নগরজুড়ে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত, পাঁচ বছর ধরে নিধন কার্যক্রম বন্ধ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২:৪৮:০৮ অপরাহ্ন
আহমাদ সেলিম :
নগরজুড়ে পাঁচবছর ধরে বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে কুকুরের উৎপাত কমার কোনো লক্ষণ নেই, বরং বাড়ছেই। এ অবস্থায় সিটি কর্পোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নাগরিক এই সমস্যার জন্য সিটি কর্পোরেশন বলছে, আগের চেয়ে ভ্যাক্সিন নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে গড়ে প্রতিমাসে ১২শ’ ডোজ ভ্যাক্সিন যাচ্ছে। কিন্তু কুকুর নিধন না করার জন্য উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমাদের কার্যক্রমও বন্ধ রাখা হয়েছে।
একদিকে কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সিলেট নগরজুড়ে উৎকন্ঠা বেড়েছে। সড়কগুলোর মোড়, অলিতে গলিতে, প্রতিটি পাড়ায় দল বেঁধে চলাচল করছে বেওয়ারিশ কুকুর। প্রতিদিন শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়েসি মানুষ কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
বিশেষ করে রাতের বেলা কুকুরের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। রাত বাড়ার সাথে সড়ক ফাঁকা হলেই তারা পথচারীদের আক্রমণ করে। পথচারী ছাড়াও চলন্ত রিকসা, সিএনজি অটোরিকসা, মোটরসাইকেলের যাত্রীদেরও সুযোগ বুঝে ধাওয়া দিচ্ছে।
হাসপাতালেও বাড়ছে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা। বেওয়ারিশ এসব কুকুর নিয়ন্ত্রণে কোনো সরকারি বা এলাকাভিত্তিক উদ্যোগও নেই। এ নিয়ে জনমনে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
জল্লারপাড়, তালতলা, মির্জাজাঙ্গাল, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, শীতের শুরু থেকেই তাঁদের এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের আনাগোনা বেড়েছে। কুকুর দেখলেই অনেকে নিরাপদ স্থানে চলে যায়। আবার শিশুরা না বুঝে দৌড় দিলেই আক্রমণ করে ফেলে। এ কারণে শিশুদের মধ্যে ভীতি বাড়ছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, বিষয়টি সিটি কর্পোরেশন, প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নগরজুড়ে কুকুরের পাল বেপরোয়া। তাদের দৌরাত্ম্য সব এলাকাজুড়ে-এমনটা বলছেন ওসমানী হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসক মো. মুমিনুল হক।
নগরীর কাজিটুলা এলাকা থেকে জুয়েল মিয়া বলেন, কুকুরের ভয়ে ফজরের নামাজে যেতে ভয় হয়। কারণ এ সময় নিরিবিলি থাকে। লোহারপাড়া এলাকার সজল দেব বলেন, কুকুরের ভয়ে সকালে হাটার অভ্যাস বন্ধ করে দিয়েছি।
শিবগঞ্জ লাকড়িপাড়ার বাসিন্দা রাজন আহমদ সহ কয়েকজন এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, কুকুরের ভয়ে বাসার গেইট বন্ধ রাখতে হয়। চলার পথেও তেড়ে আসার একটা ভীতি কাজ করে।
নগরীর ভেতর কুকুরবৃদ্ধি কিংবা কুকুরভীতি বাড়লেও আইনের কাছে নিজেদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কুকুর নিধন না করার জন্য উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ জন্য কুকুর নিধন করা যাচ্ছে না। বেওয়ারিশ কুকুর শনাক্ত করে সেগুলোকে প্রতিষেধক দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘কুকুর নিধনের জন্য আমাদের একটা সেকশন ছিলো। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকায় ২০১৭ সালে থেকে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে কুকুরের কামড়ে আহত ব্যক্তিদের প্রতিষেধক (ভ্যাক্সিন) নেয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিমাসে ১২শ’ ডোজ পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পূর্বে ডোজ নেয়ার সংখ্যা অনেক কম ছিলো। তবে সামনের দিকে আগের মতো ভ্যাক্সিন পাওয়ার অনিশ্চয়তাও রয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ এর সাথে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। তবে নাগরিক সুরক্ষার প্রয়োজনে আমরা সিটি কর্পোরেশনের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো। প্রজণনক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়ার বিষয়ে আলাপ করবো।’
কুকুরের আক্রমণের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা উপজেলা পর্যায়েও বেড়েছে। গতমাসে পাগলা কুকুরের কামড়ে নারী শিশুসহ অন্তত অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন হবিগঞ্জে। শহরের গার্নিংপার্ক, কোর্ট মসজিদ ও জেলা প্রশাসনের কার্যলয়ের নিমতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এছাড়াও প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে কুকুরের কামড়ে আহত হবার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ
২০১২ সালে উচ্চ আদালত নির্বিচার কুকুর নিধনকে অমানবিক উল্লেখ করে তা বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে কুকুরকে বন্ধ্যা (প্রজণনক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া) করে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। আর ২০১৯ সালের প্রাণিকল্যাণ আইনের সপ্তম ধারা অনুযায়ী, মালিকবিহীন কোনো প্রাণীকে নিধন বা অপসারণ করা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়।