দিরাই-শাল্লার জলমহালে জনতার পলো বাইছ মামলা, গ্রেফতার ৮
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মার্চ ২০২৫, ৫:২৬:২১ অপরাহ্ন

দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : দিরাই-শাল্লার জেলে, জনতা মিলে বিলে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে অজ্ঞাতনামা ২ হাজার লোককে আসামি করে দিরাই থানায় মামলা করার পর ৮ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।
জানা গেছে, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার বড় ৯টি বিলে হাজারো সংঘবদ্ধ জনতা ও জেলেরা মিলে পলো বাওয়া উৎসবের নামে দিনব্যাপী মাছ ধরে নিয়ে গেছেন। সরকারের ইজারাকৃত এসব বিলে জনতার মাছ ধরাকে কেউ বলছেন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, কেউ বলছেন লুট। উপজেলার সাধারণ মানুষ ও জেলে সমাজের লোকদের সাথে আলাপকালে তারা সিলেটের ডাককে জানান, ‘জাল যার জলা তার’ এ নীতি গত ৫৩ বছরেও এদেশে কার্যকর হয়নি। বরাবরই জলে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন জেলেরা। তারা বলেন, বিল ইজারা হয় জেলেদের নিবন্ধিত সমবায় সমিতির নামে।
সমবায় সমিতি সরকার থেকে বিল পাওয়ার পর বিলের মালিক বনে যান, রাজনৈতিক নেতা কিংবা এলাকার প্রভাবশালীরা। তারা সামান্য টাকা সমবায় সমিতিকে দিয়ে বিলের মালিকানা বুঝে নেন।
সরেজমিন দিরাই ও শাল্লার সুশীল সমাজের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, সাধারণ মানুষকে জলমহালে মাছ ধরার অধিকার কেড়ে নিয়ে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতারা হাওরের বিল-জলমহাল ইজারা নেন। কাগজে কলমে মৎস্যজীবী সমিতির নাম থাকলেও বাস্তবে জলমহালের নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কাছেই থাকে। প্রকৃত জেলেরা সেখানে বড়জোর ‘শ্রমিক’ মাত্র। আওয়ামী লীগের লোকজন লাখ লাখ টাকার মাছ মারে আর গরিব জেলে ও সাধারণ মানুষ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে। বিগত ৫ আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাপে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির পর এখন বেশির ভাগ জলমহাল বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীর দখলে চলে গেছে। এসব জলমহাল নিয়ে অতীতে সংঘর্ষ, খুনোখুনিও বিরল নয়। দেখা যাচ্ছে, জেলা প্রশাসন কাঁচা পয়সার লোভে বা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের চাপে প্রবহমান নদীকেও জলমহাল ঘোষণা করে ইজারা দিয়ে থাকে।
যেমন, দিরাই উপজেলার প্রবাহিত কালনী, বেতইর নদীকে জলমহাল ঘোষণা করে বছরের পর বছর ইজারার নামে দখলদারিত্ব দেওয়া হয়েছে। যারা এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গেছেন, উল্টো প্রভাবশালী দখলদারদের হুমকি-ধামকি, এমনকি শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।
শাল্লার সচেতন নাগরিক আনিসুল হক মুন বলেন, এটা এক ধরনের মব, যেহেতু নদীগুলো সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে তাই এভাবে মাছ ধরা ঠিক হয়নি। আগে ইজারা প্রথা বাতিল করতে হবে পরে জলমহালগুলো উন্মুক্ত থাকলে সবাই মাছ ধরতে পারবে। তবে এর একটা অসুবিধাও আছে, যদি জলমহাল গুলো উন্মুক্ত থাকে তাহলে মাছের প্রজণন কমে যাবে। দিরাইয়ের সিরাজুল আমীন চৌধুরী বলেন, মাছ মারা তো দূরের কথা, বাধা পায় জলমহাল থেকে। অনেক সময় কৃষক মাছ মারতে নামলে জালসমূহ নিয়ে চালানো হয় নির্যাতন। এসব ক্ষোভ ধীরে ধীরে দানা বাঁধতে থাকে জেলেদের মনে। এর ফলেই ২৪ এর অভ্যুত্থানের পর জেলে কৃষক মিলে শুরু করে মাছ ধরা উৎসব। এ যেন এক ইজারাপ্রথার বিরুদ্ধে এক কড়া বার্তা। দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এসব ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে এবং ২ হাজার লোককে আসামি করে মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যহত আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সনজীব সরকার বলেন, ইজাদাররা জানিয়েছেন কিছু কুচক্রি মহল সাধারণ মানুষকে মোটিভেটেড করে জলমহালগুলোতে নিয়ে এসেছে। ভিডিও ফুটেজে যাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে এফআইয়ার দায়ের হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে।