শুকনো পায়ে নামাজে যেতে পারি না, মরার পর ড্রেন দিয়ে কী হবে : বৃদ্ধের আক্ষেপ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ৯:২৫:০০ অপরাহ্ন
দিরাই (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : আর কয়দিনই বা বাঁচব? বাঁচার আগে যদি ভালো রাস্তায় হেঁটে নামাজে যেতে না পারি, তাহলে মরার পরে ড্রেন হয়ে কী লাভ!”- এমন তীব্র আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মজলিশপুর গ্রামের ৯০ বছর বয়সী প্রবীণ নামাজি আব্দুল হামিদ সরদার।
সম্প্রতি মসজিদে এশার নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি তীব্র আক্ষেপ প্রকাশ করে কথাগুলো বলেন।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই মজলিশপুরের সরকারি পুকুরপাড় সংলগ্ন রাস্তায় জলাবদ্ধতার সমস্যা চলছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পচা পানি জমে যায়। স্থানীয়দের একাধিকবার আবেদন এবং পৌরকর পরিশোধ সত্ত্বেও সমস্যার সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
আব্দুল হামিদ বলেন, বছরের পর বছর ধরে কাউন্সিলর, মেয়র আর এখন পৌর প্রশাসককে বলেছি এই রাস্তায় একটা ড্রেন করে দিতে। সবাই শুধু আশ্বাস দেয়, কাজের কাজ কিছুই হয় না। অথচ পৌরকর পরিশোধ না করলে ছোটখাটো সেবাও মেলে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সরকারি পুকুরপাড় সংলগ্ন সড়কটিতে সামান্য বৃষ্টিতেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি জমে থাকে। এই পানি মাড়িয়ে প্রতিদিন মসজিদে যেতে হয় মুসল্লিদের। শুধু মুসল্লি নয়, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও একই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষা মৌসুমে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আব্দুছ ছাদিক জানান, গত বছরের নভেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধা সালাম মিয়ার বাড়ি থেকে তোফায়েল মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় ড্রেন নির্মাণের দাবিতে পৌর প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। কিন্তু এতদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পৌরসভা প্রতিষ্ঠার দুই দশক পার হলেও এই সড়কে কোনো ড্রেন নির্মাণ হয়নি। একসময় একটি পরিত্যক্ত জায়গা দিয়ে বৃষ্টির পানি বেরিয়ে যেত, কিন্তু সেটি মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়ায় এখন সামান্য বৃষ্টিতেই ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এলাকার বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও গর্ত থেকে নেমে আসা নোংরা পানি রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। ড্রেন না থাকায় ব্যবহৃত পানিও সঠিকভাবে নিষ্কাশন করা যায় না। অনেকে বাধ্য হয়ে ট্যাংকি বসিয়ে গোসলের পানি জমিয়ে রাখছেন, কিন্তু তা দ্রুত ভরে গিয়ে নতুন করে ভোগান্তির সৃষ্টি করছে।
আজাদ মিয়া, মো. আবুল খায়ের ও উজ্জ্বল মিয়া দাবি করে বলেন, “দ্রুত ড্রেন নির্মাণ করে এই দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান করা হোক, যাতে মানুষ অন্তত শুকনো পায়ে মসজিদে যেতে পারে এবং শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে।”
পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সূত্রধর বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি।




