বিলেতে কারী লাইফ সম্মাননা পেলেন রেডফোর্টের প্রতিষ্ঠাতা আমিন আলী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৬:২৩:৪৭ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : বিলেতে কারী শিল্পের অন্যতম পথিকৃৎ লন্ডনের এক সময়ের বিখ্যাত রেষ্টুরেন্ট রেডফোর্টের প্রতিষ্ঠাতা আমিন আলীকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করেছে কারী শিল্পের একমাত্র প্রকাশনা “কারী লাইফ ম্যাগাজিন”। গত ১২ সেপ্টেম্বর রোববার ওয়েস্টমিন্সটারের লন্ডন ম্যারিয়ট হোটেলের বলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। কারি লাইফ ম্যাগাজিনের উদ্যোগে আয়োজিত এঅনুষ্ঠানে ব্রিটিশ রাজনীতিক, সংসদ সদস্য, লর্ড সভার সদস্য ও সর্বস্তরের কারী ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে কারি লাইফ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, “কারী শিল্প নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও এগিয়ে চলছে। এই শিল্পের সাফল্য তুলে ধরতে কারি লাইফ অ্যাওয়ার্ড গত ১৬ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”
সম্পাদক সৈয়দ বেলাল আহমেদ বলেন, “আমিন আলী প্রমাণ করেছেন, রেষ্টুরেন্ট কেবল ব্যবসা নয়, এটি রাজনৈতিক প্রভাব ও পরিচয়ের এক ক্ষেত্র। তার সাফল্যের গল্প ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।”
এই পদক টি যখন ঘোষনা করা হয় তখনই আমন্ত্রিত অতিথিরা উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন, যেন উপস্থিত সবাই এই সম্মাননার মাধ্যমে নিজেরা সম্মানিত হয়েছেন। আমিন আলীর এই রেডফোর্ট এটি শুধু একটি রেষ্টুরেন্টই ছিল না, এই ব্যবসার সাথে জড়িয়ে রয়েছে পুরো বাংলাদেশী কমিউনিটির দীর্ঘ রাজনৈতিক এবং সামাজিক ইতিহাস।
সফল রেষ্টুরেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি ব্রিটেনে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতেও কাজ করেছেন আমিন আলী।
ব্রিটেনের সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে গর্ডন ব্রাউন ও টনি ব্লেয়ারসহ বহু বড় বড় রাজনীতিকের প্রিয় রেস্টুরেন্ট ছিল রেডফোর্ট। এক সময় এসব কথা লোক মুখে প্রচলিত ছিল।
জানা গেছে, ১৯৭২ সালে হবিগঞ্জের পল্লী থেকে ব্রিটেনে এসে রেস্টুরেন্টে কাজ নেন আমিন আলী।এক দশক পর নিজস্ব ভাবনা নিয়ে শুরু করেছিলেন তাঁর নিজস্ব ব্যবসা রেডফোর্ট। যা সময়ের ব্যবধানে জনপ্রিয়তার দিক থেকে প্রথম সারিতে ওঠে আসে এবং বিলেতের মূল স্রোতের রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনায় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পৌছায়। এক সময়ের প্রভাবশালী এই ব্যক্তির বেশভূষা ছিল খুবই সাধারন,থাকতেন ও সবকিছুতে নেপথ্যে।কিন্তু নেপথ্যের এই আমিন আলী বিলাতের রাজনীতিতে।বিশেষ করে লেবার পার্টিতেও প্রভাবশালী ছিলেন।
আমিন আলী’র স্মৃতি চারণ থেকে জানা যায়, রেডফোর্টে বসেই আই ফোনের চিন্তা করছিলেন অ্যাপল কম্পিউটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস। সেন্ট্রাল লন্ডনের ব্যস্ত ডিনস্ট্রিটের এই রেষ্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেতে খেতেই জবসের মাথায় খেলা করে আইফোনের ধারণা। ২০১১ সালে তথ্যপ্রযুক্তির এই দিকপাল মারা যাওয়ার পর এ তথ্যটি প্রকাশ পায় ডেইলি ইনডিপেনডেন্ট, টেলিগ্রাফ-এর মতো পত্রিকায়। তিনিও সে সময় জানতে পারেন, তাঁর রেডফোর্টই স্টিভ জবসের প্রিয় রেস্টুরেন্ট। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের দপ্তরে একমাত্র খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ছিল রেডফোর্ট। অনেকের ধারণা, রেডফোর্টের রসনায় তৃপ্ত অতিথিদের সই আছে যে বইটিতে, সেটি নিলামে তুললে দাম মিলিয়ন পাউন্ড অতিক্রম করবে। তিন দশক ধরে বইটিতে রেডফোর্ট সম্পর্কে লিখে গেছেন পৃথিবীর ৭০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ অনেক বিশ্ব নন্দিত তারকা। সাবেক দুই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও গর্ডন ব্রাউন রেডফোর্টের নিয়মিত কাস্টমার ছিলেন অতিথি হয়েছেন ডেভিড বেকহ্যাম দম্পতি স্টিভ জবস, টিনা টার্নার, ব্রুস উইলিস, শচীন টেন্ডুলকার, ঐশ্বরিয়া রাইসহ অনেক বিখ্যাত তারকা।
যুক্তরাজ্যে বাংলা সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করতে ১৯৮৭ সালে জামদানির প্রদর্শনী করেছিলেন আমিন আলী। সে সময় বাংলাদেশ থেকে জামদানি তাঁতিদেরও নিয়ে এসেছিলেন। আমিন আলী এই উৎসবের আয়োজন সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা আজ জামদানির ভৌগোলিক পরিচয়গত স্বীকৃতি হারাতে বসেছি। ১৯৯৪ সালে লন্ডনে প্রথম বাংলাদেশ উৎসব করেছিলাম। পাশের দেশ ভারত নানাভাবে তাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি তুলে ধরে। আমার জেদ চাপে আমরা কেন পারব না।’ আমিন আলী দেশ থেকে একটা যাত্রাপালা নিয়ে এসেছিলেন, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ফ্যাশন শো ইত্যাদির আয়োজনে তিন দিন সরগরম করে রেখেছিলেন। বিবিসি টেলিভিশন সরাসরি ওই উৎসবের সম্প্রচার করে। উৎসব উপলক্ষে ১৮২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার ইতিহাসে একবারই ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায়ও এক পাতা খবর ছাপা হয়েছিল।




