কোম্পানীগঞ্জের চার ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবি
’পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম স্থগিত ভারতের স্বার্থে’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫:০৭:২৮ অপরাহ্ন

কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে ঘাপটি মেরে থাকা মাফিয়া সিন্ডিকেট ও ভারতীয় এজেন্টদের মদদে ভারতের স্বার্থ রক্ষায় পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে কোম্পানীগঞ্জের চার ব্যবসায়ী সংগঠন।
গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার টুকেরবাজার মেজবান রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পার্টি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা এ দাবি করেন।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য মো. শওকত আলী বাবুল।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট একটি দুষ্ট চক্রের প্রত্যক্ষ ইশারায় সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল। ভারতের পাথর বিপণনের স্বার্থে পরিবেশের দোহাই দিয়ে পাথর আহরণ বন্ধ রাখায় মানুষের জীবন-জীবিকায় ভয়াবহ রকম অনিশ্চয়তা নেমে আসে। সিলেটের অন্তত দশ লাখ মানুষ অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হয়। অভাব-অনটন হয়ে ওঠে মানুষের নিত্য সঙ্গী। দেখা দেয় দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি। দেশের কোয়ারিগুলো বন্ধ রেখে রিজার্ভের ডলার ব্যয়ে পাথর আমদানি করে দেশের অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতিসাধন করা হয়। যুগ যুগ ধরে উজানের পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা পাথর সংগ্রহ করেই এ অঞ্চলের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। দেশের নির্মাণ শিল্পের অন্যতম উপাদান হিসেবে এ অঞ্চলের পাথর ব্যবহার হয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকার পাথর আহরণ বন্ধ করে দেয়ায় নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। ফলে বিগত কয়েক বছর ধরে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় বহু বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ভেঙেছে। কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর উৎসমুখে বালি ও পাথরের বিরাট স্তূপ হয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। ভবিষ্যতে নদী তীরবর্তী বেশ কয়েকটি জনপদ ঢলের তোড়ে নিশ্চিহ্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অথচ নদীর উৎসমুখে স্তূপীকৃত বালি-পাথর সরানো গেলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতো।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিলেটের পাথর কোয়ারি চালু থাকাবস্থায় মানুষের ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়। সমৃদ্ধ হয় জনপদ। তখন শত শত কোটি টাকা পাথর ব্যবসায় বিনিয়োগ করতেন ব্যবসায়ীরা। লাখ লাখ বারকি শ্রমিক পাথর আহরণ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু কোয়ারি বন্ধের পর থেকে এই মানুষগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগকারীরা কর্মক্ষেত্র হারিয়ে দেউলিয়া হয়েছেন।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, আধিপত্যবাদী ভারতের স্বার্থে কোয়ারি বন্ধ রেখে বিগত সময়ে আমদানি করা হয় ভারতের নিম্নমানের চুনাপাথর। রিজার্ভের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ভারতে পাচার করে বিনিময়ে নিম্নমানের পাথর এনে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এসব অবকাঠামোর স্থায়িত্ব নিয়ে আমরা সন্দিহান। পাথর আমদানির নামে রিজার্ভের ডলার ব্যয় করায় আমাদের কেন্দ্রীয় রিজার্ভের অবস্থা কই গিয়ে ঠেকেছিল সবারই জানা। অথচ দেশীয় উন্নতমানের পাথর দিয়ে নির্মাণ শিল্পের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের রিজার্ভ ধরে রাখা যেতো।
‘পাথর কোয়ারি বন্ধের মূল কারিগর কথিত দরবেশ বাবা (সালমান এফ রহমান) ও তার সৃষ্ট মাফিয়া চক্রের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারে ঘাপটি মেরে বসে আছে’। দাবি করে বলা হয়, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার সরকারের পতনের পর সিলেটের ব্যবসায়ী ও লাখ লাখ পাথর শ্রমিক আশাবাদী হয়ে ওঠে। এবার হয়তো কর্মসংস্থানের বদ্ধ দুয়ার খুলবে। কিন্তু তা আর হলো না।
অন্তর্বর্তী সরকারে ঘাপটি মেরে থাকা মাফিয়া চক্র ও ভারতীয় এজেন্টদের মদদে পরিবেশের দোহাই দিয়ে পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকারের এই হটকারিতায় লাখ লাখ শ্রমিক ও ব্যবসায়ী মহলে নেমে এসেছে চরম হতাশা। উপদেষ্টা পরিষদের নেয়া এই সিদ্ধান্তকে দেশবিরোধী বলেও আখ্যায়িত করা হয়।
আন্দোলনের আল্টিমেটাম : সিলেটের দশ লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থে পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে সকল মানুষের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত হবে এবং দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। তারা অবিলম্বে সিলেটের ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, লোভাছড়া, রতনপুর, উৎমা ও শ্রীপুরসহ ১৭টি পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়ার দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর সিলেটবাসীকে নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মো. সাহাব উদ্দিন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হাজী মো. আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জসিমুল ইসলাম আঙ্গুর, উপজেলা স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল জলিল মেম্বার, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হেকিম, চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সহ-সভাপতি বশির আহমদ, ব্যবসায়ী আব্দুল আজিদ, মতিউর রহমান, ইলিয়াছুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কবির আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মাহফুজ প্রমুখ। আরো উপস্থিত ছিলেন পাথর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, গত রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে সারা দেশের গেজেটভুক্ত পাথর/সিলিকাবালু/নুরী পাথর/সাদা মাটি কোয়ারিসমূহের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় পরিবেশগত বিবেচনায় দেশের ৫১টি পাথর কোয়ারির মধ্যে ১৭টি পাথর কোয়ারির ইজারা প্রদান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।