শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচন নিয়ে সংশয়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪৫:৫৪ অপরাহ্ন
মাঈন উদ্দিন, শাবিপ্রবি থেকে ॥ দীর্ঘ ২৭ বছর পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ ও আগ্রহ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর উপাচার্যের উপস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ঘোষণার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় বিএনপিপন্থি চারজন নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেন। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও নানা জল্পনাকল্পনা। কেউ প্রশ্ন তুলছেন, শাকসু নির্বাচন কি আদৌ হবে? আবার কেউ কেউ মনে করছেন, বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল শাকসু বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
অভিযোগের কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা দেখাচ্ছেন, তাদের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডকে, যা নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। প্রায় ১০ মাস শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যানারভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। এ সময় ছাত্রদল দাবি করেছিল, প্রথমে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে, তারপর শাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এম. সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী ঘোষণা দেন যে, নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এই ঘোষণার পর নির্বাচনকে সামনে রেখে ২২ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি পুনরায় চালু করা হয়। তবে রাজনীতি চালুর পর ১৯ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল দাবি করে, ক্যাম্পাসে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজন করা ঠিক হবে না। তারা বলেন, দীর্ঘ ১০ মাস ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকায় তারা সাংগঠনিকভাবে পিছিয়ে পড়েছেন। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো এখানে ৫ আগস্টের পর রাজনীতি চালু ছিল না। প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনীতি স্থগিত রেখে এখন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইছে, এমন অভিযোগও করেন তারা।
তারা আরও বলেন , বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। এই সময়ে নির্বাচন আয়োজন শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে। তাই তারা পরীক্ষার পর নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানান। এর আগে এক অনলাইন মিটিংয়ে বিএনপিপন্থি কিছু শিক্ষক উপাচার্যের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এ সকল বিষয় পর্যালোচনা করে সম্ভাব্য শিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে যে চারজন পদত্যাগ করেছেন, তারা সবাই জুলাই আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তাই তাদের প্রতি আমাদের ভরসা ছিল। কিন্তু তারা সেই বিশ্বাস হারিয়েছেন। আমার মনে হয়, ছাত্রদল শাকসু বানচালের জন্য একটি পরিকল্পিত সিরিজ শুরু করেছে। আত্মবিশ্বাসের অভাবে তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে শাকসু নির্বাচন চায় না। এজন্য একের পর এক অজুহাত তুলে নির্বাচন পেছাতে চাইছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে তারা বলেছিল, ছাত্ররাজনীতি চালু না করে নির্বাচন দেওয়া যাবে না। রাজনীতি চালুর পর আবার বলল, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এখন বলছে, পরীক্ষার সময় নির্বাচন মানসিক চাপ দেবে। বিএনপিপন্থি কিছু শিক্ষকও প্রশাসনের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন। কমিশন ঘোষণার মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে বিএনপি মতাদর্শের পাঁচ শিক্ষকের পদত্যাগ সবকিছুই একটি ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়।
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শাবিপ্রবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আজাদ শিকদার বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বিএনপিপন্থি চারজন শিক্ষক তফসিল ঘোষণার আগেই একযোগে নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেছেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখালেও তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা শিক্ষার্থীদের মনে সন্দেহ তৈরি করেছে। এটি আসন্ন শাকসু নির্বাচনের সুষ্ঠুতা, নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা আগেই প্রশাসনকে সতর্ক করেছিল যে, কমিশনে এমন কাউকে রাখা ঠিক হবে না যারা মাঝপথে রাজনৈতিক কারণে সরে যেতে পারেন। সেই সতর্কতা উপেক্ষা করার ফল আমরা এখন দেখছি। শিক্ষার্থীরা কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না, ইনশাআল্লাহ। আমরা চাই অবিলম্বে শাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবির আহবায়ক পলাশ বখতিয়ার বলেন, অভ্যুত্থানের পর এক বছরের বেশি সময় পার হলেও প্রশাসন নির্বাচন আয়োজন করতে পারেনি, যা জুলাই আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী। নভেম্বরই ছিল নির্বাচন আয়োজনের সর্বোত্তম সময়। এর মধ্যে না হলে পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচনের প্রভাবে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে আধিপত্য দেখা দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগ নির্বাচন আয়োজনকে প্রভাবিত করবে না বলে আমি মনে করি। পদত্যাগ করা এক কমিশনারও বলেছেন, তিনি শাকসু নির্বাচন চান। তাই আশা করি, কমিশন সফলভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করবে।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছাত্রদলের শাবিপ্রবি শাখার সভাপতি রাহাত জামান বলেন, কেউ পদত্যাগ করলে তার দায় আমাদের নয়। তারা ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন। তাদের জায়গায় তাদের পরবর্তীজনকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। অন্যথায় নতুন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হোক। আমরাও চাই উৎসবমুখর পরিবেশে শাকসু নির্বাচন হোক। তবে বর্তমানে অনেক ব্যাচের পরীক্ষা চলমান। তাদের অনেকেই প্রার্থী হবেন। এই সময়ে কিভাবে তারা প্রচারণা চালাবেন। তাই সবার সুবিধা বিবেচনা করে নির্বাচন আয়োজন করাই যুক্তিসংগত হবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচারস্ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)-এর শাবি শাখার শিক্ষক নেতারা শাকসু নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে অসহযোগিতা করবেন বলে গুঞ্জন উঠেছে।
জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য ও ইউট্যাব শাবিপ্রবির শাখার আহ্বায়ক মো. সাজেদুল করিম বলেন, ইউট্যাব হচ্ছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে দায়িত্বশীল সংগঠন। ইউট্যাব যদি কোন কিছু করতে চায়-তাহলে অবশ্যই মিডিয়াকে জানিয়ে করবে। নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে, আমরা এখন সেটা গ্রহণ করিনি। যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে নতুন চারজন নিয়োগ দেওয়া হবে অন্যথায় তারাই কাজ করবেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আশংকা করার কিছু নেই।




