হেতিমগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ সড়কের বেহাল দশা, জনদুর্ভোগ চরমে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৭:৪০ অপরাহ্ন

ইউনুছ চৌধুরী :
পিচ খোয়া উঠে গিয়ে পুরোটাই বড় বড় গর্তে ক্ষতবিক্ষত, গর্তে আটকা পড়ছে গাড়ি, স্থানে স্থানে ধসে পড়ছে পার্শের মাটি, এমন কোন অংশ নেই যেখানে সড়কটি ভালো আছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়েছে যে সড়কটি যেন নিজেই এখন সংস্কারের জন্য অসহায় হয়ে কান্না করছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ হেতিমগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ সড়ক (দেওয়ান সড়ক) নিয়ে এমন মন্তব্য স্থানীয়দের। সীমাহীন দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ সড়কটি সংস্কারে দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসলেও কোন কাজ হচ্ছে না। নিত্যদিনের দুর্ভোগ-যন্ত্রণায় মানুষ চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানান তারা।
তবে সিলেট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম ফারুক হোসেন জানান, ‘দেওয়ানের পুল’ বাদে পুরো সড়কের কাজের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব দেয়া আছে। প্রস্তাব পাশ হলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া সড়কের হেতিমগঞ্জ থেকে কোনাচর পর্যন্ত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অংশে কাজ চলছে। বৃষ্টির কারণে বন্ধ আছে। তবে সড়কে যাতে পানি না জমতে পারে সে জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেবেন বলে জানান তিনি।
গোলাপগঞ্জ উপজেলাসহ বিয়ানীবাজার, বড়লেখাসহ আশপাশের উপজেলার মানুষের সিলেট শহরের সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হেতিমগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ সড়ক। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় দাবি জানাতে থাকলে ২০২২ সালে সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এসময় ঐতিহাসিক ‘দেওয়ানের পুল’ ভেঙে ফেলাকে কেন্দ্র করে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কোন কাজ না হওয়ায় পুরো সড়কটিই গর্ত ও খানা-খন্দের সমাহারে পরিণত হয়। ফলে ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ-রোগী, গ্রামবাসীসহ স্থানীদের যাতায়াতে সীমাহীন ভোগান্তি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সড়কের মছকাপুর অংশের পাশেই অবস্থিত উপজেলার অন্যতম বিদ্যাপীঠ আতহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষাথীদের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে জানান শিক্ষক-অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। সড়কের হেতিমগঞ্জ থেকে কোনাচর অংশে কিছুদিন পূর্বে কাজ শুরু হয়ে আবারো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানিতে সড়কের গর্তগুলো এখন ছোট পুকুরে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন এসব গর্তে গাড়ি আটকা পড়ছে। অনেক সময় উল্টে গিয়ে ছিটতে পড়ে আহত হচ্ছেন শিক্ষার্থী, নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষ। সড়কটি দিয়ে পাঁয়ে চলাচলই দুষ্কর হয়ে উঠেছে বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
আতহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য মো. বদরুল আলম মোহন জানান, সড়কটি দিয়ে স্বাভাবিক যান চলাচল অনেকদিন থেকেই প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে হাজারো শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। কিন্তু সড়কের বেহাল দশার কারণে পায়ে হেঁটে স্কুলে আসা-যাওয়া করতেই শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ঘুরো পথে অথবা দুর্ভোগ নিয়েই পরীক্ষার হলে যাচ্ছেন।
সড়কটি দ্রুত সংস্কারের জন্য আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের সামনে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে বলে জানান তিনি। হেতিমগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নিমাদল গ্রামের জগলুল হোসেন জানান, মানুষের ভোগান্তি বলে বুঝানো যাবে না। সড়কটি দুর্ভোগের পাশাপাশি এখন আতঙ্কেরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন পূর্বে তিনি নিজেই মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কের গর্তের পানিতে আটকা পড়েছিলেন। ‘টাকা বেশি দিলেও এই পথে কোন সিএনজি অটোরিক্সা বা রিক্সা যেতে চায় না। ফলে কোন প্রয়োজনে গাড়ি পাওয়া না গেলে হেঁটে যাতায়াত করাও প্রায় অসম্ভব বলে জানান হেতিমগঞ্জের ব্যবসায়ী পলিতাফর গ্রামের মর্তুজা আহমদ মামুন। ঢাকাদক্ষিণ এলাকার বিশিষ্ট মুরুব্বি সমাজসেবক আক্তার হোসেন লাল বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এখন একটি পরিত্যক্ত সড়কে পরিণত হয়েছে। সড়কটি পাকা হওয়ার পর এতো নাজুক অবস্থা কখনো দেখিনি। মানুষের সাথে সড়কটিও যেন সংস্কারের জন্য কান্না করছে।’