সালুটিকর-গোয়াইনঘাট রাস্তার সংস্কার কাজ শেষ হবে কবে?
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২৫, ১২:৩৫:২৭ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সালুটিকর-গোয়াইনঘাট রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে ঢিমেতালে। ভাঙ্গা সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের। অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তার কাজ করাচ্ছে সাব কন্টাক্ট দিয়ে। ফলে কাজ হচ্ছে দায়সারা গোছের। কাজের নিম্নমান আর দীর্ঘসূত্রতায় জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় স্থানীয় লোকজন রাস্তাটির সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে রাজপথে সোচ্চার হচ্ছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশেষায়িত ইউনিট আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের মহাপরিচালক ও গোয়াইনঘাটের নোয়াগ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুর রকিব অভিযোগ করে বলেন, সালুটিকর-গোয়াইনঘাট এবং বঙ্গবীর-হাদারপার রাস্তায় কি-আমাদের সারা জীবনের দুর্ভোগ রয়ে যাবে? আমাদের শৈশব কৈশোর কেটেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পায়ে হেঁটে, কাদা পানি মাড়ি দিয়ে, কখনো বা সাঁতার কেটে। দেশ-দুনিয়া অনেক এগিয়ে গেছে। অথচ আমাদের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। আগে দুর্ঘটনার ভয় এতো বেশি ছিল না। এখন এই রাস্তায় প্রতিমুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। এ অঞ্চলের লাখো মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির বেহাল দশা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে, বিছানাকান্দি পর্যটন কেন্দ্র কে মৃতপ্রায় করে ফেলেছে। এ নিয়ে কারো কোনো দায় নেই।
তাঁর অভিযোগ, রাস্তাটি সংস্কারের কাজ ঢিমেতালে চলছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাব-কন্টাক্ট দিয়ে কাজ করাচ্ছে। সাব-কনট্রাক্টর ও দায়সারার মতো কাজ করছে। কাজের নিম্নমান আর দীর্ঘসূত্রিতা জনদুর্ভোগ বাড়িয়েই চলছে। এ কাজ কতদিনে শেষ হবে আল্লাহ মালুম।
তিনি বলেন, রাস্তাটির নির্মাণ কাজের অনিয়ম ও ধীরগতির বিষয়টি নিয়ে অনেকবার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। এলজিইডি,সিলেট-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালককে সরেজমিন পরিদর্শনের অনুরোধ করা হয়। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে রাস্তার দূরবস্থার বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিষয়টি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনার ও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, আশার কথা হচ্ছে, ভুক্তভোগী জনগণ ও এবার সোচ্চার হচ্ছেন। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের দাবিতে আগামী শনিবার হতে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে এসব কর্মসূচি সফল হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা বলেন, রাস্তাটিকে শিগগিরই চলাচলের উপযোগী করা না হলে এই বর্ষাকালে দুর্ঘটনার আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারই এ জন্য দায়ী থাকবেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরীর অভিযোগ, রাস্তাটির স্কীমও যথাযথভাবে প্রণয়ন করা হয়নি। স্কীমের দুর্বলতার কারণে রাস্তার মাঝে মাঝে কিছু অংশ রেখে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। রাস্তাটি দিয়ে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এ অবস্থায় লোকজনের দুর্ভোগের সীমানা থাকছে না।
যোগাযোগ করা হলে গোয়াইনঘাটের উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাসিব জানান, প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে রাস্তার ১০ কি:মি: সংস্কার কাজ চলছে। প্রায় ৭/৮ মাস আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পান প্রকল্পের আওতায় এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। দিলওয়ার নামের বরিশালের এক ব্যক্তি হচ্ছে রাস্তার মূল ঠিকাদার। ফয়সল নামের স্থানীয় এক ব্যক্তিকে তিনি সাব ঠিকাদার নিয়োগ করে রাস্তার কাজ করাচ্ছেন।
ঠিকাদারের দুর্বলতার কারণে রাস্তার কাজ যথাযথভাবে হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ করতে চায় না। তাদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কাজটি করানো হচ্ছে। রি-টেন্ডার প্রক্রিয়া অনেক সময়সাপেক্ষ এজন্য প্রকল্পের কার্যাদেশ বাতিল করা হচ্ছে না। আগামী সপ্তাহ থেকে রাস্তার কাজ পুরোপুরি শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, শিগগিরই প্রকল্প পরিচালক রাস্তাটি পরিদর্শনে আসবেন।
দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভাঙা সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের। বিশেষ করে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। বেহাল সড়ক দিয়ে যাতায়াতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। চরম ভোগান্তি আর ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন এ এলাকার চালক ও যাত্রীরা।
খানাখন্দে ভরপুর এ সড়কটি যাত্রী ও চালকদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে পড়েছে। বর্ষাকাল শুরু হতেই সালুটিকর থেকে বঙ্গবীর এলাকা পর্যন্ত ধাপে ধাপে রয়েছে ছোট বড় গর্ত।
এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার মানুষ চলাফেরা সহ শতশত যানবাহন যাতায়াত করে। সড়কে বড় ধরনের গর্তের সৃষ্টি হয়ে বিগত তিন চার বছর ধরে মানুষকে চরম ভোগান্তি পেতে হচ্ছে। এবছর তিন দফা বন্যায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষজন পারাপারে একমাত্র ব্যবস্থা ছিল স্থানীয়দের উদ্যোগে খেয়া নৌকা।