জালালাবাদ অফিসার্স এসোসিয়েশন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ সেমিনার
সিলেট বিভাগে স্কুলগামী ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৩:৩৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেট বিভাগে শতকরা ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। পাশাপাশি-ইংরেজি, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে।
গতকাল শনিবার সিলেটে আয়োজিত এক সেমিনার ও মতবিনিময়ে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।“সিলেট বিভাগের উন্নয়ন অগ্রাধিকার”-শীর্ষক ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে সিলেট বিভাগের বর্তমান শিক্ষা ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জালালাবাদ অফিসার্স এসোসিয়েশন ঢাকা ও সিলেট জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: সারওয়ার আলমের সভাপতিত্বে এতে সিলেট বিভাগের বাসিন্দা একজন রাষ্ট্রদূত, সরকারের তিনজন সচিব. দুইজন অতিরিক্ত সচিব, আয়কর গোয়েন্দা সেলের প্রধান ও তিনজন উপসচিবসহ সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক, সিলেটের শিক্ষা বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তা, সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা যোগ দেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে সদ্য অবসরে যাওয়া বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. সৈয়দ মাসুম আহমদ চৌধুরী বলেন, এ বিভাগে গড়ে স্কুলগামী ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়লেও সুনামগঞ্জে এ হার ৩৪.২৪ ভাগ। এছাড়া, সিলেটের শিক্ষাখাতের বিদ্যমান সমস্যাবলীর আলোকপাত করে তিনি বলেন, এ বিভাগের শতকরা ২০ ভাগ শিক্ষার্থী বন্যার সময় অচল হয়ে পড়ে। এ অঞ্চলে গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় এর প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেছে। সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ১৮৫। বেসরকারিতে আরো কম। হাওর ও চা বাগান এলাকার জনগণ অপেক্ষাকৃত দরিদ্র। নিম্নমাধ্যমিকে জাতীয় গড় উপস্থিতি ৫৮ পার্সেন্ট হলেও সিলেট অঞ্চলে এ হার ৫৪ %। এ অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং প্রশাসনিক তদারকিরও অভাব রয়েছে।
সেমিনারে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে মেক্সিকোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, যথাযথ সমন্বয়ের অভাবে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিলেট পিছিয়ে পড়ছে। বিমান ভাড়ার ক্ষেত্রে এক ধরণের অসংগতি তৈরী হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে সকল ক্ষেত্রে রয়েছে এক ধরণের কর্তব্যপরায়ণতা। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের উন্নয়নে সকলকে কাজ করতে হবে-এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, মেক্সিকোতে আমরা ১ মিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশী পণ্য সেল করার টার্গেট নিয়েছি। আশাকরি, আমরা এক্ষেত্রে সফল হবো।
সেমিনারে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জালালাবাদ অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু নাসের খান বলেন, এক সময় সারাদেশে সিলেটের পরিচিতি ছিল এডুকেশনাল ক্যাপিটাল হিসেবে। কিন্তু, বর্তমানে এ বিভাগে বুদ্ধিভিত্তিক নেতৃত্ব ক্ষীণ হয়ে আসছে। এ অবস্থা হতে উত্তরণে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কমিউনিকেশন ও এনালাইটিকেল স্কিলে আরো দক্ষ করে তুলতে হবে। এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে ইংলিশ এন্ড মেথ ইফিসিয়েন্সি টেস্ট (ইএমএফটি) এবং কিউবিসি(কোয়ালিফাইড বাংলাদেশী শেফ) ও কোয়ালিফাইড বাংলাদেশী টেকনিশিয়ান (কিউবিটি) চালু করা যেতে পারে। কারিগরি শিক্ষায় ২০৩০ সালের মধ্যে সিলেট অঞ্চলের এক লক্ষ তরুণকে আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে। এজন্য সিলেট হাইটেক পার্ককে কাজে লাগানো যেতে পারে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব আব্দুর রহমান তরফদার বলেন, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সিলেটের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। সিলেট অঞ্চলের লোকজন এখনই সচেতন না হলে আগামীতে সিভিল সার্ভিসে সিলেটের লোকজন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে।
আয়কর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আব্দুর রকিব অবিলম্বে সালুটিকর-বিছনাকান্দি সড়কের পুন:টেন্ডার আহ্বান এবং সীমান্ত নদী পিয়াইন-ধলাই নদী খননের ওপর জোর দেন।
উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম মেধা পাচার রোধে সিলেটের লোকজনকে সচেতন হবার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি সিলেটের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন-মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ বিভাগের সচিব আবু তাহের মো: জাবেদ, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব আব্দুর রহমান তরফদার, জাতীয় বেতন কমিশনের সচিব(অতিরিক্ত সচিব) ফরহাদ সিদ্দিক, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো: রেজাউন নবী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রেজাই রাফিন সরকার, আয়কর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আব্দুর রকিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম, সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, লিডিং ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. তাজ উদ্দিন, ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: জিয়াউর রহমান চৌধুরী, সিলেট কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সাংবাদিক কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুব এরশেদ, সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন, এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন, সিলেট রেলস্টেশনের ম্যানেজার নুরুল ইসলাম, জাতীয় ইমাম সমিতির মহানগর সভাপতি মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব ও ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন প্রমুখ।
সেমিনারে সিলেটের শিক্ষা ছাড়াও বিনিয়োগ, যোগাযোগ, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিবদমান সমস্যাবলীর চিত্র উঠে আসে। তারা বলেন, সিলেটে প্রাপ্ততা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। এ অবস্থা হতে উত্তরণে তারা বিভিন্নমুখী শিক্ষার সমন্বয়, চা-শ্রমিক ও হাওরাঞ্চলের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ, বাজারভিত্তিক চাহিদা অনুসারে শিল্প স্থাপন, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে অবকাঠামো ও দক্ষ জনবল সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দেন।
সভায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা, বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা, কোম্পানীগঞ্জের এম সাইফুর রহমান কলেজকে দ্রুত সরকারিকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ, সিলেট-কক্সবাজার ট্রেন সার্ভিস চালু এবং পর্যটন স্পটসমূহের আধুনিকায়নের ওপর জোর দেন বক্তারা।



