চানখাঁরপুল গণহত্যার আসামি সিলেট থেকে পালিয়ে যাওয়া সেই এডিশনাল এসপি আখতারও
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ৯:৩৯:১৯ অপরাহ্ন

কাউসার চৌধুরী :
রাজধানী ঢাকার চানখাঁরপুলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের উপর রাইফেলের মতো মারণাস্ত্র দিয়ে সরাসরি গুলি করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)-এর রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলামসহ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পুলিশ সদস্যদের গুলি করার নির্দেশ দেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তদন্তে চানঁখারপুল গণহত্যার বিষয়ে এমন তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে সিলেট থেকে পালিয়ে যাওয়া এডিসি আখতারসহ ৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে ওই গণহত্যার আসামি করে গত সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয় ।
জুলাই গণহত্যায় এটি প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। ৮ আসামির অন্যতম এডিসি আখতার ইসলাম সিলেটের ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কর্মস্থল থেকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার পালিয়ে যান। এরপর থেকে এই পুলিশ কর্মকর্তার আর কোনো হদিস মিলছে না। এডিসি আখতার ইসলামের পালিয়ে যাবার ঘটনায় দৈনিক সিলেটের ডাক-এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ঘটনাটি জনসমক্ষে আসে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশে সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ও আখতারুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বাহিনীকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এসবের ভিডিও প্রমাণ রয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের সময় এসকল আসামি চানখাঁরপুল এলাকায় নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেন।
চানখাঁরপুল এলাকায় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিককে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এডিশনাল এসপি শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম সর্বশেষ গত ২৬ জানুয়ারি রোববার পর্যন্ত তার কর্মস্থল ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার সিলেটে কর্মরত ছিলেন। এর পরদিন ২৭ জানুয়ারি সোমবার তিনি আর কর্মস্থলে যাননি। সেই থেকে অদ্যাবধি তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তার পালিয়ে যাবার বেশ কয়েক দিন পরে বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তরে অবগত করা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। নগরের রিকাবীবাজারের সিলেট জেলা পুলিশ লাইন্সের অভ্যন্তরে ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, সিলেট-এ।
সূত্র বলছে, কারও অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থল থেকে চলে যান আখতার। সিলেটে যে কতদিন কর্মরত ছিলেন এর পুরো সময় তাকে টেনশনে থাকতে দেখা গেছে । মূলতঃ চানখাঁরপুল গণহত্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করতেই তিনি কর্মস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ২ সেপ্টেম্বর তাকে ডিএমপি থেকে ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার সিলেটে বদলি করা হয়। এরপর চুপিসারে তিনি সিলেটে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন। সিলেটে প্রায় ৫ মাস কোনোমতে অতিবাহিত করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যান।
এডিসি আখতার মূলতঃ আলোচিত কিলার ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে ডিবিতে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রংপুর সিটি কর্পোরেশনের একাধিকবারের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফিজের মেয়ের জামাই।