আলোকিত জীবনের স্বপ্নে তাহমিনার জীবনে নেমে এলো ঘোর অন্ধকার, মুক্তি দাবি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুন ২০২৫, ১২:৪১:৪৪ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাহমিনা আক্তার। হাজারো তরুণ-তরুণীর মতো আলোকিত জীবনের বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েছিল। জীবনের নতুন এক অধ্যায়, উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে তার জীবন যে ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে তা মোটেই অনুভব করতে পারেনি সে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার সিলেট সরকারি কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে।
২১ বছরে পা রাখা মেয়েটি এখনও দুনিয়া চেনেনি। মাকে হারিয়ে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া এই তরুণীর অভিভাবক বলতে একমাত্র বড় বোন। সিলেট সরকারি মদনমোহন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ২০২১-২২ শিক্ষাবছরে পড়তো তাহমিনা। মায়ের মৃত্যুর পর একাধিকবার পেনিক অ্যাটক হয়েছে। তাই, দুই বছর পরীক্ষা দিতে পারেনি। এবার শেষ সুযোগ কাজে লাগাতে গিয়েছিল। কিন্তু এই চেষ্টা যে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে তা কল্পনাতেও ছিল না।
বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিনে সিলেট সরকারি কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারে-তার এডমিট কার্ডটি সঠিক নয়। তাতেই তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। হাউমাউ কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়েটি। এখানেই শেষ নয়। এই ভুয়া প্রবেশপত্রের অপরাধ (অথচ, প্রবেশপত্রটি সে নিজে তৈরি করেনি) তরুণীর জীবনকে আইনিভাবে কলঙ্কের দাগ লাগিয়ে দিয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমাণ আদালত ডেকে তাকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে।
একটি মেয়ে। এখনও বিয়ে হয়নি। আমাদের সমাজে ছোট্ট কোনো অপরাধে মেয়েদের বাঁকা চোখে দেখা হয়। অথচ, মেয়েটি বিনা অপরাধে আজ দণ্ডিত। সামাজিকভাবে কতটা হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে-তা বলে বোঝানো মুশকিল।
যতটুকু জানা গেছে, মেয়েটির কাছ থেকে আন্ডারটেইকেন (লিখিত রেখে) তার পরিবারের কাছে তুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট আসার পর তাকে এক বছরের সাজা দেন। সাজার কথা শোনে মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে যায়। পুলিশ প্রশাসন কোনো উপায় না দেখে তাকে ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করে। একদিন পর তাকে কারাগারে নিয়ে গেলে আবার সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। জেল কর্তৃপক্ষ পুনরায় তাকে হাসপাতাল পাঠিয়েছেন।
তাহমিনার জীবন আজ আইনের কাছে অসহায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অনেকে মন্তব্য করছেন। তারা মেয়েটির বিষয়ে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি আশা করেন। সচেতন মহল, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মেয়েটির ভবিষ্যৎ জীবনের কথা বিবেচনা করে তাকে মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন।