সিলেট মহানগর জামায়াতের ইফতার মাহফিলে মানুষের মিলনমেলা
‘৫ আগস্টের বিপ্লবের পর আমরা একটি রহমত ও বরকতের সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মার্চ ২০২৫, ৪:২৪:১২ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, রমজান মাস কোনআনের জন্য যুদ্ধ করার মাস, রমজান মাস কোরআনের বিজয়ের মাস। এই মাস শুধু ব্যক্তিগত নয় জাতিগতভাবে ত্বাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থাকে ইসলামের আলোকে গড়ে তোলার তাগিদ দেয়। একজন রাষ্ট্রপ্রধান, একজন এমপি, মন্ত্রীর মধ্যে যখন ত্বাকওয়া জেগে উঠে-তখন আপনা আপনি ত্বাকওয়া ভিত্তিক সমাজ গঠন সহজ হয়ে উঠে। সেই সমাজে আল্লাহর ভয় এমনভাবে জেগে উঠে, যেখানে কোনো রাষ্ট্রপ্রধান হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুঁড়ে শিশুকে হত্যার নির্দেশ দিতে পারে না। গুলি করে মানুষ মেরে লাশ আগুন দিয়ে ছাঁই করতে পারে না। ত্বাকওয়া বা আখেরাতের ভয় গোটা রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থাকে আমূল বদলে দেয়। জামায়াতে ইসলামী সেই ত্বাকওয়া ভিত্তিক সমাজ গড়ার সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তিনি এও বলেন, রাষ্ট্রে আল্লাহর আইন জারি করতে মহাসংগ্রামের প্রয়োজন। জামায়াতে ইসলামী সেই মহা সংগ্রামের জন্য দেশবাসীকে ডাক দিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সম্মানে সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে, সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলটি একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়। মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, রাষ্ট্রে আল্লাহর আইন চালু না থাকলে সুদ ঘুষ মদ জুয়া কিছুই বন্ধ করা যায় না। আল্লাহর আইন না থাকলে ব্যক্তিগত জীবনে ত্বাকওয়া অর্জন করলেও সেটা কোন কাজে লাগে না। নিয়মিত তাহাজ্জুদ গুজারি হলেও সুদ ঘুষ থেকে বেঁচে থাকা যায় না। জামায়াতে ইসলামী তাই আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক সংগ্রামের ডাক দিয়েছে।
সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার কোরআনের আয়াত উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ নিজেই ওয়াদা করেছেন ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম হলে সেই রাষ্ট্রে আকাশ থেকে জমিনে সমস্ত রহমত ও বরকত নেমে আসবে। সেই সমাজে কোন অশান্তি অভাব থাকবে না। ৫ আগস্টের বিপ্লবের পর আমরা এমন একটি রহমত ও বরকতের সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেটা পরিপূর্ণতা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।
মাহফিলে বিশিষ্ট আইনজীবী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক, সিলেটে কর্মরত ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদ কর্মী, কবি, সাহিত্যিক, চিকিৎসক এর পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মাহফিলে দেশ-জাতির মঙ্গল ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তি-সুস্থতা কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান। মাহফিলের পূর্বে দারসুল কুরআন ও মাহে রমজানের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা পেশ করেন হাফিজ মিফতাহুদ্দীন আহমদ।
নগরীর আরামবাগস্থ একটি অভিজাত কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সিলেট মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. ইসমাইল পাটোয়ারী, লিডিং ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. তাজ উদ্দিন, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস উন নূর, সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান ও হাফিজ আনোয়ার হোসাইন খান, সিলেট চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, বিএনপি নেতা সালেহ আহমদ খসরু, জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা এহসান উদ্দিন, এনডিএফ এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি প্রফেসর ডা. আবুল হাশেম চৌধুরী, শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হক ও প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম, আলেমে দ্বীন অধ্যক্ষ মাওলানা লুৎফুর রহমান হুমায়দী, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সাংবাদিক নাসির উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার মুহিউদ্দিন, লেবার পার্টির মাহবুবুর রহমান খালেদ, মহানগর খেলাফত মজলিসের সভাপতি হাফিজ তাজুল ইসলাম, আব্দুল হান্নান তাপাদার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা এমরান আলম, গাজী রহমত উল্লাহ, জমিয়তের মাওলানা মাহমুদুল হাসান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আসাদ উদ্দিন, দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক এনামুল হক জুবের, আব্দুল কাদের তাপাদার, কবীর আহমদ সোহেল, কবির আহমদ, মুহিত চৌধুরী, শিপার চৌধুরী, ফারুক আহমদ, আহবাব মোস্তফা খান, শফিক আহমদ শফি, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলজার আহমদ হেলাল, দুর্নীতিমুক্তকরণ ফোরাম বাংলাদেশের মকসুদ হোসেন, সিলেট মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর ড. নুরুল ইসলাম বাবুল, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব, জাহেদুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা ইসলাম উদ্দিন ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, মাহে রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের সকল স্তরে ন্যায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার শপথ নিতে হবে। জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন- পবিত্র মাহে রমজান হচ্ছে কুরআন নাজিলের মাস। এই পবিত্র মাসে ইসলামের প্রাথমিক এবং চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল। তাই আত্মশুদ্ধির মাস মাহে রমজান থেকে শিক্ষা নিয়ে ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের শপথ নিতে হবে।