ধোপাজানে ঠেকানো যাচ্ছে না বালু লুট
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৭:২৯:০৪ অপরাহ্ন
শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ থেকে: সুনামগঞ্জের ইজারাবিহীন ধোপাজান বালুমহালে দিনেদুপুরে হচ্ছে বালু লুট। প্রকাশ্যে ধোপাজান চলতি নদীতে বাল্কহেড ও বিভিন্ন প্রকারের নৌযান প্রবেশ করিয়ে ড্রেজারের সাহায্যে বালু উত্তোলন করছে একাধিক সিন্ডিকেট চক্র। নদীর প্রবেশমুখে বেড়া দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না বালু লুটের এই অবৈধ কর্মকান্ড। বালু লুট বন্ধে প্রশাসন হার্ডলাইনে থাকলেও নেতিবাচক কাজে পুলিশের আশকারা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
তাছাড়া, একাধিক নদীপথে বালু ব্যবসার আড়ালে নামে বেনামে আদায় হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। অবৈধ এ পথে একটি সংঘবদ্ধ চক্র যেমন রাতারাতি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে, তেমনি সরকারি খনিজ সম্পদ লুটের কারণে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। বালু লুট ঠেকাতে ধোপাজান বালু মহাল সরকারি খাস কালেকশনের আওতায় নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ব্যবসায়িমহল ও সচেতন নাগরিকরা।
জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে জেলার ইজারাবিহীন ধোপাজান বালু মহালে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বালু উত্তোলন ও উত্তোলনকৃত বালু লুট করছে একাধিক বালুখেকো চক্র। বালু লুট বন্ধে পরিপত্র জারি করে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। নিষেধাজ্ঞার পর কয়েকদিন বালু লুট বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি ফের সক্রিয় হয়ে পড়ে বালুখেকো চক্র। বালু লুট ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় গত শুক্রবার ধোপাজান চলতি নদীর মোহনায় বাঁশ দিয়ে বেড়া দেয় সদর উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু বেড়া দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দায়িত্বশীল পুলিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বেড়া ভেঙ্গে নৌকা প্রবেশ করিয়ে বালু লুট করতে থাকে সিন্ডিকেট চক্র। গত শুক্রবার রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে ৭ বালুভর্তি নৌকা জব্ধ করা হয়। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ অভিযানের মাধ্যমে ১৩ শ্রমিককে এক মাসের কারাদ- প্রদান করেন যৌথবাহিনীর টাস্কফোর্স কমিটি। বালু উত্তোলন ও লুট ঠেকাতে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। বালু ব্যবসায়িদের কাছ থেকে নৌকা প্রতি বিভিন্ন অংকের টাকা গ্রহণ করার অভিযোগ পাওয়া যায় চেক পোস্টে দায়িত্বে থাকা কিছু পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।
গত রোববার ভোর রাতে ধোপাজান চলতি নদীর মোহনায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু ভর্তি শতাধিক স্টিলবডি, বাল্কহেডসহ বিভিন্ন প্রকারের নৌকা বের হয়ে আসছে। এসব নৌকা সুরমা নদীতে এসে বড় বড় বডিতে লোড করে ফের বালু আনতে যাচ্ছে উজানের ধোপাজান ডলুরা এলাকায়। বালু লুটের এই চিত্র হরহামেশা চলতে থাকলেও বাঁধা দিতে দেখা যাচ্ছে না কাউকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, পুলিশের সামনে শত শত নৌকা খালি ঢুকে নদী থেকে বালু ভর্তি করে ফিরে আসছে। এখানে ‘চোর পুলিশ’ খেলা চলছে। সরকারের কোটি কোটি টাকার বালু লুট হয়ে যাচ্ছে। অথচ কেউ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রশাসন যতই কঠোর হোক এটি বন্ধ করা যাবে না। একদিকে অভিযান হয় আরেকদিকে নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন হয়। এই হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির চেয়ে ডিসি যদি নদী খাস কালেকশন দিতো তাহলে সরকারও কিছু টাকা পেতো। আর নদীর এই অরাজকতা বন্ধ হতো।
নদীর শৃঙ্খলার ব্যাপারে ডিবি’র ওসি বলেন, দিনরাত নদীতে পড়ে থাকতে হয়। জনবল সংকটের কারণে আমাদের সকল দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও বালু লুট বন্ধে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, বালু লুট ঠেকাতে নদীতে বেড়া দেয়া হয়েছে। বেড়া ভেঙ্গে নদীতে গিয়ে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। নৌকা জব্দ করছি , জড়িতদের কারাদ- দিচ্ছি। বালু লুট বন্ধে প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।