সিলেটে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল
মামলাপূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার বিধান দরিদ্রদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টি করেছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭:২২:০১ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার: আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারির মাধ্যমে মামলাপূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার যে বিধান কার্যকর হচ্ছে তাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার পাওয়ার অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বাধ্যতামূলক বিধান কার্যকর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের আওতাধীন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার উদ্যোগে সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিচার বিভাগের সিনিয়র বিচারক, বন্ধু রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিনিধিবৃন্দসহ সিলেট বার এসোসিয়েশনের আইনজীবী, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, লিগ্যাল এইড-এর মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রচলিত আইনে নিষ্পত্তির তুলনায় দশ ভাগের এক ভাগ সময় লাগে। প্রচলিত আদালতে যে বিরোধ নিষ্পত্তিতে পাঁচ বছর সময় লাগে লিগ্যাল এইড আদালতে সেটি নিষ্পত্তিতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে। একইভাবে প্রচলিত আইনে মামলার পর বিচারিক আদালতে রায়ের পর বহু মানুষ উচ্চ আদালতে যায়। কিন্তু লিগ্যাল এইডে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ৯০ ভাগ মানুষ সন্তুষ্ট থাকে, তারা আদালতে মামলা করতে যায় না।
রাষ্ট্র আগে এই বিষয়ে সেভাবে মনোযোগ না দেওয়ার অভিযোগ করে উপদেষ্টা বলেন, এটা এমন এক বিচারিক প্রক্রিয়া যেখানে সময় অনেক কম লাগে, খরচ কম হয় এবং ভোগান্তিও অনেকাংশে কমে যায়। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাষ্ট্র আগে সেভাবে মনোযোগ দেয়নি। এখানে কাজ করার বিশাল সুযোগ রয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রচলিত আদালতের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করি। অথচ, অনেক কম টাকা দিয়ে লিগ্যাল এইড আদালতের মাধ্যমে মানুষের বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা তৈরি করা যায়। সেই চিন্তা থেকে লিগ্যাল এইড এর অধ্যাদেশ করা হয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, লিগ্যাল এইড আইনে মামলা করা আগে বাধ্যতামূলক ছিল না। মামলার জট কমাতে এবার আমরা বাধ্যতামূলক করেছি। সেখানে যাওয়ার পর কেউ যদি অসন্তুষ্ট থাকেন তাহলে বিচারিক আদালতে যেতে পারবেন।
আইন সংশোধনের ফলে এখন থেকে ১১টি আইনে মামলার ক্ষেত্রে প্রথমে লিগ্যাল এইডে যাওয়া বাধ্যতামূলক জানিয়ে তিনি বলেন, পারিবারিক বিরোধ, পিতা-মাতার ভরনপোষণ, সম্পত্তির ভাগ, যৌতুক, চেকের মামলা, বাড়িভাড়াসহ ১১ ধরনের আইনে মামলা দায়েরের পূর্বে বাধ্যতামূলকভাবে লিগ্যাল এইড আদালতে যেতে হবে।
বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আগে একটি জেলায় একজন বিচারক ছিল, এখন তিন জন এই দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে একজন সিনিয়র সহকারী জজ, উনার চেয়ে একজন সিনিয়র জজ এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এটি কার্যকর করা গেলে দেশে মামলার জট কমে যাবে। দেশের দরিদ্র অসহায় মানুষের ন্যায়বিচার ও অধিকার সুরক্ষার জন্য অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করবে।
আসিফ নজরুল বলেন, লিগ্যাল এইড ছাড়াও আমরা অনেক কাজ করেছি যা কোনো দিন বাংলাদেশের ইতিহাসে হয় নাই। মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত করতে আমরা সিভিল ও ক্রিমিনাল আদালতকে পৃথক করেছি। বিচারিক পদ সৃষ্টির ক্ষমতা আগে রাজনৈতিক মন্ত্রীদের হাতে ছিল, আমরা এটা চিফ জাস্টিস অফিসের কাছে নিয়ে গেছি। নিজে হাতে করে নিয়ে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে সাইন করিয়ে নিয়ে এসেছি। ফলে, একদিনে সোয়া দুইশ বিচারকের পদ সৃষ্টি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আইনত সহায়তা প্রদান আইনের সাম্প্রতিক সংস্কার বিষয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও সিনিয়র জেলা জজ শেখ আশফাকুর রহমান ও মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা বাস্তবায়নে জেলা বিচার বিভাগের ভূমিকা বিষয়ে সিলেটের জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁরা বলেন, এ ধরনের যুগোপযোগী সংস্কার বিচার ব্যবস্থাকে অধিক গতিশীল ও জনবান্ধব করবে। জেলা লিগ্যাল এইড জনগণের আস্থার প্রতীক হবে বলে তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে বন্ধু রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন এওত বাংলাদেশের বর্তমান কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্টিনা বুরকার্ড।
অনুষ্ঠানে মঞ্চনাটক ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বাধ্যতামূলক বিধানের প্রয়োজনীয়তা ও সুফল তুলে ধরা হয়।
উল্লেখ্য, আইনগত সহায়তা সম্প্রসারণ ও গতিশীল করার লক্ষ্যে গত ১ জুলাই আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করা হয়। এর ফলে এ অধ্যাদেশের তফসিলভুক্ত বিষয়গুলো যেমন পারিবারিক বিরোধ, পিতা-মাতার ভরণপোষণ, বাড়ি ভাড়া, বণ্টন, যৌতুক ইত্যাদি ক্ষেত্রে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জসহ মোট ১২ (বার) টি জেলায় ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে এ বিধান কার্যকর হবে।