এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণকাণ্ড কলেজ শিক্ষার্থীর সাক্ষ্যগ্রহণ, সাক্ষী দিতে আসেননি বাদী ও ভিকটিম গৃহবধূ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ মে ২০২৫, ৯:৪২:১৭ অপরাহ্ন

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মামলায় বাদী মাইদুল ইসলাম ও ভিকটিম গৃহবধূ আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি।
গতকাল মঙ্গলবার সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হƒদয় পারভেজ নামের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতের স্পেশাল পিপি এ্যাডভোকেট মো. আবুল হোসেন সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার মামলার ধার্য্য তারিখে বাদী ও ভিকটিম সাক্ষী দিতে আসেননি। পারভেজ নামের একজন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক স্বপন কুমার দাসের আদালতে গতকাল ধার্য্য তারিখে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এমসি কলেজের শিক্ষার্থী হƒদয় পারভেজ সাক্ষ্য দেন। মামলার আসামীদের উপস্থিতিতে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মামলার বাদী ও ভিকটিমকে গতকাল আদালতে সাক্ষ্য দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে বার বার যোগাযোগ করা হয়। প্রথমে তারা আদালতে আসবেন বলে আশ্বস্ত করলেও শেষ পর্যন্ত না এসে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় প্রার্থনার আবেদন করেন। আগামী ধার্য্য তারিখে তারা দু’জন সাক্ষ্য দিতে হাজির হবেন। আদালত তাদের আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিকে, গত ৬ মে এই আদালতে মামলার প্রথম ধার্য্য তারিখে আসামীপক্ষের আইনজীবী শাহ মোশাহিদ আলী আসামিদের জামিন আবেদন করলে আদালত আবেদনটি নামঞ্জুর করেন।
এর আগে উচ্চ আদালতের আদেশে বহুল আলোচিত মামলা দুটোর নথিপত্র এই আদালতে পাঠানো হয়।
গণধর্ষণের ঘটনায় সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার তাহিদ মিয়ার পুত্র সাইফুর রহমান (২৮), হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ জাহাঙ্গির মিয়ার পুত্র শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের মৃত রফিকুল ইসলামের পুত্র তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), জকিগঞ্জের আটগ্রামের মৃত অমলেন্দু লস্কর ওরফে কানু লস্করের পুত্র অর্জুন লস্কর (২৬), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের দেলোয়ার হোসেনের পুত্র রবিউল ইসলাম (২৫), কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) সালিক আহমদের পুত্র মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), সিলেট নগরীর গোলাপবাগ আবাসিক এলাকার (বাসা নং-৭৬) মৃত সোনা মিয়ার পুত্র আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল (২৬) ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নটেশ্বর গ্রামের মৃত ফয়জুল ইসলামের পুত্র মিজবাউল ইসলাম রাজনকে (২৭) অভিযুক্ত করে ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর দন্ডবিধি আইনের৩৪২/৩২৩/৩৭৯/৩৮৫/৩৪ ধারা তৎসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী, ২০০৩)-এর /৭/৯/(৩)৩০ ধারায় অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে পুলিশ। এতে ৫২ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। ঘটনার মাত্র ২ মাস ৮ দিন পর ১৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেয়া হয়।
এদিকে, ছাত্রাবাস থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সাইফুর রহমান ও শাহ মাহবুবুর রহমান রনিকে আসামী করে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯/১৯-এ ধারায় অভিযোগপত্রটি জমা দেয়া হয়। ঘটনার ১ মাস ২৭ দিন পর অস্ত্র মামলার অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের ২৪ বছর বয়সী এক যুবক তার ১৯ বছর বয়সী নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে প্রাইভেটকারযোগে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরতে যান। এর আগে শাহপরান (রহঃ) মাজারও ঘুরে আসেন তারা। সন্ধ্যার পরে এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে তারা থামেন। ওই সময় কয়েক যুবক ওই স্বামী ও তার স্ত্রীকে ঘিরে ধরে। এক পর্যায়ে প্রাইভেটকারসহ তাদেরকে জোরপূর্বক জিম্মি করে কলেজের ছাত্রাবাসের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। এরপর স্বামীকে আটকে রেখে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের ৫ম তলা বিল্ডিং এর সামনে প্রাইভেটকারের মধ্যেই গৃহবধূকে জোরপূর্বক গণধর্ষণ করে। তারা দম্পতির সাথে থাকা টাকা, স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আটকে রাখে তাদের প্রাইভেট কারও। ছাত্রাবাস থেকে টিলাগড় পয়েন্টে এসে যুবকটি পুলিশে ফোন দেন। পুলিশ আসতে বেশ সময়ক্ষেপণ করার সুযোগ পেয়ে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ নির্যাতিতাকে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করে। ওই রাতেই নির্যাতিতার স্বামী মাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩-৪ জনকে আসামী করে শাহপরান থানায় মামলা করেন। শাহপরান থানার মামলা নং- ২১। তারিখ-২৬/০৯/২০২১। দেশের অন্যতম পুরনো বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রেক্ষিতে সরকার ধর্ষণের সাজার আইনের পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ডের ঘোষণা দেয়। ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করে জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল ২০২০ পাশ হয়। এ ঘটনায় এমসি কলেজের ছাত্র সাইফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল হাসানকে কলেজ কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও এই ৪ জনের ছাত্রত্ব এবং সার্টিফিকেটও বাতিল করে।