বন্যার পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণে ব্যতিক্রমী মহড়া দেখল চামাউরাকান্দিবাসী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুন ২০২৫, ৯:১৫:৪৬ অপরাহ্ন

আনাস হাবিব কলিন্স :
‘আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে ঘোষণা হচ্ছে অতিবৃষ্টিতে বেড়েছে নদ-নদীর পানি। ধেয়ে আসছে আগাম বন্যা ও ভূমি ধস। এই বন্যা থেকে বাঁচতে লোকজনকে সরাতে হবে। ভয়েসকল ও এসএমএস’র মাধ্যমে এই খবর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সর্বত্র।
খবর পেয়েই জরুরি বৈঠকে বসেছে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। মানুষের জানমাল রক্ষায় করণীয় নির্ধারণ করেছে ওই কমিটি। লোকজনকে উদ্ধার করতে প্রস্তÍুত করা হয়েছে নৌকা ও উঁচু স্থানে কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র। বন্যার ক্ষতি থেকে ফসল রক্ষায় কৃষক তরিঘড়ি করে কেটে নিলেন ফসলি জমি। পুকুরের মাছ রক্ষায় চারদিকে দেয়া হল নেটের জাল দিয়ে বেড়া। টিউবওয়েলের হাতল খুলে নিয়ে ভাল করে বেঁধে দেয়া হল টিউবওয়েলের মুখ।
সব কিছু ছাপিয়ে একসময় বন্যার পানি উঠতে লাগল বাড়ি-ঘরে। ইউনিয়নের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি মসজিদ ও মন্দিরের মাইক থেকে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানাতে লাগল। সেই সাথে স্বেচ্ছাসেবীরা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে কাজ শুরু করেছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার আগে এফআইভিডিবি’র সুফল প্রকল্পের আওতাধীন তালিকাভুক্তরা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সংগ্রহ করলেন ক্যাশ টাকা। কিনে নিলেন ওযুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র’।
এমন মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কান্দিগাঁও ইউনিয়নের চামাউরাকান্দি মাঠে। আকস্মিক বন্যার আগাম সাড়াদান কার্যক্রম প্রটোকল-এর ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কিত এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। সুফল কনসোর্টিয়াম এর উদ্যোগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় আয়োজন করা হয় এই মহড়ার।
এদিকে, মহড়া দেখতে সকাল থেকে চামাউরাকান্দি এলাকার সর্বস্তরের নারী পুরুষ মাঠে এসে জড়ো হন। বিশাল সামিয়ানার নীচে বসে অবলোকন করেন এই মহড়া। আকস্মিক বন্যা সহনশীলতা বৃদ্ধিতে আয়োজিত মহড়ায় অংশ নিতে মাঠে স্থাপন করা হয় ১৫টি স্টল। যার মধ্যে বাড়ি ঘর, মসজিদ, মন্দির, বিকাশের দোকান, জরুরি ঔষধের দোকান, গবাদি পশু রাখার স্থানও ছিল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল প্রতীকি পুকুর ও ধান রোপণকৃত কৃষি জমি।
কান্দিগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল মনাফের সভাপতিত্বে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেয়ার বাংলাদেশ এর হিম্যানিটারিয়ান এন্ড রিজিলিয়েন্ট ফিউচারস প্রোগ্রামের পরিচালক কায়সার রেজভী বলেন, আকস্মিক বন্যার পূর্বপ্রস্তুতি একটি নতুন ধারণা। প্রচলিত পদ্ধতি থেকে ভিন্নতা হচ্ছে এখানে পূর্বাভাসের মাধ্যমে জনগণকে আগেই জানানো যায় যে বন্যা আসবে। সুতরাং কমিউনিটি তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। হাওর অঞ্চলের তিনটি জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায় সুফল কনসোর্টিয়াম ২০২৩ সাল থেকে এই পূর্বাভাসের ভিত্তিতে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে কমিউনিটিকে তৈরি করার জন্য কাজ করছে। এছাড়াও পূর্বাভাসভিত্তিক আগাম সাড়াদানের জন্য এই তিন জেলার মোট ২ হাজার ৩০৫ জন সুবিধাভোগীকে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জিএম জাহাঙ্গীর কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার আফসারি বেগম বলেন, এই মহড়া জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে এফআইভিডিবির সুফল প্রকল্পের ফোকাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স এন্ড ডিআরআর মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বৈশাখের শুরু থেকে ভাদ্রের শেষ পর্যন্ত সময়ে প্রায় প্রতি বছরই এই অঞ্চলে বন্যা হয়ে থাকে। আজকের এই মহড়া থেকে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে কিভাবে এই বন্যার পূর্বে প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। এতে আরো বক্তব্য রাখেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউসুফ আলী।
সভাপতির বক্তব্যে কান্দিগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল মনাফ বলেন, পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা এই আকস্মিক বন্যা এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় আতঙ্ক সৃষ্টিকারী দুর্যোগ। তিনি বলেন, এই মহড়া থেকে মানুষ একটি পরিষ্কার ধারণা পাবে যে কিভাবে বন্যার পূর্বেই তারা তাদের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম।