ছাতকের মানিকপুরে লিচুর সমারোহ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মে ২০২৫, ১০:০৪:২০ অপরাহ্ন

ছাতক (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : ছোট-বড় টিলাবেষ্টিত মানিকপুর এলাকায় লিচু বাগানের গাছে-গাছে এখন ঝুলছে মৌসুমী রসালো ফল লিচু। লিচু বিক্রি করে আয়ের মুখ দেখছেন চাষীরা। তারা জানান, ফলন কম হলেও চলতি মৌসুমে লিচুর দাম ভালো আছে।
ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামটি লিচুর গ্রাম নামে পরিচিতি লাভ করেছে ইতোমধ্যে। এ গ্রামে কয়েক যুগ আগ থেকে লিচু চাষ করা হতো। গ্রামের মসজিদসহ সকলের বাড়িতে ছিলো ২/৪ টি লিচুর গাছ। প্রায় ২০/ ২২ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে গ্রামে লিচুর চাষ শুরু করা হয়। লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। ফলে এ অঞ্চলে লিচু চাষের অনেক বিস্তৃতি ঘটেছে।
মানিকপুর থেকে এখন গোদাবাড়ি, বড়গল্লা, চানপুর রাজারগাঁও এবং দোয়ারাবাজারের লামা সানিয়া গ্রাম পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ঘটেছে। এ অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামে এখন বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ হয়। ছাতকের লিচু আকারে ছোট হলেও সুস্বাদু। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাট-বাজারে মানিকপুরের লিচু বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। তবে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এই লিচুর চাহিদা ব্যাপক। এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচু ছাতক- দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ শহরে বিক্রি হয়। সিলেট শহরেও বর্তমানে এ অঞ্চলের লিচুর চাহিদা রয়েছে এবং বিক্রি হচ্ছে।
গত কয়েক দিন ধরে ছাতক-দোয়ারাবাজারের বিভিন্ন হাটে এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচুর বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিদিন চৌমুহনী বাজারে বিক্রি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার লিচু। চৌমুহনী বাজারে সকাল ৬ টায় লিচুর হাট বসে, চলে ৮ টা পর্যন্ত। দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা সকালে চৌমুহনী বাজার থেকে পাইকারিভাবে লিচু কিনে নিয়ে অন্যান্য বাজারে বিক্রি করেন। চলতি মৌসুমে ১০০টি বড় আকারের লিচু ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং কিছুটা ছোট আকারের ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ কর্মকর্তা (অবঃ) মোহাম্মদ আবদুল হামিদ গোদাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও একজন লিচু চাষী। তিনি জানান, লিচু চাষীদের সবসময়
পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নিজের লিচু বাগান ছাড়াও অন্যান্য চাষীদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেন তিনি। মানিকপুর গ্রামের লিচু চাষী রুস্তম আলী, শুকুর আলী, জামাল মিয়া, গোদাবাড়ী গ্রামের আবদুল কাদির, আবদুল মমিন, রাজারগাঁও গ্রামের আবদুল মানিক চাঁনপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়া, রিপন মিয়া নিলয় আহমদ ও লামাসানিয়া গ্রামের হেলাল উদ্দিন জানান, গ্রামের শতাধিক লিচু চাষী পরিবার এখন স্বাবলম্বী। লিচুর বাজারমূল্য সব সময়ই ভালো থাকে। চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন আশানুরূপ হয়নি। খরার কারণে লিচুর মুকুল ঝরে পড়ায় ফলন অনেকটা কম হয়েছে। ছাতক-সিলেট রেলপথ বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত লিচু কম খরচে পাঠাতেও পারছেন না।
ছাতক শহর থেকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে ৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে মানিকপুর। পাশেই বড়গল্লা, রাজারগাঁও, চানপুর গোদাবাড়ি ও দোয়ারাবাজারের লামাসানিয়া গ্রাম। এসব গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুর গাছ। বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করেছেন এলাকার শতাধিক পরিবার। বর্তমান সময়ে এই এলাকার লিচু বাগানগুলোতে দেশীয় জাতের পাকা রসালো ফল লিচুর ছড়া গাছে-গাছে ঝুলছে। লিচু বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থীদের ভিড়ও কম নয়। এই সময়ে প্রতিদিনই বাগানে আসছেন দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা।
লিচু চাষী মানিকপুর গ্রামের শওকত আলী, রুহান আহমেদ জানান, চারা রোপণের তিন বছরের মধ্যে লিচু ধরা শুরু হয়। একটি বড় লিচু গাছের লিচু বিক্রি করে বছরে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হয়। লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন-দিন এর পরিধি বেড়েই চলছে।
স্থানীয়রা জানান, গত ক’বছর ধরে উপজেলা কৃষি বিভাগও লিচু চাষে লোকজনকে উৎসাহী করছে এবং বিদেশি লিচুর চারা চাষীদের মাঝে বিতরণসহ বিভিন্ন সরকারি সহযোগিতা করা হচ্ছে বাগানীদের।
ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিক হোসেন খাঁন জানান, কৃষি বিভাগ থেকে লিচু চাষীদের সবসময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অনেককে লিচু চাষে উদ্যোগী করা হয়েছে। তাদের সরকারি সহযোগিতাও দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে খরার কারণে। তবে চাষীরা পাচ্ছেন ভালো বাজারমূল্য। টিলাবেষ্টিত এ অঞ্চল লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে লিচুর বাগান করতে আগ্রহীদের সরকারি সব সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।