ভ্রমণ ও পর্যটন উন্নয়ন : ট্রাভেল এজেন্টদের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা
চাহিদা বাড়ায় সিলেট-জেদ্দা, সিলেট-মদিনা রুটে বিমানের অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর দাবি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫:৪০:৩৭ অপরাহ্ন
ওটিএ’র বিষয়ে নীতিমালা হচ্ছে ।। সচিব নাসরীন জাহান
স্টাফ রিপোর্টার ।। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সিলেট-জেদ্দা ও সিলেট-মদিনা বিমান রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর দাবি উঠেছে। পাশাপাশি সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন কাজ দ্রুততম সময়ে শেষ করার পরামর্শ দিয়েছেন সিলেটের ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা।
এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) কেন্দ্রীয় ও সিলেট অঞ্চলের উদ্যোগে ‘ভ্রমণ ও পর্যটন উন্নয়ন : ট্রাভেল এজেন্টদের ভূমিকা’ শীর্ষক সভায় আলোচকরা এসব দাবি জানান।
মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত এ মতবিনিময়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন-বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মিজ নাসরীন জাহান।
আটাব কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুস সালাম আরেফের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ ও সংগঠনের সিলেট অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান রুশো চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুন নাসের এবং মো. আনিসুর রহমান।
মতবিনিময় সভায় আটাব সিলেটের নেতৃবৃন্দ বলেন, পর্যটন খাতে সবগুলো উপাদান বিদ্যমান থাকা সত্তে¡ও সিলেটে এ খাত নানা সমস্যায় ধুঁকছে। এজন্য অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরাপত্তাহীনতা, পর্যটন স্পটগুলোতে স্যানিটেশনের সুব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করেন তারা।
পর্যটনখাতকে প্রসারিত করতে সিলেটের এসব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি ওসমানী বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে হবে।
বিশেষ এ বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমান ছাড়াও অন্যান্য বিদেশি বিমানের ফ্লাইট উঠা-নামার ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা। তারা ট্রাভেল এজেন্সি সংশ্লিষ্টদের পর্যটন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মিজ নাসরীন জাহান বলেছেন, পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ অর্থনীতির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সিলেট অঞ্চলে অনেক পর্যটন স্পট রয়েছে, যা পর্যটকদের ভ্রমণে উৎসাহিত করে।
এ খাতকে এগিয়ে নিতে ট্রাভেল এজেন্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের ট্যুরিজমকে ব্র্যান্ডিং করতে চাই। যাতে করে দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে আরো বেশি করে তুলে ধরা যায়। এতে করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পর্যটনখাতে সিলেটে বিরাজমান সমস্যাসমূহ সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।
সচিব মিজ নাসরীন জাহান আরো বলেন, বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে তাল মেলাতে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্ট (ওটিএ) চালু হয়েছে। তবে, ওটিএ’র অসম প্রতিযোগিতা বন্ধে একটি নীতিমালা হচ্ছে।
নীতিমালার আলোকে ওটিএ’র বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। এর ফলে ট্রাভেল এজেন্সির কার্যক্রম আরো স্বচ্ছ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত সচিব আব্দুন নাসের বলেন, পর্যটন এলাকা হিসেবে সিলেটের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যার কারণে কক্সবাজারের চেয়েও সিলেটের প্রতি লোকজন বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
এ খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিলেটের সমস্যাগুলো সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনকে সাথে নিয়ে কাজ করতে আটাব নেতৃবৃন্দকে পরামর্শ দেন তিনি। তিনি সিলেটে পর্যটন মেলা করার ওপর জোর দেন।
মতবিনিময় সভায় আটাব সিলেট অঞ্চলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সভাপতি মো. জিয়াউর রহমান খান রেজওয়ান, মোতাহার হোসেন বাবুল, আব্দুল জব্বার জলিল, খন্দকার সিপার আহমদ, জহিরুল কবির চৌধুরী শিরু, আব্দুল কুদ্দুস, গিয়াস উদ্দিন, সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী, মোজাম্মেল হোসেন, আব্দুল হামিদ, আব্দুল কাদির, আতাউর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন আবুল কালাম আজাদ।
আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ সিলেট অঞ্চলে যে কোন একটি পর্যটনকেন্দ্রে সরকার প্রদত্ত স্থানে আটাবের অর্থায়নে ও ব্যবস্থাপনায় একটি রেস্ট রুম নির্মাণের ঘোষণা প্রদান করেন।
এছাড়াও আটাব অঞ্চলের পর্যটনকে বিশ্বব্যাপী প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে আটাব থেকে সিলেটে একটি পর্যটন মেলা আয়োজন করার কথা জানান।
ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো কমপ্লেক্স নিয়ে সভা
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান বলেছেন, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো কমপ্লেক্সে স্থাপিত মেশিনারিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী। এটার অনেক ব্যবস্থাই ঢাকার চেয়েও উন্নতমানের।
ফলে সিলেটে উৎপাদিত কৃষি ও কুটিরশিল্পসহ অন্য পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সিলেট সার্কিট হাউস সম্মেলনকক্ষে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত কার্গো কমপ্লেক্স সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি নবনির্মিত কার্গো কমপ্লেক্সের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুন নাসের খান এবং মো. আনিসুর রহমান। এতে সিলেটের জেলা প্রশাসক, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তাসহ ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত কার্গো কমপ্লেক্স সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা অংশগ্রহণ করেন।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এ কার্গো কমপ্লেক্স এখনই সেবা দিতে প্রস্তুত উল্লেখ করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, বিভিন্ন দেশে সিলেটের পণ্যের চাহিদা থাকার দাবিতে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হলেও ২০২২ সাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র দুইবার পণ্য পাঠানো হয়েছে।
চার বছরে এটা যেভাবে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হয়নি। সচিব নাসরীন জাহান বলেন, সিলেটবাসীকেই এটা কার্যকর করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
সরকার নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সব রকম সাহায্য করতে সবসময়ই প্রস্তুত আছে। চাহিদা অনুযায়ী রপ্তানির প্রতিশ্রুতি পেলে সরকার সব রকম সহযোগিতা করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে যদি আবারো প্যাকেজিং ওয়্যারহাউস করা হয় সেটা যাতে পড়ে না থাকে।
এজন্য একটা পরিপূর্ণ কার্গো সার্ভিস চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা যেতে পারে। সভার সুপারিশমালা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি উপস্থিত অংশীজনদের আশ্বস্ত করেন।