আড়াই দশকেও দিরাই পৌরসভায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪৭:৫৭ অপরাহ্ন

উবাইদুল হক, দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে : প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ আড়াই দশকেও সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও ভাটির জনপদ দিরাই পৌরবাসী উন্নয়ন বঞ্চিত। যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তাও সংস্কার না করায় ভেঙে যাচ্ছে। পৌরসভার ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। যানজট হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যদিনের সঙ্গী। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
১৯৯৯ সালে ৬ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত হয় দিরাই পৌরসভা। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৯ টি সাধারণ ওয়ার্ড নিয়েই চলছে এ পৌরসভা। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও পৌরবাসী কাংখিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। কোনোমতে অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের নাগরিক সেবা দেয়া হচ্ছে। পৌরসভার বেশিরভাগ রাস্তা ভাঙাচোরা। অপরিষ্কার ড্রেনেজ ব্যবস্থা। নেই পর্যাপ্ত ডাস্টবিন। প্রধান প্রধান সড়কে ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে মাসের পর মাস ধরে। নেই সড়ক বাতি। আছে বিশুদ্ধ পানির মারাত্মক সংকটও।
আলাপকালে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড-থানা রোড, থানা রোড থেকে ভেতরের পুলের মুখ,ধল রোডের স্ট্যান্ডসহ প্রায় সবকটি মূল সড়কের উপর গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত স্ট্যান্ড। এসব স্ট্যান্ডে ব্যাটারিচালিত শতশত অটোরিকশা থাকায় পৌরশহরে যানজট এখন প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে দাড়িয়েছে। এসব এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট।
এদিকে, সন্ধ্যা হলেই বিভিন্ন ধরনের মালবাহী ট্রাক,ট্রলি বাজারে প্রবেশ করে। এসব নিয়ন্ত্রণ পৌর প্রশাসন কার্যত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না।
পৌর এলাকার প্রধান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ভাঙা। প্রধান সড়ক ও পাড়া-মহল্লায় সড়কবাতি না থাকায় অন্ধকার নেমে আসলেই চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটে। বেড়ে যায় মাদক সেবীদের আনাগোনাও। ময়লা -আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় বিভিন্ন সড়কের পাশে আবর্জনার স্তূপ তৈরি হয়েছে।
এছাড়াও প্রতিটি মুদি দোকান ও বাজারের দু’পাশে কেবলই অবৈধ দোকানপাটের সারি। ঠেলাগাড়ি, রিকসা, ইজিবাইক, ভ্যানগাড়ি ও মালবাহী ট্রাক প্রবেশ করায় বাজারে আসা ক্রেতাসাধারণ পথ চলতে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। বাজারে এসব যানচলাচলের কোনো নীতিমালাও নেই।
শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে থানা পয়েন্টের কোথাও টিউবওয়েলেরও দেখা মেলেনি। যার কারণে বাজারে আসা ক্রেতা ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে আশপাশের রেস্টুরেন্ট ও মসজিদের টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করেতে দেখা গেছে।
থানা রোডের জাকারিয়া ম্যানশনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ জাকারিয়া, বলেন বাজার ব্রীজ হতে থানা পয়েন্ট একদিকে ড্রেনেজ সংযোগ লাইন নেই অথচ এর জন্য বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সেন মার্কেটের ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, পৌরসভার লোকজন শুধু কর তুলতে জানেন, কিন্তু কাজের সময় তাদের পাওয়া যায় না। সঠিক তদারকি থাকলে এমনটা হতো না।
জুলাই আন্দোলনের ছাত্র নেতা আরমান হোসেন অনিক বলেন, দোকান মালিকরা তাদের ইচ্ছামতো যখন খুশি তখন বড় বড় ট্রাক বাজারে ঢুকাচ্ছেন। তাতে করে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ জনগণ, বাজারের রাস্তা সরু হওয়ায় জ্যাম লেগে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা। বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ ও পৌর প্রশাসন নিয়ম শৃঙ্খলা ঠিক করতে তাদের কোন আগ্রহও দেখা যাচ্ছে না।
পৌর শহরের বাসিন্দা রফি মিয়া বলেন, নাছির উদ্দিন চৌধুরী সড়ক পৌর শহরের ব্যস্ততম একটি এলাকা। উপজেলা হাসপাতালসহ উপজেলা পরিষদে চলাচলে বাইপাস হিসেবেও এই সড়ক ব্যবহৃত হয়। এই সড়কে রয়েছে অসংখ্য বাসাবাড়ি। দীর্ঘদিন ধরে এখানকার লোকজন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহালেও সড়কটি সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
দিরাই বাজারের কলেজ রোড ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সেলিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাজারের সেন মার্কেট থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত একটি টিউবওয়েলও নেই।
এছাড়াও শহরের পাড়ায় ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বিদ্যুতের খুঁটিতে সড়ক বাতি জলে না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দিরাই পৌরসভার প্রশাসক অভিজিৎ সূত্রধর সিলেটের ডাককে বলেন,অচিরেই দিরাই পৌর এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে বাজারের ফুটপাত ও ড্রেন পরিষ্কারের কাজ শুরু হবে। বাজারে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় টিউবওয়েল স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।