শ্রীমঙ্গলের আনারসের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মে ২০২৫, ১:৩২:২২ অপরাহ্ন

আ,ফ,ম আব্দুল হাই,শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে ॥ চায়ের রাজধানী বলে খ্যাত পর্যটন নগরী চারিদিকে সবুজে ঘেরা পাহাড়ী এলাকায় আনারস, লেবু, কাঁঠাল বাগানের শহর শ্রীমঙ্গল। চায়ের পাশাপাশি এখানকার আনারস ও লেবুর খ্যাতি রয়েছে দেশ-বিদেশে । লেবু ও আনারস বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সরকার গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ মধুপুরের আনারসকে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি হিসেবে সনদ দেয়।
দেশের চাহিদা পূরণে সবচেয়ে বেশি আনারস, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফল উৎপন্ন হয় শ্রীমঙ্গলে। এখানকার আনারস দেশজুড়ে সুপ্রসিদ্ধ-যা স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। এই ঋতুতে বাজারজুড়ে অন্য ফলের সাথে শ্রীমঙ্গলের আনারসও আধিপত্য বিস্তার করছে।
শ্রীমঙ্গলে পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলায় ষাটের দশক থেকে আনারস চাষ শুরু হয়। এখানকার উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু আনারস চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এখানে বারো মাস আনারসের চাষ করা হয়। নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সারা বছরই দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয় শ্রীমঙ্গলের আনারস। আনারস একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর রসালো ফল। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলও বটে। সিলেট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপকভাবে আনারস চাষ হয়। তবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত আনারসের খ্যাতি রয়েছে দেশ-বিদেশে।
এখানে দিগন্তজোড়া সবুজ চা বাগান আর পাহাড় এরই মধ্যে রয়েছে আনারস বাগান। চায়ের রাজ্যে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে আনারসের সারি সারি বাগান। এই আনারসের গাছগুলো নিচ থেকে টিলার উপরে এমনভাবে গিয়ে উঠেছে যে দূর থেকে মনে হয়; যেন একদল পিপীলিকা ডানা মেলে সারি বেঁধে উপরে উঠছে।
মে থেকে জুন পর্যন্ত আনারসের ভরা মৌসুম। এ বছর মৌলভীবাজার জেলার প্রায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলে হানিকুইন ও জাইনকিউ নামের আনারসের উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিদিন ভোর হতে না হতেই শত শত ঠেলা, জিপ ও পিকআপে করে নিয়ে আসা হয় শ্রীমঙ্গলের আড়ৎগুলোতে।
এই উপজেলার বিষামণি, মাইজদিহি, হোসেনাবাদ, এমআর খান, নন্দরানী, বালিশিরা, নূরজাহান, ডলুছড়া, সাতগাঁও, মোহাজেরাবাদসহ প্রতিটি এলাকা থেকে প্রচুর আনারস আসে বাজারে। বাজারে আসা ঠেলাগাড়ি গুলোর সামনের দিক মাটিতে মুখ দিয়ে তার পিঠে রাখা আনারসকে ডিসপ্লের মতো করে সাজিয়ে রাখা হয়। যেন দূর-দূরান্ত থেকে ছোট-বড় আড়ৎদার ও পাইকারি-খুচরা ক্রেতারা এগুলো দেখে সহজে আকৃষ্ট হন। আর এখান থেকেই আনারস যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গাড়ি অনুপাতে একেকটা ঠেলাগাড়িতে একশ’ পঞ্চাশ থেকে ৫০০ পিস আনারস সুন্দর করে ডিসপ্লে করে রাখা হয়। সে গুলো সাইজ অনুযায়ি বিক্রি হয়ে থাকে।
এছাড়াও পার্শ্ববর্তী উপজেলা কমলগঞ্জ, চুনারুঘাট এমনকি বাহুবল থেকেও আনারস আসে শ্রীমঙ্গলের বাজারে। শ্রীমঙ্গল শহরের বাজারের ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন আড়ৎদার রয়েছেন। যাদের কাছে বাগান মালিকগণ তাদের আনারস বিক্রির জন্য দিয়ে থাকেন।
আশিক বাণিজ্যালয়ের আড়তদার মো: আশিকুর রহমান বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার আনারসের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আমরা ৬ মাস যাবৎ মৌসুমি এই সিজনের আনারস বিক্রি করছি, এবারের আনারসের স্বাদ-গন্ধ অনেক মজার এবং ক্রেতাদের চাহিদা অনেক হওয়াতে আমরা দামও ভালো পাচ্ছি।
মেসার্স মনজুর আলী আড়তদারের কর্মচারী মো. নছর উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আনারসের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু আনারস সংরক্ষণের অভাবে পঁচে যাচ্ছে। পোক্ত আনারস বেশিদিন বাগানে রাখা যায় না, বৃষ্টি হলে সেই আনারস বাগানেই পঁচে যায়। সে জন্য আনারস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি।
ক্রেতা সাধারণের কাছে শ্রীমঙ্গলের আনারস খুব সুস্বাদু। তাই পাশের উপজেলা কমলগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কিনতে আসছেন। এখানে প্রতি হালি (৪ পিস) আনারস ৫০-১২০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে ।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিসার (কৃষিবিদ) মো: আলাউদ্দিন গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আমরা কৃষি অফিস থেকে ২০ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে ২ হাজার ২৫০টি আনারসের চারা দিয়েছি। সকল চাষীকে কৃষি অফিস সবসময় ভালো পরামর্শ দিয়ে আসছে। তিনি বলেন, আনারসের পাশাপাশি লেবু নাগামরিচ ও বিভিন্ন ফলের চাষ হয় এ অঞ্চলে।
মৌলভীবাজার কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, বর্তমানে জেলায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এ বছর আমাদের এলাকায় প্রচন্ড খরা হয়েছে, যার কারণে হানিকুইন জাতের আনারসগুলো একবারে ছোট হয়ে গেছে। কিন্তু, বিক্রি করার জন্য পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জুলডুগি আনারস বলে বিক্রি করছে। আমাদের এলাকায় এই আনারস চাষ হয় না। কিন্তু, বিক্রেতারা এই নাম বলে বিক্রি করছেন। শ্রীমঙ্গলে প্রচুর পরিমাণে আনারস ও লেবু উৎপাদন হওয়ার কারণে এসব পণ্যের সংরক্ষণাগার ও প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত।