বাচ্চা রাজহাঁসের কাণ্ড
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুন ২০২১, ৯:৫৪:১৫ অপরাহ্ন

সুমন বণিক
ঝমঝম বৃষ্টি ঝরছে। মনে হচ্ছে, আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ছে। জানালার গ্রিল গলে বৃষ্টির ঝাপটা ঘরের ভেতর আসছে। আর্য জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ। নিস্পলক তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। সামনে ছোট্ট খেলার মাঠ, সবুজ ঘাসে মোড়া। রোজ বিকেলে এই মাঠে ওরা খেলে। আজ বৃষ্টির কারণে মাঠে যেতে মা বারণ করেছেন। বৃষ্টিতে ভিজলে আর্যের চট করে ঠাণ্ডা লেগে যায়। মা বৃষ্টির দিনে বাইরে বেরোতে দেন না। তাই আর্যের মনটা ভীষণ ছটফট করছে। আজই ওদের ক্রিকেট ম্যাচ ছিল। বৃষ্টির জন্য সব পণ্ড। তাই মেঘে ঢাকা আকাশের মতো গোমরা মুখে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে। মাঠের কোথাও কোথাও বৃষ্টির জলে ডুবে গেছে। দুটি রাজহাঁস জলের ভেতর ঠোট চুবিয়ে চুবিয়ে কী যেন খাচ্ছে। মা রাজহাঁসটির পেছনে পেছনে বাচ্চা রাজহাঁসটিও খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। আর্য খুব মজা পেল। বেশ আগ্রহ নিয়ে গলাটা বাড়িয়ে, কপালটা গ্রিলে ঠেকিয়ে দেখছে। বাচ্চা রাজহাঁসটি একটি পলিথিনের শপিংব্যাগ নিয়ে খেলছে, ঠোটে নাড়াচাড়া করছে। মা রাজহাঁসটি গলা উঁচিয়ে দেখে রাগে গজগজ করে উঠল। বাচ্চা রাজহাঁসটির মুখ থেকে ওটা নিয়ে দূরে ফেলে এলো। দুটু বাচ্চা রাজহাঁসটি পলিথিনটি আবারও ঠোটে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগল। এক সময় পলিথিনটি ওর গলায় পেঁচিয়ে গেল। ও জল জমা মাঠে শুয়ে পড়ল। আর্যের খুব কষ্ট হলো, দৌড়ে গিয়ে বাচ্চা হাঁসটাকে বাঁচাতে চাইল। কিন্তু মা বকাঝকা করবেন। তাই যেতে পারল না। আর্যকে ডাকতে ডাকতে মা ব্যালকনিতে এলেন- এখানে দাঁড়িয়ে কী দেখছ, ঘরে এসো। বৃষ্টির জলে ভিজে যাবে।
মায়ের কথা না শুনে আর্য বাচ্চা রাজহাঁসটিকে দেখছে- দেখো মা, বাচ্চা হাঁসটার কী কষ্ট হচ্ছে। মানুষ কেন যেখানে-সেখানে পলেথিন ব্যাগ, ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখে! এতে সবাই তো কষ্ট পায়।
‘তোমাকে ভাবতে হবে না। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আছে। ওরা দেখবে।’
মায়ের কথায় আর্য খুশি হতে পারল না। আর্য উচু গলায় বলল, ময়লা ডাস্টবিনে না ফেললে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পাবে কেমন করে?
মা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ধমকের স্বরে বললেন- তাড়াতাড়ি ঘরে এসো, ভিজে যাবে।
আর্য দেখল, মা-রাজহাঁসটি ছুটে এসে বাচ্চা রাজহাঁসটির গলা থেকে খুলে ফেলল পলিথিনের টুকরোটা। বাচ্চা রাজহাঁসটি ওর মায়ের পিছু পিছু ছুটছে। ওর কাণ্ড দেখে আর্য মনে মনে হাসল।