সিলেট জেলা সদর হাসপাতাল
৮ তলা ভবন নির্মিত হলেও সেবা কার্যক্রম চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ৪:৪৫:০০ অপরাহ্ন
নূর আহমদ
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সিলেট জেলা সদর হাসপাতালের নির্মাণকাজ ৯৭ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, এখন শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। আগামী অক্টোবর মাসেই গণপূর্ত বিভাগের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করা হবে। অন্যদিকে, ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এই হাসপাতালটি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালনা করবে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালনা করবে-তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। জনবল নিয়োগ বা লজিস্টিক সাপোর্ট কোথা থেকে আসবে, কে তদারকি করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তারা নিজেরাই জানেন না। ফলে যথাসময়ে হাসপাতাল চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রায় ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর চৌহাট্টায় শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের পাশে আগের আবু সিনা ছাত্রাবাসের স্থানে সিলেট জেলা হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান সরকার। তবে, আবু সিনা ছাত্রাবাস প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন উল্লেখ করে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা। এতে কাজ শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের দৃঢ়তায় হাসপাতাল নির্মাণে অটল থাকে সরকার। এরপর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ৯৮ একর জায়গার ওপর হাসপাতালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব পায় পদ্মা অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সিলেট গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, ভিত্তিসহ আটতলা ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন রংয়ের কাজ চলছে। লিফট স্থাপন হবে। কিছু গ্লাস বিদেশ থেকে আসবে, এর অপেক্ষা করা হচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, হাসপাতালের সুবিধাদির মধ্যে থাকবে- বেজমেন্টে কারপার্কিং, প্রথম তলায় টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুমসহ প্রয়োজনীয় কক্ষ, দ্বিতীয় তলায় আউটডোর, রিপোর্ট ডেলিভারি ও কনসালট্যান্ট চেম্বার, তৃতীয় তলায় ডায়াগনস্টিক, চতুর্থ তলায় কার্ডিয়াক ও জেনারেল ওটি, আইসিসিইউ, সিসিইউ, পঞ্চম তলায় থাকবে গাইনি বিভাগ, অপথালমোলজি, অর্থোপেডিক্স ও ইএনটি বিভাগ, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় ওয়ার্ড ও কেবিন। এর মধ্যে আইসিইউ বেড ১৯টি এবং সিসিইউ বেড নয়টি এবং ৪০টি কেবিন থাকবে।
অপরদিকে, ভবনের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ৯০০-১০০০ কেভি ক্ষমতার একটি ট্রান্সফরমার বসানোর কথা রয়েছে। সিলেট গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায় জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সাবস্টেশন নির্মাণের কাজ এখনো বাকী রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভবন হস্তান্তর করলেও বাকী কাজ চলবে। এছাড়া ভবনটিতে জরুরি প্রয়োজনের জন্য থাকবে ৩০০ কেভি অটো ডিজেল জেনারেটর। হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার।
এদিকে, শুরুতেই হাসপাতাল নির্মাণ ও তদারকিতে সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে গণপূর্ত বিভাগ সমন্বয় করেনি বলে অভিযোগ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়। তৎকালীন পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছিলেন, হাসপাতালের অগ্রগতির বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তিনি নিজ দায়িত্বে কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন। মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন যাতে হাসপাতালের নির্মাণ কাজের বিষয়টি তারা দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারেন। বর্তমান পরিচালক ডাঃ শরীফুল হাসান একই তথ্য দিয়েছেন।
হাসপাতাল নির্মাণ কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগের পরিচালক ডাঃ শরীফুল হাসান বলেন, সাধারণত একজন তত্বাবধায়ক নিয়োগ করে হাসপাতালটি পরিচালনা বা তদারকি করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোন নির্দেশনা আসেনি। যেহেতু হাসপাতালটির অবস্থান সিলেট জেলায়; সেহেতু সিলেটের সিভিল সার্জনের বিষয়টি সম্পর্কে ভালো জানার কথা। তিনি এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা: মনিসর চৌধুরী দেন অন্য তথ্য। তাঁর দাবি, সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে ৮ তলা ভবন। শামসুদ্দিন হাসপাতালটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ওই হাসপাতালের পরিচালকই নতুন হাসপাতাল পরিচালনা করবেন এবং শামসুদ্দিন হাসপাতালের রোগীদেরই ওই ভবনে স্থানান্তর করা হবে। আর বর্তমান শামসুদ্দিন হাসপাতালকে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালে রূপ দেয়ার কথা রয়েছে।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, ৮ তলা বিশিষ্ট যে ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে সেটা দেখভাল করা তাঁর দায়িত্বে পড়ে না। সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক এর আওতাধীন তত্বাবধায়কের সেটি দেখভাল করার কথা।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এর আগে হাসপাতাল নির্মাণের স্থাপত্য নকশা, কর্মপরিকল্পনা, সেবা প্রদানের জন্য সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় কক্ষের সুবিন্যাসকরণ ইত্যাদি বিষয় স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের মধ্যে সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালক অথবা ওসমানী হাসপাতালের পরিচালকের কাছে কোনো কাগজপত্র দাখিল করা হয়নি বলে মর্মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলো সিলেট স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়।
সিলেট গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায় দাবি করেন, সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করেছে, তা সঠিক নয়। টেন্ডার শিডিউল, নকশাসহ কাগজপত্র সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগকে দেয়া হয়েছে। প্রতি তলায় ছাদ ঢালাইয়ের সময় তাদের জানানো হয়েছে এবং তারা এসেছিলেন। তিনি বলেন, সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগকে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল, যাতে দেয়াল, কক্ষ বা বিল্ডিংয়ের কোথাও সমস্যা বা প্রয়োজনীয়তা থাকলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারি; কিন্তু তারা কোনো লোক দেননি। তিনি বলেন, জায়গা, বিল্ডিং, টাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তারা শুধু কাজ করে দিচ্ছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আগামী অক্টোবরে ভবন হস্তান্তর করলেই সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে তারা হাস্তান্তর করবেন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রজেক্ট ম্যানেজার সরাফত করিম রিমন বলেন, দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করে গণপূর্ত বিভাগের কাছে ভবন হস্তান্তর করার জন্য আমাদের বলা হচ্ছে। কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। রংয়ের কাজ চলছে। কিছু গ্লাস ফিটিংয়ের বাকি রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই বাদ বাকি কাজ শেষ হবে বলে তার দাবি।