সার্বিক পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হচ্ছে না
দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে বন্যা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২৭:৫৩ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার: সিলেট অঞ্চলের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে। চলমান বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সুরমা কুশিয়ারার পানি কোথাও এক সেন্টিমিন্টার কমলেও অন্য পয়েন্টে বাড়ছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত সুরমা কুশিয়ারার সবকটা পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের উপজেলাগুলো থেকে পানি নামতে থাকায় ভাটির উপজেলাগুলোর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নদী ও হাওরগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি। সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও কমছে। অন্যদিকে সিলেটে গতকাল বুধবার পর্যন্ত সাড়ে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বৃষ্টিপাতও অব্যাহত ছিল।
জানা যায়, গত ২৯ মে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে প্রথম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ৮ জুনের পর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। বন্যার দ্বিতীয় ধাক্কা আসে ১৬ জুন। সেদিন আবার পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা বন্যার কবলে পড়ে। পরে নগর এলাকাসহ জেলার ১৩টি উপজেলায় বন্যা দেখা যায়। গত ১৯ জুন অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ওইসব উপজেলায় বন্যা বিস্তৃত হয়। এর মধ্যে ১৭ জুন থেকে সুনামগঞ্জ জেলায় ফের বন্যা দেখা দেয়। পরে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় তা বিস্তৃত হয়। এরপর ২৫ জুন থেকে সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হতে শুরু করার মধ্যেই সোমবার থেকে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বেড়ে আবার বন্যা পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করেছে।
সর্বশেষ বন্যার পানি প্লাবিত এলাকা পরিবর্তিত হলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হচ্ছে না। বরং আগে থেকে পানি নিমজ্জিত এলাকাগুলোতে মানুষের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ নেই কেবল সিলেট সদর,জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জে বন্যার পানি নামছে। ওসমানী নগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সদর,জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাড়া বাকীসব উপজেলায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৮ হাজার ৮২৮ জন মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বর্ষণের কারণে নদীগুলোতে পানি বেড়েছে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি বেশি হলে সিলেটে তার প্রভাব পড়ে। আমাদের দেশের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টার তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা মঙ্গলবার ছিল বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপরে। সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন বইছিল বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা মঙ্গলবার বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা মঙ্গলবার ছিল বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ওপরে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন বইছিল বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন ছিল বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপরে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ শাহ মো: সজিব হোসাইন জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ২৫ মিলিমিটার। গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি ৬টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের উপজেলাগুলো থেকে ঢলের পানি নামতে থাকায় ভাটির উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হচ্ছে না। তিনি জানান, ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
গোয়াইনঘাট থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা ৩য় দফা বন্যা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দি রয়েছেন।
উপজেলার পূর্ব জাফলং, পূর্ব আলীরগাঁও, পশ্চিম আলীরগাঁও, মধ্যে জাফলং, পশ্চিম জাফলং, সদর,রস্তমপুর, বিছনাকান্দি, তোয়াকুল, লেঙ্গুড়া, ডৌবাড়ী, নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন সম্পন্ন তলিয়ে গেছে, ফতেহপুর ইউনিয়নের আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সারী-গোয়াইন ও গোয়াইন-সালুটিকর সড়কসহ সবগুলো সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুল ইসলাম জানান, নদ-নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ৫৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে ৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৮১ জন নারী,পুরুষ ও শিশু এবং ২৯টি গবাদিপশু অবস্থান নিয়েছে। ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
কানাইঘাট (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা তীব্র পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের ফলে তৃতীয় দফায় কানাইঘাট পয়েন্ট দিয়ে সুরমা নদীর পানি ১১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কানাইঘাট সুরমা ও লোভা নদীর পানি গত সোমবার তীব্র গতিতে বাড়তে থাকে। গতকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বন্যার পানি বাড়তে থাকলেও সকালে পানি কিছুটা কমতে দেখা গেছে। কিন্তু,গত দু’দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা ডাইকের অন্তত ১৮টি ভাঙন দিয়ে এখনও তীব্র গতিতে সুরমা ও লোভা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রত্যন্ত জনপদ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কানাইঘাট-দরবস্ত সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।
জকিগঞ্জ (সিলেট)থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ভারতের বরাক নদী দিয়ে আসা পাহাড়ী ঢলে জকিগঞ্জের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে ডাইক ভেঙে এক মাসের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার ছবড়িয়া, রারাই, বাখরশাল, পৌর এলাকার নরসিংহপুরসহ কয়েকটি এলাকায় ডাইক ভেঙে ও ডাইক উপচে নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে প্রায় ৮৫টি গ্রামের লাখো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সময় সময় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে জকিগঞ্জ পৌর এলাকার একটি অংশসহ উপজেলার পাচঁটি ইউপিতে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। পরপর তিনবার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে উপজেলার নি¤œাঞ্চলের লোকজনের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌছেঁছে। বন্যাকবলিত এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ গোরস্থানসহ গ্রামীণ রাস্তাঘাট এবং শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কের একটি অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। চলমান পরিস্থিতিতে রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, পানিবাহিত রোগবালাই ও গবাদিপশুর খাবার সংকটে চরম দুর্ভোগে বানভাসীরা।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসলিম জানান, এখন পর্যন্ত উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। পাচঁটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে রয়েছে প্রশাসন। জুন মাসের ৩০ তারিখে প্রতিটি ইউপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওই বরাদ্দ এখন বিতরণ করা হবে। নতুন করে চাহিদা পাঠানো হবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি জানান: সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিরি উন্নতি হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে বন্যার পানি জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নামতে শুরু করেছে। অবশ্য সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল এখনও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন। এছাড়া সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবান নগর ও রঙ্গারচর ইউনিয়নের জেলা সদরের সঙ্গে সংযোগ সড়ক কয়েকটি জায়গায় বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কর্মজীবী মানুষ ও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের। বারবার বন্যায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলাগুলোর গ্রামীণ সড়ক।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ছিল এ বছরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এ অঞ্চলে মঙ্গলবার বিকাল থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় গতকাল বুধবার নদীর পানি কমেছে। বৃষ্টিপাতও কমেছে।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, জেলার ১২টি উপজেলায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩১ জন বন্যা কবলিত। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ১ হাজার ৮৩৭ জন।
মৌলভীবাজার থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান:
এদিকে, মৌলভীবাজারের জুড়ী, কুলাউড়া ও বড়লেখায় আগে থেকে পানিবন্দী থাকা মানুষ নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করায় মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চলেও পানি বেড়েছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার হামরকোনা গ্রামে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
অপরদিকে, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে হাকালুকি হাওর এলাকায়। অন্যান্য এলাকায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে হাকালুকি হাওর তীরবর্তী গ্রামগুলো। চলমান পরিস্থিতিতে খাবার, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন ও গবাদিপশুর খাবার সংকটের পাশাপাশি পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে চরম দুর্ভোগে আছেন বানভাসীরা।
হাকালুকি হাওরের পানি ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় কুলাউড়া উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তর ও আবাসিক এলাকা থেকে পানি নামছে না। গত ১৬ দিন ধরে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, গত দুদিনের ভারি বৃষ্টিতে উজানের পানি নামতে থাকায় নদ-নদীর পানি বাড়ছে। কুশিয়ারা, মনু ও জুড়ী নদীর পানি প্রতিটি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল।
হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি পাড় উপচে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক, ইনাতগঞ্জ ও মোস্তফাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বন্যার পানি আরও বেড়েছে।
জেলার বানিয়াচং উপজেলার মার্কুলি ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে এই দুই উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকা পানি নিমজ্জিত হয়। এছাড়া, মাধবপুর ও লাখাই উপজেলার নিম্নাঞ্চলও বন্যায় প্লাবিত রয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৭টি উপজেলার আংশিক এলাকায় বন্যাকবলিত ২ হাজার ৩১৩ জন এবং আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে ৭৯২ জন।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোছা. জিলুফা সুলতানা বলেন, জেলার বন্যা পরিস্থিতি আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। কুশিয়ারা ও খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।