বিভ্রান্তির বেড়াজালে বৃটিশ সরকারের পদবি সমূহ!
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮:০৬:৪৯ অপরাহ্ন

ব্যারিস্টার নাজির আহমদ :
বৃটেনে বাংলাদেশিরা বৃটিশ রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত থাকলেও এবং পার্লামেন্টে একাধিক নারী সদস্য থাকলেও গত বছরের আগ পর্যন্ত সরকারের অংশীদার তথা মন্ত্রীসভায় ছিলেন না। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিবিদরা অনেক এগিয়ে গেছেন। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত একাধিক মন্ত্রী বৃটিশ সরকারে অতীতে ছিলেন, এখনও আছেন। পশ্চিমা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিটি লন্ডনের বর্তমান মেয়রও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। ভারতীয় বংশোদ্ভূতদেরও একই অবস্থান । তারা বরং আরো এগিয়ে আছে বলা যায়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত থেকে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীও ইতিমধ্যে হয়ে গেছেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই জন নারী সংসদ সদস্য রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিকী গতবছর কেবিনেটের একেবারে জুনিয়র পজিশনে নিয়োগ পেলে তা নিয়ে বৃটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তো বটেই এমনকি বাংলাদেশেও উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে, যদিও সম্প্রতি ভিন্ন ভিন্ন কেলেঙ্কারির কারণে তাদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। যখন তারা দুজন মন্ত্রিসভার জুনিয়র সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান তাদের পদ, পদবি ও উপাধি নিয়ে অনেকের মধ্যে বিরাট বিভ্রান্তি পরিলক্ষিত হয়। সাধারণ মানুষ তো বটেই এমনকি বাংলাদেশের নামিদামি গণমাধ্যমেও অত্যন্ত ভুলভাবে তাদেরকে এবং তাদের উপাধিকে তুলে ধরা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।
রুশনারা আলী এমপি গত বছরের ৯ জুলাইতে যখন মন্ত্রিসভায় জুনিয়র সদস্য হিসেবে স্থান পান তখন কমিউনিটি মিডিয়া ও বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেকটা অতিরঞ্জিত খবর ছাপে। তার পদবির নাম নিয়েও বিভ্রান্তি ছিল। তার পদবির পুরো টাইটেল ছিল পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর হোমলেসনেস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি। পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি নাম পদবিতে থাকায় অনেকে মনে করতেন এটা সিভিল সার্ভিসের (আমলাদের) জব বা পদবি! না, এটা ছিল জুনিয়র মিনিস্টারিয়াল পজিশন।
রুশনারা আলী এমপি যে মন্ত্রণালয়ের জুনিয়র মিনিস্টার ছিলেন, সে মন্ত্রণালয়ের পুরো নাম হচ্ছে দ্য মিনিস্ট্রি অব হাউজিং, কমিউনিটিস অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট। এই মন্ত্রণালয়ে আছেন একজন পূর্ণ মন্ত্রী যিনি ফুল কেবিনেট মেম্বার। সেই মন্ত্রীর পূর্ণ উপাধি হচ্ছে সেক্রেটারি অব স্টেট ফর হাউজিং, কমিউনিটিস অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট। তার অধীনে আছেন মোট ছয়জন জুনিয়র মন্ত্রী যাদের পদবি হলো যথাক্রমে মিনিস্টার অব স্টেট ফর লোকাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইংলিশ ডিভোলিউশন; মিনিস্টার অব স্টেট ফর হাউজিং এন্ড প্লানিং; পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর বিল্ডিং সেফটি, ফায়ার অ্যান্ড লোকাল গ্রোথ; পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর হোমলেসনেস এন্ড ডেমোক্রেসি (যে পোর্টফোলিও রুশনার আলী এমপি হোল্ড করতেন); পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ফেইথ, কমিউনিটিস অ্যান্ড সেটেলমেন্ট এবং পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর হাউজিং ও লোকাল গভর্নমেন্ট। সুতরাং দেখা যাচ্ছে রুশনারা আলীর অবস্থান ছিল তার নিজ মন্ত্রণালয়ের জুনিয়র সদস্যদের মধ্যে ক্রমানুসারে চতুর্থ।
রুশনারা আলীর সঙ্গে একইভাবে এবং একই সময় টিউলিপ সিদ্দিকী এমপিও মন্ত্রিসভায় জুনিয়র সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান। তাকে নিয়েও বৃটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এবং বাংলাদেশে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস দেখা গেছে, যদিও সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। বাংলাদেশের পতিত প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণে বরং তাকে নিয়েও বাংলাদেশের গণমাধ্যম নানা ধরনের খবর প্রকাশ করেছে।
টিউলিপ সিদ্দিকী এমপির পদবি ছিলো ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি। ২০১৪ সাল থেকে এই পদে আসীন সবাই প্রায়শই নগর মন্ত্রী পদের সঙ্গে একযোগে অধিষ্ঠিত ছিলেন বলে এই পদবিকে সিটি মিনিস্টার বলেও ডাকা হয়। এটি জুনিয়র মিনিস্টারিয়াল পজিশন। যে দপ্তরে টিউলিপ সিদ্দিকী নিয়োগ পেয়েছিলেন সেই দপ্তরের নাম হচ্ছে হিজ ম্যাজিস্টিজ ট্রেজারি (His Majesty’s Treasury)। এই দপ্তরের আনুষ্ঠানিক (formal) দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হলেও এর মূল দায়িত্বে যে কেবিনেট মেম্বার আছেন তার পদবি হলো চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার যাকে বাংলাদেশের নিয়মে অর্থমন্ত্রী বলা যায়। এরপরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হচ্ছেন চিফ সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি। তিনি সিনিয়র কেবিনেট মেম্বার এবং তাকে নিয়মিত কেবিনেট মিটিং-এ যোগদান করতে হয়। এরপরে উক্ত মন্ত্রণালয়ে আছেন পাঁচজন জুনিয়র মন্ত্রী যাদের পদবি হলো যথাক্রমে ফাইন্যান্সিয়াল সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি, ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি (যেটা টিউলিপ সিদ্দিকী এমপি হোল্ড করতেন), এক্সচেকার সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি, পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি ফর দ্য ট্রেজারি এবং পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে টিউলিপ সিদ্দিকী এমপির অবস্থান ছিল তার নিজ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র দুজন কেবিনেট সদস্যদের পর পাঁচজন জুনিয়র সদস্যদের মধ্যে ক্রমানুসারে দ্বিতীয়।
বাংলাদেশের পূর্ণ মন্ত্রীকে বৃটেনে সাধারণত সংক্ষেপে তার দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের সাথে মিলিয়ে সেক্রেটারি বলা হয়। যেমন বাংলাদেশের পূর্ণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রীকে বৃটেনে হোম সেক্রেটারি বলা হয়। তার পরিপূর্ণ পদবি হলো সেক্রেটারি অব স্টেট ফর হোম আ্যফেয়ার্স। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বৃটেনে হেলথ সেক্রেটারি বলা হয়। তার পরিপূর্ণ পদবি হলো সেক্রেটারি অব স্টেট ফর হেলথ। তবে এই কেবিনেট মেম্বার পদবির সেক্রেটারির সাথে আবার সিভিল সার্ভেন্ট তথা আমলাদের সাথে মিলিয়ে বিভ্রান্ত (confused) হওয়া যাবে না। সিনিয়র আমলাদের বৃটেনে শুধু সেক্রেটারি হিসেবে বলা হয় না। বরং তাদের উপাধি হচ্ছে ‘পার্মানেন্ট সেক্রেটারি’।
বাংলাদেশের মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রীর পাশাপাশি এক বা একাধিক জুনিয়র মন্ত্রী থাকেন। তাদেরকে যথাক্রমে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী বলা হয়। বৃটেনেও এক মন্ত্রণালয়ে তিন থেকে পাঁচ এমনকি সাতজন জুনিয়র মিনিস্টার পর্যন্ত থাকেন। তাদের পদবিগুলো বিভ্রান্তিকর, দেখলে বা শুনলে মনে হতে পারে তারা পূর্ণ মন্ত্রী। যেমন হাউজিং মিনিস্টার, হোম অফিস মিনিস্টার, হেলথ মিনিস্টার কিন্তু তারা মন্ত্রনালয়ের জুনিয়র মিনিস্টার এবং তারা কেবিনেট মিটিংয়ে বসেন না। ক্যাবিনেট মিটিংয়ে বসেন পূর্ণ মন্ত্রী যাদেরকে দপ্তরের নাম উল্লেখ করে সেক্রেটারি বা সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে ডাকা হয়।
আরো কিছু ট্রেডিশন বৃটেনে অনুসরণ করা হয় যা বিশ্বের অন্যান্য দেশে দেখা যায় না। যেমন কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতায় থাকলে কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যানকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী (Cabinet Minister without Portfolio) হিসেবে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়। যেমন ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ারসি কনজারভেটিভ পার্টির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন এবং মন্ত্রিসভার দপ্তরবিহীন কেবিনেট মন্ত্রী ছিলেন। সেক্রেটারি অব স্টেটরা সাধারণত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র মন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্য হলেও ভিন্ন নামের পোর্টফোলিও হোল্ডারও বৃটেনে কেবিনেট মেম্বার আছেন, যেমন প্রেসিডেন্ট অব দ্য বোর্ড অব ট্রেডও (অতীতে এই পদবির নাম ছিল প্রেসিডেন্ট অব দ্য বোর্ড অব ইন্ডাস্ট্রিজ) একজন কেবিনেট মেম্বার। চ্যান্সেলর অব দ্য ড্যাচি অব ল্যাংকাস্টারও কেবিনেট মেম্বার পজিশন। একইভাবে লর্ড প্রিভি সীল লীডার অব দ্য হাউস অব লর্ডসও (পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ) একজন পূর্ণ কেবিনেট মেম্বার। সরকারি দলের প্রধান হুইপের অফিসিয়াল পদবি হচ্ছে পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি। তিনি অর্থবিলসহ গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলো পাশ নিশ্চিত করণে নিজ দলের সংসদ সদস্যদের শৃঙ্খলার মধ্যে রাখেন। তার পদটিও কেবিনেট মেম্বারের পদ এবং নিয়মিত কেবিনেট মিটিংয়ে যোগ দেন।
বাংলাদেশের সংসদে প্রধানমন্ত্রী হলেন লিডার অব দ্য হাউস তথা সংসদ নেতা। বৃটেনে প্রধানমন্ত্রী কিন্তু লিডার অব দ্য হাউস নন। বরং অন্য একজন যিনি পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদার এবং ক্যাবিনেট মিটিংগুলোতে বসেন। তার প্রধান ও মূল কাজ হচ্ছে ‘organising government business in the House of Commons (Parliament)’ (অর্থাৎ ‘হাউস অব কমন্সে (সংসদে) সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা/সংগঠিত করা’)। বর্তমান বৃটিশ পার্লামেন্টের লিডার অব দ্য হাউস হচ্ছেন স্যার এলান ক্যাম্পবেল।বাংলাদেশে অ্যাটর্নি জেনারেল আইনজীবীদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি সংসদ সদস্য নন বা তাকে সংসদ সদস্য হতে হয় না। বৃটেনে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সিনিয়র একজন আইনজীবীকে যিনি পার্লামেন্টের সদস্য। এটর্নি জেনারেল কেবিনেটের মেম্বার এবং নিয়মিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেন। বাংলাদেশের আইন ও বিচার মন্ত্রীর সমমর্যাদার পজিশন হোল্ডার হচ্ছে জাস্টিস সেক্রেটারি। তার পূর্ণ পদবি হচ্ছে সেক্রেটারি অব স্টেট ফর জাস্টিস। পূর্বে এই পদবি ছিল না। অতীতে লর্ড চ্যান্সেলর বিচার বিভাগের প্রধান ছিলেন ও পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ তথা হাউস অব লর্ডসের প্রধান তথা স্পিকার ছিলেন। পরোক্ষভাবে তিনি আইনমন্ত্রী তথা জাস্টিস সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করতেন।
বাংলাদেশে বিচার বিভাগের প্রধান হচ্ছেন ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’। এই নামের পদবি বৃটেনে নেই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আদালতের ক্রিমিনাল ডিভিশনের প্রধান হচ্ছেন লর্ড চিফ জাস্টিস। তিনি অনেক সিনিয়র বিচারক এবং তার বেতনও সবার উপরে। তবে তিনি পুরো বিচার বিভাগের প্রধান নন। পদবিতে চিফ জাস্টিস শব্দদ্বয় থাকায় মনে হতে পারে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির সমমর্যাদার। তা কিন্তু নয়। বরং বৃটেনে গোটা বিচার বিভাগের প্রধান হচ্ছেন ইউকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান যাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির সমমানের বলা যায়। তবে তার পদবি হচ্ছে প্রেসিডেন্ট অব দ্য ইউকে সুপ্রিম কোর্ট।
বৃটেনের সর্বোচ্চ আদালত ইউকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের পদবি হচ্ছে লর্ড, লেডি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আদালত কোর্ট অব আপিলের বিচারপতিদের পদবি হচ্ছে লর্ড জাস্টিস, লেডি জাস্টিস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আদালতকে আবার দু’টি ডিভিশনে ভাগ করা হয়েছে: ক্রিমিনাল ডিভিশন ও সিভিল ডিভিশন। ক্রিমিনাল ডিভিশনের প্রধানের পদবি লর্ড চিফ জাস্টিস হলেও সিভিল ডিভিশনের প্রধানের পদবী হচ্ছে মাস্টার অব রলস (Master of Rolls)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আদালত কোর্ট অব আপিলে অথবা সর্বোচ্চ কোর্ট ইউকে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতিদেরকে কোর্টে সম্মোধন করা হয় ‘মাই লর্ড/লেডি’ বলে। হাইকোর্টের বিচারপতিদের পদবি জাস্টিস হলেও কোর্টে সম্মোধন করতে হবে ‘মাই লর্ড/লেডি’ বলে।
অপরদিকে, পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের নাম হাউস অব লর্ডস। তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নন বরং বিভিন্ন ম্যাকানিজমের মাধ্যমে মনোনীত করে তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়। হাউস অব লর্ডসের সদস্যদের পদবি হলো লর্ড, ব্যারোনেস। আবার কোন কোন বারা কাউন্সিল বা কাউন্টি কাউন্সিলের মেয়রকে ‘লর্ড মেয়র’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। লন্ডনের প্রায় এক কোটি মানুষের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত মেয়রের পদবি ‘লন্ডন মেয়র’ হলেও এক স্কোয়ার মাইলের ছোট্র সিটি অব লন্ডনের মেয়রের পদবি ‘দ্য লর্ড মেয়র’! লোকাল গভর্নমেন্টের অধীন বারা কাউন্সিল বা কাউন্টি কাউন্সিলের মেয়ররা আবার দুই প্রকারের: কাউন্সিলর কর্তৃক নির্বাচিত ‘সিভিক মেয়র’ আর জনগণ কর্তৃক সরাসরি ভোটে নির্বাচিত “নির্বাহী মেয়র”।
বৃটিশ জাতি অনেকটা ট্রেডিশন নির্ভর জাতি। শত শত বছর, এমনকি হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য ও ট্রেডিশন তারা দলমত নির্বিশেষে ধরে রাখে, আঁকড়ে থাকে। বস্তুত: ঐতিহ্য ও ট্রেডিশন তাদের অলিখিত সংবিধানের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আইন পরিবর্তন ও যুগোপযোগী করতে বৃটিশ সরকার ও স্টাব্লিশমেন্ট ত্বড়িৎ হলেও, বেখাপ্পা লাগা ও বিভ্রান্তিকর পদবি ও টাইটেলের ঐতিহাসিক ট্রেডিশনে পরিবর্তন আনতে তারা মন্তর বা অনিচ্ছুক। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পদবির এই ট্রেডিশনের কারণে বাহির থেকে অনেক সময় এগুলো সেকেলে মনে হতে পারে। অনেক কিছুর সেন্সও না মিলতে পারে। অনেকে আবার বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন। তবে বৃটেনে দীর্ঘদিন থাকলে ও চোখ-কান খোলা রাখলে এগুলোতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচিত বা অভ্যস্ত (familiar) হওয়া যায়।
লেখক: বিশিষ্ট আইনজীবী, রাষ্ট্রচিন্তক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং ইংল্যান্ডের প্র্যাকটিসিং ব্যারিস্টার। Email: ahmedlaw2002@yahoo.co.uk