সিলেট রেলপথ
‘টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস’ চালু নিয়ে দুই বছর ধরে অন্ধকারে সিলেটবাসী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২০:১৮ অপরাহ্ন
নূর আহমদ :
সিলেট-ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে একজনের টিকিটে আরেকজন ট্রেনে ভ্রমণ করা যাবে না। ট্রেন ভ্রমণের সময় যাত্রীর এনআইডি কার্ড সাথে রাখতে হবে। তবে সিলেট জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট মনে করছেন না সিলেটের বিশিষ্টজনেরা। তাদের দাবি সিলেট-ঢাকা-সিলেট রুটে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস নামে নতুন একটি নন স্টপ ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিয়েও কোন কারণে শেষপর্যায়ে এসে থামিয়ে দেয়া হলো। এই রহস্য উদঘাটন প্রয়োজন। অন্যদিকে সড়ক পথে যাত্রী দুর্ভোগ বেড়ে যাওয়ায় ট্রেনের উপরে চাপ পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিলেট-ঢাকা রেলপথকে ডাবল করা, নতুন ট্রেন চালু ও রেলের মান উন্নয়নের দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছেন সিলেটবাসী।
জানা যায়, ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে একটি আন্তঃনগর বিরতিহীন ট্রেন চালুর ব্যাপারে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সিলেটবাসীর। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদেও দাবি উত্থাপিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের শেষের দিকে সরকার একটি বিশেষ ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছরেরই নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. তৌফিক ইমাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে চালুর জন্য নতুন বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেনের নাম টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ও অর্থনৈতিক কার্যাবলি বাড়ানোর লক্ষ্যে আন্তঃনগর ট্রেনের সময়সূচিও অনুমোদিত হয়েছে।’
মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্তের পর পরই ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম থেকে তিন হাজার সিরিজের নতুন মডেলের ইঞ্জিন সিলেটে নিয়ে আসা হয়। এরপর অত্যাধুনিক ওই ইঞ্জিন দিয়ে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার আজমপুর স্টেশন পর্যন্ত ট্রায়াল দেয়া হয়। কথা ছিল ট্রায়ালের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করবে রেলওয়ে। কিন্তু ট্রায়ালের পর প্রায় ২২ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে কিনা তা রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তা বলতে পারছেন না। বিষয়টি একেবারেই অন্ধকারে রয়েছে।
অপরদিকে, সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস চালুর ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলো সরকার। প্রাথমিকভাবে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেসের কোচ সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ১৮টি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কথা ছিল, ননস্টপ আন্তঃনগর ট্রেনটি যাত্রাপথে শুধু ঢাকা বিমানবন্দর ও শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে বিরতি করবে। ট্রেনটি সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে বেলা ৩টায় সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে। একইভাবে বিকাল ৫টায় সিলেট থেকে ছেড়ে রাত ১১টায় ঢাকায় পৌঁছবে। ট্রেনের মোট আসনসংখ্যা ৮২৪। ট্রেনটিতে দুটি খাবার গাড়ি, একটি পাওয়ার কার, তিনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঁচটি ও শোভন চেয়ার সাতটি কোচের সমন্বয়ে ১৮/৩৬ লোড দ্বারা গঠন করতে রেলওয়ের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের কোচগুলোর মধ্যে এগুলোই সবচেয়ে উন্নতমানের।
একটি সূত্র বলছে, সিলেট-ঢাকা রুটের জন্য অপেক্ষায় থাকা বিরতিহীন ওই ট্রেনটি এখন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে সিলেট-ঢাকা রুটের বিরতিহীন ট্রেন নিয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তারাও চুপ হয়ে গেছেন। কবে সেটি চালু হতে পারে এ বিষয়ে কেউই কিছু বলছেন না। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে পুনরায় আলোচনা চলছে। দাবি উঠেছে এই রুটে স্পেশাল ট্রেন চালু করার। কিন্তু, রহস্যজনক কারণে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস এর বিষয়ে এড়িয়ে চলছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে সিলেট-ঢাকা রেলপথকে ডাবল করা, নতুন ট্রেন চালুর দাবিতে সিলেট কল্যাণ সংস্থা, সিলেট বিভাগ যুব কল্যাণ সংস্থা ও সিলেট প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার যৌথভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনগুলোর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এহসানুল হক তাহের বলেন, আমরা নাগরিক সমাবেশ করেছি। রেললাইনে ১০ মিনিট শোয়া কর্মসূচি পালন করেছি। তিনি বলেন, ইঞ্জিন সংকট দেখিয়ে সিলেটবাসীকে বিশেষ ট্রেনসহ ট্রেনসেবা দেয়া থেকে বঞ্চিত রাখা হয়। তিনি প্রশ্ন করেন যদি ইঞ্জিন সংকট থাকে ; তাহলে বিশেষ দিনে ঢাকা চট্টগ্রাম রুটে বিশেষ ট্রেন চলে কিভাবে? তাহের বলেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান না করলে রেলপথ অবরোধের মত কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে সিলেটবাসী।
সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সিলেটবাসীর দুর্ভোগ দুর্দশা লাঘবে যেন কেউ নেই। এটা যেন বাংলাদেশের অংশ নয়। আকাশ পথে সিন্ডিকেট করে ভাড়া বৃদ্ধি, রেলপথে কালোবাজারী, সড়কপথে দুর্ভোগে দুর্বিসহ হয়ে উঠছেন সিলেটবাসী। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারেন সিলেটবাসী।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস নামের একটি বিরতিহীন ট্রেন চালু হচ্ছে বলে শুনেছিলাম। কিন্তু কী কারণে এটি চালু হয়নি তা আর শুনিনি। তিনি বলেন, সারাদেশে রেলের ইঞ্জিন সংকট রয়েছে। এই সংকট দূর না হলে টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস চালু হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত বলেই মনে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো: তানভীরুল ইসলাম বলেন, আমি গত জুলাই মাসে যোগদান করেছি। আগে কি হয়েছে না হয়েছে আমার জানা নেই।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো: আফজাল হোসেন এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সংক্রান্ত সভায় বলেন, আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে সিলেটে রেলওয়েতে পরিবহন করতে হলে এনআইডি কার্ড সাথে থাকতে হবে। একজনের টিকেট অপরজন ব্যবহার করতে পারবেন না। তিনি বলেন, এতে প্রথমে কয়েকদিন হয়তো কিছু ভোগান্তি হবে। তবে টিকিট কালোবাজারি বন্ধে এছাড়া আর বিকল্প পথ নেই। একজনের টিকিটে আরেকজন ভ্রমণ বন্ধ করতে পারলে টিকিট কালোবাজারিও বন্ধ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।




