শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের লাল শাপলার রাজ্যে পর্যটকের ঢল
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩৫:০৬ অপরাহ্ন
আবুল ফজল মো. আবদুল হাই, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের হাইল হাওর এ যেন প্রকৃতির নিপুণ আঁচড়ে আঁকা এক বিস্তীর্ণ জলরূপ। ভোরের প্রথম আলোয় হাওরের বুকে ভেসে ওঠে হাজারো লাল শাপলার সমাহার; দূর থেকে মনে হয় পানির ওপর বিছিয়ে আছে অনন্ত লালের নীরব গালিচা। এই অদ্ভুত মোহময় দৃশ্য এখন প্রতিদিনই টেনে আনছে দেশের নানা প্রান্তের প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসু মানুষকে।
১৪টি বিল নিয়ে গঠিত সুবিশাল হাইল হাওরের সানন্দা বিল সম্প্রতি পরিচিত হয়েছে ‘লাল শাপলা বিল’ নামে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে থাকা লাল শাপলার বিপুল সমাবেশ মনকে আচ্ছন্ন করে দেয় রঙের কোমলতা আর প্রকৃতির বিশুদ্ধ আবেশে। যত দূর চোখ যায়, ততো দূর পর্যন্ত দেখা যায় ফুটন্ত লাল শাপলা। দূর থেকে দেখে মনে হয় এটি যেন লাল গালিচার রাজ্য। বিলটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই ভিড় করছেন হাজারো মানুষ।
দর্শনার্থী সিলেটের কানাইঘাটের জুবায়ের আহমদ জানান, সিলেট অঞ্চলের প্রতিটি কোণেই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। কিন্তু শাপলা বিলে এসে মনে হলো এখানে যেন প্রকৃতি নিজের সাজসজ্জা নিখুঁতভাবে ছড়িয়ে রেখেছে।
শ্রীমঙ্গলের সে বললো কলেজছাত্রী দীপান্বিতা দাশগুপ্তা প্রথমবার এত লাল শাপলা একসঙ্গে দেখে দারুণ অভিভূত। বন্ধুদের নিয়ে এসেছি এখানে। যেন লালের সমুদ্রে দাঁড়িয়ে আছি। মন ভরে গেছে।
স্থানীয় ফাহিম আহমদের পর্যবেক্ষণ এ বছর শাপলার বিস্তার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। পুরো বিলটাই যেন লাল শাপলার রাজ্য। সঙ্গে আছে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা। দেখতে দারুণ লাগে।
শুধু দর্শনার্থী বাড়ছে না, বাড়ছে স্থানীয়দের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও। যাত্রাপাশা গ্রামের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, “হাজারো মানুষের আগমনে বাজার-হোটেল-মুদি দোকান সবখানেই ব্যবসা বাড়ছে। সবাইকে শুধু অনুরোধ, ফুল ছিঁড়বেন না। সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
হাওরের মাঝি তাহির মিয়া বলেন, এখন মাছ ধরা বাদ দিয়ে নৌকা চালিয়েই রোজগার ভালো হচ্ছে। পর্যটক যত বাড়ছে, আমাদের আয়ও তত বাড়ছে।
সানন্দা বিলের সৌন্দর্য উপভোগের সেরা সময় সম্পর্কে জানালেন মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আবু আজম লাল শাপলা রাতে ফোটে। খুব ভোরে এলে এর প্রাকৃিতক সৌন্দর্য চোখে পড়ে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, মির্জাপুরের লাল শাপলা দেশী বিদেশীদের কাছে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ। প্রতিদিন এখানে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। শ্রীমঙ্গলের মতো মির্জাপুরও ধীরে ধীরে পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠছে।
ক্রমবর্ধমান দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে।
হাইল হাওরের লাল শাপলা শুধু প্রকৃতির রঙিন উপহার নয়, এটি বদলে দিচ্ছে একটি অঞ্চলের অর্থনীতি, পরিচয় ও পর্যটনচিত্র। জলরাশির ওপর লালের সমারোহ যেন নতুনভাবে লিখে দিচ্ছে শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্যের গল্প।



