২২ বছরের অপেক্ষা শেষে ভারতকে হারাল বাংলাদেশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৮:০২ অপরাহ্ন
স্পোর্টস ডেস্ক : ২০০৩ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালের পর আবার ভারতের বিপক্ষে জয়ের হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ। ১১ মিনিটে শেখ মোরছালিনের করা গোলটিকে ধরে রেখে ১-০ গোলেই এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচটি জিতল বাংলাদেশ। ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে পঞ্চম ম্যাচে এসে প্রথম জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশ জিতল পাঁচ ম্যাচ পর। আজকের আগে সর্বশেষ গত জুনে প্রীতি ম্যাচে ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
শেষ মুহূর্তের গোলে বারবারই আশাভঙ্গের বেদনা সওয়া বাংলাদেশ আজ দাঁতে দাঁত চেপে শেষ কয়েকটা মিনিট পার করেছে। দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের আক্রমণের পর আক্রমণ করলেও দৃঢ়তার সঙ্গে সে সব সামাল দিয়েছে বাংলাদেশ।
নেপাল ম্যাচে চোটের কারণে খেলতে পারেননি মোরসালিন। ভারত ম্যাচের আগে পুরোদমে অনুশীলন করতে পেরেছেন দুবার। সেই মোরসালিন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সময় নেন মাত্র ১১ মিনিট। নিজেদের অর্ধে তাঁর কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে ছুটতে থাকেন রাকিব হোসেন। আকাশ মিশ্রকে গতিতে পরাস্ত করে আড়াআড়ি পাসে মোরসালিনের দিকে বাড়ান তিনি। মোরসালিনও চতুরতার সঙ্গে তাঁর প্রথম স্পর্শে ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সান্ধুর দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল পাঠান জালে। পুরো স্টেডিয়াম ফেটে উল্লাসে বাংলাদেশের জার্সিতে ২১ ম্যাচে এটি তাঁর সপ্তম গোল।
ব্যবধানটা আরও বাড়তে পারত শুরুতেই। ১৪ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে রাকিবের বাড়ানো ক্রস মোরসালিনের কাছে পৌঁছানোর আগেই তালুবন্দী করেন সান্ধু। বাংলাদেশের জন্য ছোটখাট এক ধাক্কা হয়ে আসে তারিক কাজীর চোট। ২৭ মিনিটে তাই তাঁকে তুলে নিয়ে শাকিল আহাদ তপুকে নামান কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।
৩১ মিনিটে গোলরক্ষক মিতুল মারমার বিপদে ফেলতে বসেছিলেন বাংলাদেশকে। হামজা চৌধুরী না থাকলে সেখানে সমতায় ফিরতে পারত ভারত। পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ডান কর্নার ফ্লাগে কাছে গিয়ে লো বিল্ডআপে গড়বড় করে ফেলেন মিতুল। তাঁর হাফ ক্লিয়ারেন্সের লং বল গিয়ে পড়ে লালিয়ানজুয়ালা চাংতের কাঁছে। বক্সের বাইরে থেকে তাঁর নেওয়া শটে বাধা হয়ে দাঁড়ান হামজা। হেড করে কর্নারের বিনিময়ে বাংলাদেশকে গোলহজমের হাত থেকে বাঁচান তিনি।
ভারতের কয়েকটি আক্রমণ সামলে ৪৪ মিনিটে সুযোগ আসে হামজার কাছে। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তাঁর ভলি অবশ্য লক্ষ্য খুঁজে পায়নি। তা বাদ দিলে প্রথমার্ধে একেবারেই নির্ভুল ছিলেন হামজা। মাঠের সবক্ষেত্রে প্রতিটি চ্যালেঞ্জ বেশ সফলতার সঙ্গে কাটিয়ে ওঠেন লেস্টার সিটিতে খেলা এই মিডফিল্ডার। বাংলাদেশও তাই বিরতিতে যায় এগিয়ে থাকার স্বস্তি নিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে ভারত। একের পর এক আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। স্বাগতিকেরাও সেভাবে গুছিয়ে খেলতে পারছিল না। ৪৯ মিনিটে সুরেশ সিংয়ের বাঁকানো ফ্রি কিকে রাহুল ভেকের হেড পোস্টের অনেকটা বাইরে দিয়ে চলে যায়। চার মিনিট মহেশ সিংয়ের ভলিও একই পরিণতি পায়।
মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত প্রায় কোণঠাসা করে রাখছিল বাংলাদেশের রক্ষণ। গোলদাতা মোরসালিনকে আর রাখার প্রয়োজন না করায় ৭১ মিনিটে বদলি করান কাবরেরা। মাঠে নামান শাহরিয়ার ইমনকে।
সময় যত ঘনিয়ে আসছিল, ততই বাড়তে থাকে হৃদস্পন্দন। ভারতের একের পর এক হৃদয় কাঁপিয়ে দেওয়া আক্রমণ শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। ভারতের কাছেই তো ২২ বছরে কতবার তীরে এসে তরি ডোবাতে হয়েছে কতবার। না, এবার মিতুল তা হতে দেননি। শুরুর ভুল শুধরে শেষ মুহূর্তে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান গোলপোস্টে। অক্ষত রাখেন জাল। তাঁর শেষের এই পারফরম্যান্স সুযোগ করে দেয় জয়গান গাওয়ার। ২২ বছর পর ভারতকে হারিয়ে ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ স্লোগানে তৃপ্তি নিয়ে সমর্থকদের বাড়ি ফেরার।
বাছাইপর্বে প্রথম জয়ের পর পাঁচ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে তিনে বাংলাদেশ। আগামী মার্চে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাছাইপর্বে শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।




