দুই কারণে পেছাল লন্ডন যাত্রা
খালেদা জিয়ার অবস্থা অপরিবর্তিত, এন্ডোস্কোপি সম্পন্ন, বন্ধ হয়েছে পাকস্থলির রক্তক্ষরণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৫:৪৩ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গতকাল শুক্রবার লন্ডনে নেওয়ার কথা ছিল। তবে, কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কারিগরি ত্রুটি এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কারণে তার লন্ডন যাত্রা পিছিয়ে গেছে।
গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে এমনটি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ভালো না। এয়ারক্র্যাফটের সমস্যা আছে, একই সঙ্গে শারীরিক অবস্থাও ভালো না। এই অবস্থায় যাত্রার তারিখ বদল করা হয়েছে। এখন মেডিকেল বোর্ড বললে, ফ্লাই করার মতো থাকলে রোববার তাকে লন্ডনে নেওয়া হবে।’
এদিকে, এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন হয়েছে। এন্ডোসকপির মাধ্যমে তার পাকস্থলির ভেতরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে এন্ডোসকপি করা হয়।
মেডিকেল বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক শারীরিক জটিলতার কারণে এ প্রক্রিয়া জরুরি হয়ে ওঠে।
অপরদিকে, লন্ডন থেকে বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটে গতকাল শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টায় ঢাকায় পৌঁছান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী জুবাইদা। চিকিৎসার জন্য শাশুড়িকে লন্ডনে নিতে আগের দিন সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে তিনি দেশের পথে রওনা হয়েছিলেন।
পেশায় চিকিৎসক জুবাইদা নিজেও তার শাশুড়ির জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য। সকালে ঢাকায় নামার পর বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। গত ২৩ নভেম্বর থেকে বসুন্ধরার ওই হাসপাতালে ভর্তি আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর জুবায়দা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শয্যা পাশে কিছু সময় কাটান। সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেন।
কথা ছিল কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে গতকাল শুক্রবার সকালেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কারিগরি জটিলতায় যাত্রা পিছিয়ে গেছে।
এখন জার্মানি থেকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকায় পাঠানোর বন্দোবস্ত করেছে কাতার সরকার। সেই অ্যাম্বুলেন্স এলে এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অনুকূল হলে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে লন্ডনে নেওয়া হবে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
এদিকে, ধানমন্ডিতে মায়ের সঙ্গে দেখা করে রাতে আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে শাশুড়ি খালেদা জিয়ার কাছে গেছেন তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান।
বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন বলেন, “ভাবী ধানমন্ডির বাসায় মায়ের সাথে দেখা করে কিছুটা সময় সেখানে ছিলেন। রাতে সাড়ে ৮টায় আবার ম্যাডামের কাছে এসেছেন।”
চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা যেমন ছিল, সেখান থেকে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড বৃহস্পতিবার তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু রাতে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটে। যাত্রা পিছিয়ে যাওয়ার এটাও একটি কারণ।
চিকিৎসকরা বলছেন, মেডিকেল বোর্ড দুপুরে এবং সন্ধ্যায় দুই দফা বৈঠক করেছে। এ দুটি বৈঠকে সবশেষ রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করা হয়। তবে, খালেদা জিয়ার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, “কিছু পরীক্ষা বোর্ড দিয়েছে। সেগুলো করা হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলার নেই।”
তবে একাধিক চিকিৎসক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল। সার্বক্ষণিক চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। তবে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া এর বেশি বলার সুযোগ নেই।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তার শারীরিক অবস্থা উন্নত নয় বলেই বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
তার চিকিৎসায় সহায়তা করতে যুক্তরাজ্য ও চীন থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি দল ঢাকায় এসে চিকিৎসা পর্যালোচনা করছে। তাদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় যে, তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন।
খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে কাতারের আমিরের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর কথা ছিল। তবে কারিগরি রক্ষণাবেক্ষণজনিত কারণে সেটি পাঠাতে জটিলতা দেখা দেয়।
বিকল্প হিসেবে কাতার সরকার জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করছে। এটি জর্জিয়ার তিবলিসি থেকে ঢাকায় আসবে বলে জানা গেছে।
গত জানুয়ারিতে চিকিৎসার উদ্দেশে লন্ডনে যাওয়ার সময়ও কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে নেওয়া হয়েছিল।
চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা যেমন ছিল, সেখান থেকে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।



