সিলেটে শেষ মুহূর্তে জমে উঠতে পারে কোরবানির পশুর হাট
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০২৫, ৩:৫২:৫২ অপরাহ্ন

নূর আহমদ :
সাধারণত ঈদের দুই/তিন দিন আগে সিলেটের হাট-বাজারগুলো পুরোপুরি জমে উঠে। এবারো হচ্ছে তাই। ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রত্যাশা এবারো শেষ দুই দিনে জমে উঠবে কোরবানির পশুর হাট। অন্যদিকে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত বাজারে পর্যাপ্ত গরু উঠেনি। তবে বিক্রেতারা দামও হাঁকছিলেন একটু বেশি। সার্বিক দৃষ্টিতে কেনা-বেচা কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যত সময় যাচ্ছে বাজারে গরু-ছাগল উঠছে।
জানা যায়, সিসিকের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে নগরীর ১২টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য আবেদন করা হয়। এরমধ্যে ৭টি হাটের অনুমোদন দেয় জেলা প্রশাসন। অনুমোদিত হাটগুলো হচ্ছে- দক্ষিণ সুরমা পারাইরচক ট্রাক টার্মিনাল, মিরাপাড়া আব্দুল লতিফ স্কুল সংলগ্ন মাঠ, টিলাগড় পয়েন্ট, মেজরটিলা বাজার, নতুন টুকেরবাজার, মাছিমপুর কয়েদীর মাঠ ও শাহপরান গেইট এলাকা। এছাড়া সদর উপজেলা প্রশাসন অনুমোদিত আরো ১০টি হাট চালু হয়েছে।
সিলেটের বৃহত্তম পশুর হাট কাজিরবাজার অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত দেশের নওগাঁ, রাজশাহী, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোর, সুনামগঞ্জ থেকে ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে বাজারে এসেছেন। এবারো তাদের উপস্থিতি রয়েছে।
অবশ্য এখন পর্যন্ত দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আগত ব্যবসায়ীদের পথে পথে চাঁদা দেয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, যত সময় যাচ্ছে গরু উঠছে কাজিরবাজারে। সারিবদ্ধ গরু নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন বেপারীরা। যদিও সিলেটে অতিবৃষ্টির জন্য সৃষ্ট জলাবদ্ধতার ভয় অস্বস্তিতে রেখেছে বেপারীদের। তাদের দাবি বাজার এখনো জমে উঠেনি। নিয়মিত ব্যবসায়ী ছাড়াও মৌসুমি গরু ব্যবসায়ীরাও ঈদকে সামনে রেখে গরু নিয়ে এসেছেন বাজারে।
সারিবদ্ধ গরু নিয়ে ব্যবসায়ীরা ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন। তেমন একজন ব্যবসায়ী সুনামগঞ্জ থেকে আসা আমির উদ্দিন। দুই সপ্তাহ আগে ৫০টি গরু নিয়ে বাজারে আসেন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত তার ৫টি গরু বিক্রি হয়েছে। তার আশা আজ-কালকের মধ্যে সব গরু বিক্রি করে যেতে পারবেন।
মাগুরা থেকে গরু নিয়ে আসা আফরুজ মিয়া জানান, মঙ্গলবার রাতে ১২টি গরু নিয়ে বাজারে আসেন। এখন পর্যন্ত একটি গরু বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, সিলেটীরা একটু দেরিতে গরু কিনে। তার আশা সব গরু বিক্রি করেই যাবেন।
লোকজন আসলেও দরদাম করে চলে যায় বলে মন্তব্য নাটোরের মোহাম্মদ আলীর। তিনি প্রতিবছর সিলেটে গরু নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, গরু বিক্রি না হলেও তার হতাশা নেই। তিনি জানান, প্রথম দিকে লোকজন বাজারে আসে দরদাম জানার জন্য। এবারো তাই হচ্ছে।
নগরীর টিলাগড়ে অস্থায়ী পশুর হাটে কিছু গরু নিয়ে এসেছেন বেপারী আরব আলী। তিনি বলেন, ৭টি গরু নিয়ে সিলেট এসেছেন। মাঝে মাঝে দু একজন ক্রেতা আসেন। তবে দাম করেই চলে যান। তার আশা আজ ও কাল হাট জমবে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান জানান, তার ভাই প্রতিবছর তিনটি গরু কোরবানি দিতেন। এবারও তিনটি দিবেন। গরু কিনতে এসে দেখছেন গরু মালিকরা দাম একটু বেশি হাঁকলেও শেষ পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, দাম ভালো হলে গরু যে কোনসময় কিনে নিবেন।
নগরীর কুমারগাঁও তেমুখি এলাকায় অস্থায়ী পশুর হাটে কথা হয় নগরীর নোয়া খুররমখলা এলাকার বাসিন্দা আজাদ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় একেকটি গরুর দাম একটু কম হাঁকছেন বিক্রেতারা। বাজারে গরু একটু কম।
সিলেট শহরতলীর শিবেরবাজার একটি স্থায়ী পশুর হাট। যেখানে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের গরু পাওয়া যায়। সেখানকার ব্যবসায়ী কৃষক মোবারক আলী বলেন, তিনটি গরু রয়েছে। গরুগুলো তার লালন পালন করা। গত দুই দিন ধরে বাজারে নিয়ে আসছেন, কিন্তু কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়ায় বিক্রি করেননি।
বিক্রেতারা দাবি করছেন, গরুর খাবার খৈল, ভুষি, খড়, ঘাসের দাম যে হারে বেড়েছে-এর জন্য বিক্রেতারা বাধ্য হয়েই দাম একটু বেশি বলছেন। তবে শেষ পর্যন্ত গরুর দাম চড়া থাকবে না নামবে তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে ঈদের ঠিক আগমহূর্তে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় সীমান্ত দিয়ে গরু আসা সীমিত। তবে এর আগে বিপুলসংখ্যক গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফলে বাজারের ভারসাম্য থাকবে কিনা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
সিলেটের বৃহৎ পশুরহাট কাজিরবাজারের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন লালন বলেন, বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম ঘটেছে। যদি রাস্তাঘাটে গরু আসতে কোন বাধা না হয়-তাহলে এবার বেচাকেনা ভালোই হবে। তিনি বলেন, কাজিরবাজারে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।
অপরদিকে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবার সিলেট জেলায় কুরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা প্রায় ১ লাখ ২ হাজার। এর মধ্যে গরুর চাহিদা ৮০ হাজার হলেও প্রস্তুত রয়েছে মাত্র ৬৭ হাজার, ফলে প্রায় ১২ হাজার গরুর ঘাটতি রয়েছে। তবে ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতির আশঙ্কা নেই।
সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মিয়া বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে কিছু ঘাটতি থাকলেও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে পশু আসার সঙ্গে সঙ্গে সংকট অনেকটাই কেটে যাবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও সিলেট সদর উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে ২০টি হাটের তালিকা পেয়েছি। এসব হাটের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ১২টি স্থানে পশুর হাটের অনুমোদন চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭টির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ইজারাপ্রাপ্তদের বাজার সমঝে দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত হাটের বাইরে কেউ বাজার বসালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।