সিলেটে ইসলামী ও সমমনা ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশ
“একদল অপকর্ম করে পালিয়েছে, আরেকদল সেই অপকর্মের দায় কাঁধে তুলে নিয়েছে”
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:১৭:২২ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক : ফ্যাসিস্টরা দেশ থেকে পালালেও ফ্যাসিজমের কালো ছায়া এখনো কাটেনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, একদল অপকর্ম করে পালিয়েছে, আরেকদল সেই অপকর্মের দায় কাঁধে তুলে নিয়েছে। কেউ চাঁদাবাজি করে জনগণের ক্ষোভের কারণ হয়েছে, আবার কেউ আরও বেশি শক্তি নিয়ে একই কাজ করছে।
আজ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ইসলামী ও সমমনা ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের বাংলাদেশ ছোট্ট একটি দেশ, বিপুল জনসম্পদে পরিপূর্ণ। আফসোসের বিষয় স্বাধীনতার ৫৪ বছর একেক করে চলে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। কারণ বর্গীরা চলে যাওয়ার পর দেশের ভেতরের চিল যারা ছিল, সেই চিলগুলো ছু-মেরে জনগণের সম্পদ নিয়ে চলে গেছে। দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বাইরে পাচার করেছে। দেশে দেশে বেগমপাড়া গড়ে তুলেছে।
তিনি বলেন, কেউ কেউ পালাতে গিয়ে খালে বিলে আশ্রয় নিয়েছে। আবার রসিক সিলেটবাসীর কাছে কেউ কেউ কলাপাতায় ধরা পড়েছে। এভাবেই অপকর্মের দায় নিয়ে ফ্যাসিস্টরা বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিজমের কালো ছায়া বাংলাদেশ থেকে যায়নি।
জামায়াতের আমির বলেন, একদল দখলদার হয়ে জনগণের ঘৃণা কুড়িয়েছে, আরেকদল বেপরোয়া দখলদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। একসময় বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের, আলেম-ওলামাকে জেল, নির্যাতন, ফাসি ও দেশছাড়া করার যে প্রবণতা ছিল, সেটি এখনো থামেনি।
তিনি বলেন, দফায় দফায় এত রক্ত, এত ত্যাগের পরে দেশবাসী কি আশা করেছিল? দেশবাসী আশা করেছিল, অতীতের অপকর্মের যে পরিণতি ওইটা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনীতিবিদরা নতুন রাজনীতি শুরু করবে। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি, একদল সেই পুরাতন ধারায় পড়ে রয়েছে। তারা কোনো সংস্কারে রাজি না। তারা সনদ বাস্তবায়নে রাজি না। তারা গণভোটেও প্রথমে রাজি ছিল না। তারপরও ধাক্কায় ধক্কায় গণভোট একদিনেই হতে হবে, তা তারা বাধ্য করেছে সরকারকে। এখন আবার কোথাও কোথাও আমরা ক্ষীণ সুর শুনতে পাচ্ছি। যারা এতদিন নির্বাচনের জন্য নির্বাচন নির্বাচন করে জনগণকে বেহুশ করে তুলেছিল। এখন তারা ভিন্ন সুরে কেউ কেউ কথা বলতে শুরু করেছে। এ লক্ষণ ভালো নয়।

বিএনপিকে ঈঙ্গিত করে তিনি বলেন, জনগণ তাদেরকে আগামী নির্বাচনে লালকার্ড দেখানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। এই লালকার্ড দেখা থেকে বাঁচতে গিয়ে যদি কেউ আগামী নির্বাচনকে ভন্ডুল করার চেষ্টা করে, আমরা মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে বলছি, তাদের সব ষড়যন্ত্র এ দেশের সংগ্রামী জনগণ ভন্ডুল করে দেবে, ইংশাআল্লাহ।
তা ছাড়া, কেউ যদি চিন্তা করে বাকা পথে প্রশাসনিক ক্যু’র মাধ্যমে নির্বাচনের ক্রেডিট হাইজ্যাক করবে। তাদেরকে বলবো বন্ধু, সেই সূর্য ডুবে গেছে, এই সূর্য আর বাংলাদেশে উঠবে না। কালো সূর্য বাংলাদেশের মুখ দেখবে না। এখন নতুন সূর্যের উদয় হবে।
জোটের বাইরে থাকা দু-একটি ইসলামি দলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি বন্ধুদেরকে অনুরোধ করব, সব জাল ছিন্ন করে আপনারা আপনাদের আঙিনায় চলে আসুন। এই আঙিনা আপনাদের আঙিনা। এখন যেখানে ঘোরাফেরা করছেন, এটা আপনাদের আঙিনা না। তাদের সঙ্গে আপনাদেরকে মানায় না। আপনারা বড় বেমানায় হয়ে গেছেন। আপনারা ঘরের ছেলে ঘরে চলে আসুন। আমরা আপনাদেরকে বুকে জড়িয়ে কবুল করব, অভিনন্দন জানাবো, ইংশাআল্লাহ।
ডা. শফিক বলেন, আজকে রাস্তাঘাটে, হাটেবাজারে, নগরে বন্দরে সব জায়গায় মুক্তিপাগল মানুষ। তারা জানিয়ে দিচ্ছে আগামীতে তারা কোথায় ভোট দেবে। তারা এখন আর কারো রক্তচক্ষুকে পরোয়া করছে না। কেউ কেউ আমাদেরকে অন্যদের রক্তচক্ষুর ভয় দেখান। অমুক শক্তি, তমুক শক্তি, অমুক দেশ, তমুক দেশ। তাদেরকে পরিষ্কার বলি—ইসলামি এবং দেশপ্রেমিক নেতাকর্মীরা হাসি হাসি যেখানে ফাসি বরণ করতে পারে, মেহেরবানি করে তাদেরকে কোনো কিছুর ভয় দেখাবেন না। আমরা ভয় করি শুধু আল্লাহ তায়ালাকে। বাকি যাদের কথা বলেন, তাদেরকে আমরা কোনো পাত্তাই দিই না। তবে বিশ্বের সব শান্তিকামী দেশকে আমরা সম্মান জানাই। কিন্তু কেউ যেন আমাদের ওপর কোনো দাদাগিরি করতে না আসে। আমরা আর কারও দাদাগিরি দেখতেও চাই না। বরদাশত করতেও রাজি নই। বাংলাদেশ চলবে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মোতাবেক। এই দেশের জনগণের পছন্দের বাইরে কারো পছন্দ-অপছন্দের কথা আমরা শুনতে চাই না।
তিনি বলেন, যারা অন্যদের তল্পিবাহক হবে, তাদেরকে বলব, আগে যারা তবেদারি করেছে, তাদের থেকে মেহেরবানি করে একটু শিক্ষা গ্রহণ করুন। যারা গিয়ে তাদের পেটে আশ্রয় নিয়েছে, এটা অখাদ্য। এরা ওখানে গিলতেও পারছে না, ফেলতেও পারছে না—এই পর্যায়ে এসে গেছে। আপনারা যাবেন কোথায়? আপনারা এই দেশে থাকেন। এই দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেন।
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম (পীর সাহেব চরমোনাই), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রাশেদ প্রধান ও বাংলাদেশ ডেভোলাপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক চাঁন।



