দুর্ভোগের অপর নাম নগরীর ভাঙা সড়ক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪২:৪৪ অপরাহ্ন

আহমাদ সেলিম :
সিলেট নগরীর ভেতর বিয়াল্লিশটি ওয়ার্ডের দুই তৃতীয়াংশ সড়ক এখন যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। অধিকাংশ সড়কে একাধিক গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেইসব গর্তে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। কয়েক বছর ধরে সড়কের এই বেহাল দশায় মানুষ বিপর্যস্ত। বছরের পর বছর চলে আসা এই সংকটের সমাধান কে দেবে-এমন প্রশ্ন নগরবাসীর। নগরীর সবচেয়ে প্রাচীন পাইকারি বাজার কালিঘাট, মহাজনপট্টি, লালদিঘীরপাড়।
বর্তমানে এই তিন সড়কের অবস্থা বেহাল। সবচেয়ে বেশি সর্বনাশ চোখে পড়ে কালিঘাট সড়কে। ভাঙন আর গর্তের ফলে এই সড়কের চেহারা পাল্টে গেছে। দিনের বেলা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আশপাশের ব্যবসায়ী সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা ভোগ করেন। রাত হলে তো বৃষ্টির পানি জমে থাকা সড়কের গর্তগুলো এক ধরনের ফাঁদে পরিণত হয়।
লালদিঘীরপাড় কিংবা মহাজনপট্টি সড়কে স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করার কোনো সুযোগ নেই। হালকা যান হিসেবে একটি মোটরসাইকেল গেলেও ছিটকে গায়ে এসে পানি পড়ে। এখানেই শেষ নয়। এবার শিবগঞ্জের সড়কের কথা বলি। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি খারাপ কিচেন মার্কেটের আশপাশের সড়কের। হাফিজ উদ্দিন নামে একজন পথচারী গতকাল দুর্ভোগের বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘ভাই লাগের সিলেট মানুষ থাকে না, দেখার কেউ নাই। বছরের পর বছর আমরা খালি কষ্ট-ই কররাম।’
সড়ক নিয়ে একইরকম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন আম্বরখানা থেকে টিলাগড় পর্যন্ত বসবাসকারী মানুষ। স্থানীয় ব্যবসায়ী আনোয়ার, জুনেদ আহমদ বলেন ‘একদিকে ভাঙা সড়ক, অন্যদিকে বৃষ্টি। জীবন বিপর্যস্ত।’ একমাত্র পাঠানটুলার আরসিসি ঢালাইয়ের কিছু অংশ ছাড়া, অধিকাংশ সড়কজুড়ে খানাখন্দ। উঠে গেছে পিচঢালাই। নগরীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্দরবাজার। এই সড়কেরও বেহাল অবস্থা। অনেকগুলো বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ওসমানী শিশুপার্ক, সোবহানীঘাট সড়কেরও একই চিত্র। প্রতিদিন শত শত সিএনজি চালিত অটোরিকশা ওসমানী হাসপাতাল, মদিনামার্কেট, টুকেরবাজার যাতায়াত করে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে চলাচল করার সময় যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয় প্রতিদিন। তাই দ্রুত সংস্কারের দাবি সবার।
করুণ অবস্থা লামাবাজার পয়েন্ট থেকে জিতু মিয়ার পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের। বন্যার পূর্বে সড়কের অবস্থা কিছুটা ভালো থাকলে বন্যা পরবর্তী সময় থেকে ভোগান্তি চরমে পৌঁছে গেছে। জেল রোড-নয়াসড়ক-শাহী ঈদগাহ সড়ক এবং আম্বরখানা-শাহী ঈদগাহ সড়কের অবস্থাও বেহাল। হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার সংলগ্ন পায়রা আবাসিক এলাকার অলিগলির রাস্তার চরম বেহাল দশা। মাজার জিয়ারতে আসা ভক্ত অনুরাগীসহ যাত্রী ও পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ-তো গেলো সিলেট সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর চিত্র। প্রতিটি ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোর অবস্থাও যাচ্ছেতাই। মাসের পর মাস মানুষ কষ্ট করছেন।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে কালিঘাটের ব্যবসায়ী নিলাঞ্জন দাস টুকু বলেন, কালিঘাটের সড়কের অবস্থা পুরো সিলেটের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। ব্যস্ততম এই কালিঘাটে প্রতিদিন কয়েকহাজার গাড়ি মালামাল নিয়ে আসে-যায়। সেই মালামাল লোড-আনলোড কাজে নিয়োজিত আছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। কিন্তু সড়ক ভালো না থাকায় প্রায় সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। একইভাবে সমস্যা হয় পাইলট স্কুল পরিবারের।’
যোগাযোগ করা হলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের ভেতর খানাখন্দ ভরাটের একটা টেন্ডার হয়ে গেছে। এখন বৃষ্টির জন্য কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি উঠে গেলে কাজ শুরু হবে।’