দিল্লিকে তদন্তের আহবান জানিয়ে ঢাকার কড়া বার্তা
আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, পতাকায় আগুন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫:৫৩:৫৭ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ ভারতের বিভিন্ন ডানপন্থি সংগঠনের শতাধিক সদস্য এই হামলা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে।
তারা সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন দেন এবং সেখানে তারা ভাঙচুরও করেন।
জানা যায়, বাংলাদেশে ‘হিন্দুদের ওপর নির্যাতন’ ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ডাকে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটি।
আগরতলা সার্কিট হাউসে অবস্থিত গান্ধী মূর্তির সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে গিয়ে স্মারকলিপি দেয় ছয়জনের একটি প্রতিনিধিদল।
একপর্যায়ে সমিতির বিক্ষুব্ধ সদস্যরা সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে প্রবেশ করে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলেন এবং সেই পতাকা ছিঁড়ে ফেলেন।
এরপর ভবনের সামনে থাকা সাইনবোর্ড ভেঙে সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। এদিকে, ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ বলে বর্ণনা করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে, গতকাল সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে ভাঙচুরের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ক‚টনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পত্তিকে কোনো অবস্থাতেই হামলার লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়।
নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি ও সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।
দিল্লিকে তদন্তের আহŸান জানিয়ে ঢাকার কড়া বার্তা
এদিকে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় সহকারী হাইকমিশন অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ।
প্রতিবেশী দেশটির সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
গতকাল সোমবার রাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, ‘আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে গতকাল সোমবার ভোরে আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের একটি বড় দল দ্বারা হিংসাত্মক বিক্ষোভ ও আক্রমণের জন্য বাংলাদেশ সরকার ক্ষুব্ধ।
প্রাপ্ত তথ্য চ‚ড়ান্তভাবে প্রমাণ করে, বিক্ষোভকারীদের পূর্বপরিকল্পিত উপায়ে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে প্রাঙ্গণে আগ্রাসনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরের সম্পত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
পরিতাপের বিষয়, প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ছিল না।
‘সহকারী হাইকমিশনের সব সদস্য গভীর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বাংলাদেশ সরকার আরও উল্লেখ করতে চায়, গত ২৮ নভেম্বর কলকাতায়ও বাংলাদেশের ক‚টনৈতিক মিশনের ওপর এই ধরনের জঘন্য হামলা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অপবিত্র করা হয়েছে।
‘আগরতলায় এ ঘটনা ১৯৬১ সালে ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। যেহেতু ক‚টনৈতিক মিশনগুলোকে যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ বা ক্ষতি থেকে রক্ষা করা আয়োজক সরকারের দায়িত্ব, তাই বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করার জন্য আহŸান জানাচ্ছে।
একই সঙ্গে ভারতে বাংলাদেশের ক‚টনৈতিক মিশনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ, ক‚টনীতিক, অ-ক‚টনৈতিক সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহবান জানাচ্ছে।
এদিকে, সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাকে ‘গভীরভাবে দুঃখজনক’ বলে বিবৃতি দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ক‚টনৈতিক ও কনস্যুলার ভবনকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না করার আহবান জানিয়েছে তারা।