সারাদেশে নির্বিচারে গণহত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি
সিলেটে নাগরিক সমাজের উদ্যোগে ‘গানমিছিল’-সমাবেশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ আগস্ট ২০২৪, ৬:০৫:৩১ অপরাহ্ন

ডাক ডেস্ক ॥ সিলেটে নাগরিক সমাজের উদ্যোগে গতকাল বুধবার আয়োজিত গানমিছিলে বক্তারা সারাদেশে নির্বিচারে গণহত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। পুলিশকে ছাত্রসমাজের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও তাদের অভিযোগ।
‘সরকারি বাহিনীর নির্বিচারে’ হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে এ ‘গানমিছিল’-এর আয়োজন করা হয়। বেলা চারটায় নগরীর চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে গানমিছিল শুরু হয়ে নগরীর জিন্দাবাবাজার সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সম্মুখে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সিলেট জেলা বারের সভাপতি ই ইউ শহীদুল ইসলাম শাহীন রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবু সাঈদ ও সিলেটে সাংবাদিক এটিএম তুরাব নিহত হয়েছে, অথচ এ দুটি ঘটনায় পুলিশ নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছে। পুলিশের আইজি সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘটনার জন্য বিরোধী দলকে দায়ী করছেন। পুলিশকে দিয়ে মিথ্যাচার করানো হচ্ছে-এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ অবস্থায় পুলিশ এসব মামলা তদন্ত করলে কোন নিরক্ষেপতা থাকবে না।
ডিবি হেফাজতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে বেআইনিভাবে আটকে রাখার সমালোচনা করে তিনি বলেন, সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদে কাউকে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা হেফাজতে আটকে রাখার বিধান আছে। কিন্তু, ৬ সমন্বয়ককে ৪/৫ দিন ধরে আটকে রেখে তাদেরকে দিয়ে মিথ্যা বিবৃতি দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্র ও সরকারের প্ররোচণায় সংবিধানকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে-এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, নাগরিক সমাজ আজ বিবেকের তাড়নায় রাস্তায় নেমে এসেছে।
এডভোকেট এমাদ উল্যাহ শাহীন আরো বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো সাধারণ মানুষের উপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়নি। আজকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, কোটা বিরোধী আন্দোলনের জন্য হেলিকপ্টার, সাজোয়া যান থেকে গুলি করা হয়। পুলিশ মিছিলের সামন পিছন থেকে গুলি করেছে। পত্র-পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, ২১১ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ৪৫ শতাংশই শিক্ষার্থী। বয়সের হিসাবে শতকারা ৭৫ ভাগ অল্প বয়সী। এই যে নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়েছে আমরা মনে করি-এটা রাষ্ট্রীয় গণহত্যা। এই গণহত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত আমরা চাই।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই গানমিছিলের আয়োজক ছিল সিলেটের নাট্যসংগঠন নগরনাট, নাগরিক সংগঠন দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন। বেলা চারটায় এই গান মিছিলের আয়োজক নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য অরূপ বাউলের কণ্ঠে ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা কারো দানে পাওয়া নয়’-গান দিয়ে শুরু হয় গানমিছিল। এতে অংশগ্রহণ করেন সিলেটের নাট্য, সাংস্কৃতিক কর্মী ছাড়াও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মিছিলের অগ্রভাগে সিলেটের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নেতৃত্ব দেন।
গানমিছিলে স্বাগত বক্তব্যে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র বিক্ষোভ দমনের নামে দেশে স্মরণকালের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে। যা আমাদের মানবিক চেতনাকে ক্ষুব্ধ করেছে। সরকারের ব্যর্থতা, উষ্কানি ও নৃশংসতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র প্রত্যক্ষ করে সারাদেশের মানুষের মতো আমরা স্তম্ভিত, ব্যথিত ও সংক্ষুব্ধ। মানুষ হিসেবে বিবেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সেই তাড়না থেকে এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করতে পথে নেমেছি।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের সভাপতি ডা. শাহজামান চৌধুরী বাহার, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় সভাপতি সৈয়দা শিরিন আক্তার, অধ্যাপক ডা: শামীমুর রহমান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড: দিলারা রহমান, রাজনৈতিক সংগঠক এডভোকেট আনসার খান, উজ্জ্বল রায় ও রেজাউল কিবরিয়া, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাবেক সভাপতি মনির হেলাল, দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা-র সমন্বয়ক দেবাশীষ দেবু আইনজীবী অরূপ শ্যাম বাপ্পি ও জাকিয়া জালাল, নাট্যকর্মী, নাহিদ পারভেজ ও বাপ্পী ত্রিবেদী, সংস্কৃতিকর্মী রাজীব রাসেল ও দেবজ্যোতি দেবু, স্থপতি প্রসেনজিৎ রুদ্র, আয়কর উপদেষ্টা মুখলেছুর রহমান, যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিউর রাফু, সাবেক ছাত্রনেতা খালেদ মুরশিদ মুন্না, কিবরিয়া চৌধুরী সুমন ও শহীদুজ্জামান পাপলু, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আবাসিক কর্মকর্তা রোমেনা বেগম রোজী, শিশু কিশোর সংগঠন উষা’র পরিচালক নিগাত সাদিয়া।
দেশে চলমান এই হত্যা, অবিচারের প্রতিবাদে এই গানমিছিলে গান পরিবেশন করেন নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য উজ্জ্বল চক্রবর্তী, সদস্য আঁখি, স্বর্ণা, তন্বী, শাওন, রাজন, দেবর্ষি , রাজ, রাজ্যেশ্বরী, তিন্নিসহ সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মীরা। ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে এসে শেষ হয় গানমিছিল। গানের মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রতিবাদী শ্লোগানও দেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।