়লেখা উপজেলার তালিমপুরের পানিবন্দি সালেহ উদ্দিন বলেন, অনেক কষ্টে আছি। চারদিকে পানি। জুড়ী উপজেলার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মারুফা আক্তার বলেন, ভেবেছিলাম হয়তো কষ্ট কিছু কম হবে। কিন্তু এখানে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
বড়লেখার ইউএনও নাজরাতুন নাঈম জানান, বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। প্রাপ্ত ত্রাণ বন্টন চলছে। আরও ত্রাণের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার নাসরিন চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায় বলেন, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের সাধ্যমতো বানভাসী মানুষের পাশে থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। আমরা বিশ্বাস করি, সবার অবস্থান থেকে চেষ্টা করলে যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব।
পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, মৌলভীবাজারে গত দুই দিন ধরে বৃষ্টি কম হয়েছে। এছাড়া উজানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জেলার নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নদীর ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোতে বালু ভর্তি বস্তা ও মাটি দিয়ে ঝুঁকিমুক্ত রাখার কাজ চলমান রয়েছে।
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে রয়েছে। পানিবন্দি এলাকার মানুষেদের শুকনো খাবার ও চাল দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা দেখা দেয়। ৮ জুনের পর থেকে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। সর্বশেষ গত ১৭ জুন সোমবার থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টিতে ফের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জেও ডাইক ভেঙ্গে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে।