কোটা আন্দালন
সিলেটে ১০ মামলা, আসামি সাড়ে ১৬ হাজার, গ্রেপ্তার ১০৭
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৫:২৫ অপরাহ্ন

অনলাইন ডেস্ক : দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সিলেটে সহিংসতার ঘটনায় ১০টি মামলা হয়েছে। এ মামলায় ১৬ হাজার আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১০৭ জন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষ, সরকারি কাজে বাধা ও ডাকঘরে হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে।
এ ছাড়া পুলিশবক্স ভাঙচুর, কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জালালাবাদ থানায় চারটি এবং দক্ষিণসুরমা থানায় একটি মামলা হয়েছে।
এসব মামলায় ২৪৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৬ হাজার ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা নয়, বরং পুলিশ সহযোগিতা করেছে। তবে যখন পুলিশবক্সে আগুন, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে তখন পুলিশ অ্যাকশনে গেছে। যারা পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার কোটা আন্দোলন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব দাবি করেন, “কোটা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ৫৯ জনকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে চালান করেছে জালালাবাদ থানা পুলিশ।”
“গত বৃহস্পতিবার ৩৮ জন ও শুক্র ও শনিবার ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ সিলেটের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং আখালিয়া এলাকার কিছু স্থানীয় জনতা রয়েছেন।”
গালিব বলেন, “তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। অন্য শিক্ষার্থীদের ছাড়া হয়নি; কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “আমরা জেনেছি, জালালাবাদ থানায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি রাজনৈতিক মামলা; আর অন্য দুটিতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করা স্থানীয় জনতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
কোটা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা ভাঙচুর ও হামলার সঙ্গে জড়িত নন দাবি করে গালিব বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের অন্তত ৫০০ কর্মী অস্ত্র নিয়ে আখালিয়া এলাকায় হামলা-ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালিয়েছে। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেসেও হামলা, ভাঙচুর চালায়।”
বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার আন্দোলনে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতাসহ ৫০০ জন আহত হন বলে দাবি করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার বিষয়ে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “হামলা-ভাঙচুরের সময় কে কোথায় ছিল না ছিল সেটা বলতে পরব না। তবে ১০ পুলিশ সদস্য আহত; পুলিশের প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আহতরা বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নগরীর কদমতলীতে এক পুলিশকে মারধর ও অস্ত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্রটি উদ্ধারে অভিযান চলছে।”
বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার সিলেট নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আখালিয়া ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দফায়-দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘটনায় পুলিশ ও সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন।
শুক্রবার দুপুরের পর কয়েক দফা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নগরীর বন্দরবাজার এলাকা।
জালালাবাদ থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র শুক্রবার রাতে সিলেট নগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় হামলার চেষ্টা হয়। পরে পুলিশ তাদের প্রতিহত করে।”
তিনি বলেন, “এতে পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তেমুখী, টুকেরবাজার ও কুমারগাঁও এলাকার বিএনপি-জামায়াতের লোকজন সরকারবিরোধী মিছিল ও বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে থানার দিকে এগিয়ে যান। এ সময় তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তখন পুলিশ টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের প্রতিহত করে।
সিলেটে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক নিহত :
বৃহস্পতিবার বিকালে আখালিয়া এলাকায় ধাওয়া খেয়ে খালের পড়ে মারা যান শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুদ্র সেন।
অন্যদিকে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর নগরীর বন্দরবাজারে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে স্থানীয় সাংবাদিক এটিএম তুরাব নিহত হন।
এদিন, সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে নগরীর সোবাহানীঘাট এলাকায় ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. মাসুদ গণি জানান।
নিহত তুরাব দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার সিলেট প্রতিনিধি ও সিলেটের স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন।
তুরাবের বড় ভাই জাবুর আহমদ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, পুলিশের গুলিতে তুরাবেব মৃত্যু হয়েছে। তিনি এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে ভাই হত্যার বিচার চান।
মঙ্গলবার সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার জাকির হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, “নিহত সাংবাদিক তুরাবেব মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত চলছে।”
সিটি কপোরেশনের ক্ষতি ৫ কোটির ওপরে :
মঙ্গলবার সকালে সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেটের আখালিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আম্বরখানা থেকে তেমুখী সড়কের সড়ক বিভাজকগুলো ভাঙা। মাঝখানে সৌন্দর্যবধনের জন্য লাগানো গাছ ও রেলিং ভেঙে ফেলা হয়েছে। বন্দরবাজার এলাকার ধোপাদিঘীরপাড়েও ভাঙচুর হয়েছে।
আখালিয়া এলাকার স্থানীয় একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি এ সড়কের পাশেই। ফলে ছাত্রদের আন্দোলনের সময় অনেকে লোহার গ্রিল দিয়ে বানানো সড়ক বিভাজক ভেঙে নিয়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
তাদের ধারণা, আশপাশের এলাকার ভাঙারি দোকানেই এসব লোহার গ্রিল বিক্রি করা হয়েছে। আর দোকান মালিকরা ট্রাকে সেগুলো অন্য স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, “কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর হয়েছে। নগরীর বন্দরবাজার থেকে ধোপাদিঘীরপাড় ও মদিনা মাকের্ট থেকে তেমুখী সড়কে লোহা দিয়ে বানানো ডিভাইডার, রেলিং ও সৌন্দর্যবধনে লাগানো গাছের ক্ষতি করা হয়েছে। এছাড়াও সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার ১০টি ট্রাক, ২০০টি ডাস্টবিন ও বিদ্যুতের খুঁটি ভাঙচুর হয়েছে। এতে সিটি করপোরেশেনের ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’’
তিনি আরও বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব করেনি; কিছু সুযোগ সন্ধানী লোক করেছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। আর অফিস চালু হওয়ার পর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’’
এদিকে, সিলেট জেলায় চলমান কারফিউ মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শিথিল ছিল। এ সময় নগরবাসী বাসা-বাড়ি থেকে বের হয়ে হাট-বাজার করেছেন।
সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে নগরের কুমারগাঁও, শাবি গেইট, আখালিয়া, মদিনা মাকের্ট, পাঠানটুলা, সুবিদবাজার, বিকাবীবাজার, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজার এলাকায় দেখা গেছে, রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশায় মানুষজন চলাচল করছেন। দোকানপাট খুলেছেন নগরীর ব্যবসায়ীরা। তবে নগরীর প্রধান-প্রধান সড়কে অন্যদিনের তুলনায় দোকানপাট কম খোলা ছিল। রাস্তা-ঘাটে যানবাহন কম থাকায় নগরে নেই যানজটও। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও সড়কে টহলে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরাও।
৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শিথিল কারফিউ :
দেশব্যাপী চলমান কারফিউয়ের পঞ্চম দিনে বুধবার সিলেটে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শিথিল ছিল।
-সিলেটের ডাক, ফায়যুর রাহমান