আজমানের মৃত্যু
‘শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ এড়াতে’ আজ স্কলার্সহোম বন্ধ ঘোষণা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১:২১:০৮ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার: নিজেদের শিক্ষার্থী আজমান আহমেদ দানিয়াল (১৯)-এর অস্বাভাবিক মৃত্যুর তিনদিন পর এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে স্কলার্সহোম কর্তৃপক্ষ।
গতকাল শনিবার স্কলার্সহোম শাহী ঈদগাহ শাখার অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীর আহমেদ কাদেরী (অব.) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আজমানের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে রোববার স্কলার্সহোমের শাহী ঈদগাহ ক্যাম্পাসের সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। অন্যদিকে আজমান আহমেদ দানিয়ালের মৃত্যুর ঘটনায় (আজ) রোববার স্কলার্সহোমে বিক্ষোভ করার কথা জানিয়েছিলেন আজমানের সহপাঠীরা। সূত্র জানিয়েছে, এর পরপরই কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নেয়।
আজমানের লাশ দাফনের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার সহপাঠীরা দাবি করেন, আজমানের মৃত্যুর ঘটনায় স্কলার্সহোম কর্তৃপক্ষের দায় রয়েছে। এই দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। নাম প্রকাশে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির সব শিক্ষার্থীর মধ্যেই ক্ষোভ বিরাজ করছে। রোববার এ ব্যাপারে ক্যাম্পাসে আমরা সমবেত হওয়ার কথা রয়েছে। আজমানের মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনের কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পেলে আন্দোলনের ডাক দিতে পারে শিক্ষার্থীরা।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেলে স্কলার্সহোম’র শাহী ঈদগাহ ক্যাম্পাসের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আজমান আহমেদ দানিয়াল (১৯)-এর মরদেহ নিজ বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শনিবার কলেজ অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- ‘স্কলার্সহোমের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আজমান আহমদ দানিয়ালের আকস্মিক মৃত্যুতে স্কলার্সহোম পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। এ জন্য আগামী ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ স্কলার্সহোম শাহী ঈদগাহ ক্যাম্পাসের সবধরনের একাডেমিক কার্যক্রম (শ্রেণি কার্যক্রম, পরীক্ষা, ব্যবহারিক পরীক্ষা ইত্যাদি) বন্ধ থাকবে।’
আজমানের মত্যুর খবর ছড়িয়ে পরার পর থেকেই স্কলার্সহোম কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার সহপাঠী ও ওই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এমনকি অনেক সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও স্কলার্সহোমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাকেদের সাথে খারাপ আচরণ, পর্যাপ্ত ও দক্ষ শিক্ষক না থাকা, শিক্ষার্থী খারাপ করলে ছাড়পত্র দিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে আজমানের দাফন সম্পন্ন হয়।
আজমানের মা ও সহপাঠীদের অভিযোগ, প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করায় আজমানের সাথে খারাপ ব্যবহার, অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান ও কলেজ থেকে ছাড়পত্র প্রদান করায় আত্মহত্যা করেন আজমান।
অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করে স্কলার্সহোম’র শাহী ঈদগাহ শাখার অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীর আহমেদ কাদেরী (অব.) বলেন, ৩/৪ দিন আগে আজমানের বাবাকে কলেজে ডেকে এনে এসব তথ্য জানানো হয়। এবং বলা হয়- এভাবে সে টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে না। আপনি চাইলে তাকে অন্য কলেজে নিয়ে যেতে পারেন। কোন খারাপ ব্যবহার করা হয়নি।
প্রি-টেস্টে অকৃতকার্য হলে ছাড়পত্র প্রদান করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কাউকে ছাড়পত্র দেই না। সে এখতিয়ারও আমাদের নেই। এটি শিক্ষাবোর্ড অনুমোদন করে। তবে খারাপ ছাত্রদের অভিভাবদের আমরা অনুরোধ করি- যেহেতু এখানে সে ভালো করতে পারছে না, তাই আপনারা চাইলে অন্য কলেজে নিয়ে যেতে পারেন।
এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়- ‘প্রি-টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় কলেজের প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপাল আজমানের অভিভাবকদের ডাকেন। তারা দুই তিনদিন আগে কলেজে গেলে শিক্ষকরা জানান, প্রি-টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় আজমানকে আগামী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মন খারাপ হয়। এর মধ্যে বুধবার অন্য একটি কলেজ থেকে ফিরে বাসায় এসে সে আত্মহত্যা করে।’