উন্নয়নে ন্যায্য হিস্যার দাবিতে সিলেটে এক ঘণ্টার ‘শাটডাউন’
সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক সংস্কারে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম আরিফুল হকের
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ৫:০৪:৩১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংস্কারসহ উন্নয়নে সিলেটবাসীর ন্যায্য অধিকারের দাবি জানিয়ে নানা কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল রোববার এক ঘণ্টার প্রতীকী ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নগরের দোকানপাট বন্ধ রেখে চলে এই কর্মসূচি। নগরের কোর্ট পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় প্রতিবাদ সমাবেশ। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করেন আরিফুল হক চৌধুরী। সমাবেশ থেকে আগামী ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে সিলেটের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিদ্যমান সমস্যা সমাধান না করলে তীব্র আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সকালে নগর ঘুরে দেখা গেছে, নগরের বেশিরভাগ বিপনীবিতাণের ফটক বন্ধ। দোকানপাটেরও সাটার লাগানো। নগরে রিকশা ছাড়া অন্যান্য যান চলাচলও প্রায় বন্ধ ছিল। তবে ১২ টার পর থেকে দোকানপাট খুলতে শুরু করে। যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়।
সমাবেশে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘সড়কপথ, রেলপথ ও আকাশপথে সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম দূরবস্থা আজ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যানজট, রেলপথে বগি সংকট ও টিকিট কালোবাজারি, আর আকাশপথে বিমানের টিকিটমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি- সব মিলিয়ে সিলেটবাসী অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সিলেটবাসীর যাতায়াতের বিড়ম্বনা চরমে পৌঁছেছে। তাই উন্নয়ন চাই-স্বচ্ছ, টেকসই ও পরিকল্পিত যোগাযোগ ব্যবস্থা চাই।’’
তিনি আরো জানান, ‘‘রোববারের এক ঘণ্টার এই কর্মসূচি সিলেটবাসীর ঐক্য ও প্রতিবাদের প্রতীক। যদি সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিকার না আসে, তাহলে আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে আরিফুল হক চৌধুরীর বাসভবনে সুশীল সমাজ, শিক্ষক, পরিবহন ও ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে রোববারের এই প্রতীকী কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে আরো দাবি জানানো হয়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাজ দ্রুত শেষ করা, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন ও বগি সংযোজন এবং সিলেট-ঢাকা রুটে বিমানভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে আনার।
অপরদিকে এক ঘণ্টার প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে নগরীর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবিগুলো জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে দিয়েছি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো পূরণে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, তা জানাতে হবে। যদি ১৫ দিনের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে সিলেটের সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
স্মারকলিপি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে আমরা অবগত। গত ৫-৭ বছর যাবৎ যোগাযোগ খাতে তেমন কোনো কাজ হয়নি, এজন্য মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর বেহাল দশা। তবে আমি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি, কাজ শুরু হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ বিমানের সকালে-বিকালে ভাড়ার তারতম্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে শিগগির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসবো। পাশাপাশি সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দুর্ভোগ লাঘবে অন্তত একটি বিশেষ ট্রেন চালু করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।”
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আরিফুল হক চৌধুরী জানান, ‘ডিসি মহোদয় আমাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, আজই স্মারকলিপিটি সরকার প্রধানের কাছে পাঠাবেন। ইনশাআল্লাহ, শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’




