যারা এতদিন নির্বাচন নির্বাচন করে জনগণকে বেহুশ করে তুলেছিল, তারা এখন ভিন্ন সুরে কথা বলছে- জামায়াত আমীর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭:১৮:৫৬ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দফায় দফায় এত রক্ত আর ত্যাগের পর দেশবাসী কি আশা করেছে? দেশবাসী আশা করেছিল অতীতের অপকর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নতুন রাজনীতি শুরু করবেন। কিন্তু, আমরা দুঃখের সাথে দেখতে পাচ্ছি একদল সেই পুরাতন ধারায় পড়ে আছে। তারা কোনো সংস্কারে রাজী না, তারা কোনো সনদ বাস্তবায়নে রাজী না, তারা গণভোটেও প্রথমে রাজী ছিল না। তারপরে তাকাই তোকাইয়া সেই গণভোট একদিনেই হতে হবে, তা তারা বাধ্য করেছে সরকারকে। তো তবুও কোথাও কোথাও আমরা ক্ষীণ সুর শুনতে পারছি। যারা এতদিন নির্বাচনের জন্য নির্বাচন নির্বাচন করে জনগণকে বেহুশ করে তুলেছিল, এখন তারা ভিন্ন সুরে কেউ কেউ কথা বলতে শুরু করেছে। এ লক্ষণ ভালো নয়। তারা বুঝতে পেরেছেন, তারা যেসমস্ত কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে পরিচালনা করেছেন, জনগণ তাদেরকে আগামী নির্বাচনে লাল কার্ড দেখানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। এই লাল কার্ড দেখানো থেকে যদি কেউ বাঁচতে গিয়ে আগামী নির্বাচনকে ভন্ডুল করার চেষ্টা করেন, আমরা মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে বলছি, তাদের সকল ষড়যন্ত্র এদশের সকল সংগ্রামী জনগণ ভন্ডুল করবে ইনশাআল্লাহ।
আজ শনিবার বিকেলে সিলেটের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে ইসলামী ও সমমনা ৮ দলের সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন মূল সমাবেশ বেলা ২টা থেকে শুরু হলেও বেলা ১১টা থেকেই শুরু হয় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠমুখী জনস্রোত। বেলা ১টার আগেই মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে আশপাশের এলাকা জনস্রোত ছড়িয়ে পড়ে। ৮ দলের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ দলের প্রতীক সম্বলিত ব্যানার, ফ্যাস্টুন ও প্লেকার্ড হাতে স্লোগানে মুখর হন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর এক এক করে চলে গেলেও বাংলাদেশের মানুষ এখনো সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। কারণ বর্গিরা চলে যাওয়ার পর দেশের ভেতর চিল যারা ছিল, সেই চিলেরা চু মেরে জনগণের সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে। দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বাইরে পাঁচার করেছে। দেশে দেশে বেগমপাড়া গড়ে তুলেছে, কেউ পালাতে গিয়ে খালে- বিলে আশ্রয় নিয়েছে, আবার রসিক সিলেটবাসীর কাছে কেউ কেউ কলাপাতায় ধরা খেয়েছে। এভাবে অপকর্মের দায় নিয়ে ফ্যাসিস্টরা বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিজমের কালো ছায়া বাংলাদেশ থেকে যায় নি। একদল যে অপকর্ম করে চলে গিয়েছে, আরেকদল বাংলাদেশে সেই অপকর্মের দায়িত্ব নিয়েছে। একদল চাঁদাবাজি করার কারণে জনগণের ঘৃণা কুড়িয়েছে, আরেকদল আবার তার চাইতে বেশি শক্তি দিয়ে চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। একদল দখলদার বনতে গিয়ে জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে, আরেকদল বেপরোয়া দখলদার হয়ে উঠেছে। একদল জনগণের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, আলীম-ওলামা, বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে, খুন করেছে, ফাঁসি দিয়েছে, নির্যাতন করেছে, জেলে ভরেছে, পঙ্গু করেছে, দেশছাড়া করেছে, আরেক দল ঠিকই একই পথ ধরেছে। এমনকি নিজেদের মধ্যে মারামারিতে নিজেদেরকে শেষ করে দিচ্ছে।
জামায়াত আমীর আরও বলেন, কেউ যদি আবার চিন্তা করেন, জনগণের সমর্থন পাবো না, তাহলে বাঁকা পথে প্রশাসনিক ক্যুর মাধ্যমে আমরা নির্বাচনের ক্রেডিট হাইজ্যাক করবো, তাহলে বলবো বন্ধু সেই সূর্য ডুবে গেছে, সেই সূর্য আর বাংলাদেশে উঠবে না। এই সূর্য, কালো সূর্য আর বাংলাদেশে মুখ দেখবে না। এখন নতুন সূর্যের উদয় বাংলাদেশে হবে। সেই সূর্য কোরআন বুকে নিয়ে উদিত হবে ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ থেকে অপশাসন দূর হবে। মুটে-মাঝি-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা এই বাংলাদেশ হবে তাদের বাংলাদেশ। লুটেরাদের হাত থেকে উদ্ধার করে, বাংলাদেশ তুলে দেওয়া হবে দেশপ্রেমিক জনগণের হাতে। আমাদের যুব সমাজ যেই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রক্ত দিয়েছে, তাদের আকাঙ্ক্ষার সাথে ৮ দল সম্পূর্ণ একমত। এই আকাঙক্ষার বিপক্ষে যারা দাঁড়াবে, জনগণ আগামী নির্বাচনে আর তাদেরকে ক্ষমা করবে না।
খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদের সভাপতিত্বে ইসলামী ও সমমনা ৮ দল সিলেট জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সৈয়দ মো. রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খ মাওলানা মামনুল হক, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাদের, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ প্রফেসর মাওলানা মুহাম্দ ইউনুছ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল মজিদ আতাহারি, বাংলাদেশ ডেভোলাপমেন্ট পার্টি-বিডিপির সভাপতি এডভোকেট এ.কে.এম আনোয়ারুল হক চান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান।



