সিলেটে শিক্ষক সমাবেশে অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া
‘ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিন’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:৫৫:১৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ‘নির্বাচন দিতেই হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে তাদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিন। সংস্কার করবেন, যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন তারা।’
গতকাল রোববার জুলাই-আগস্ট ২০২৪ ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থান শীর্ষক আলোচনা ও শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের শিক্ষক সমাবেশ ও ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন এবং চাকুরী জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূইয়া। তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে নস্যাতে নানা অপচেষ্টা চলছে। যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেন, আগামী ১শ বছরেও আর আওয়ামী লীগ আসতে পারবে না। তিনি বলেন, দেশের সংস্কারের জন্য তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছেন। উপদেষ্টারা বয়সের ভারে ন্যূব্জ। একদিন পরে গেলেই আগের দিনের বিষয় ভুলে যান। তাদের কয়েকজন আবার আওয়ামী লীগের লোক।’
শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সিলেট বিভাগীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মো. নিজাম উদ্দিন তরফদারের সভাপতিত্বে ও জেলা সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ আহমদের পরিচালনায় সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সদস্য সচিব অধ্যাপক জাকির হোসেন। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় সিলেট নগরীর দরগাহগেইটস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সুলেমান হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন শাহজালাল উপশহর হাই স্কুলের শিক্ষক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া ছাত্র আন্দোলনের সময় এক কাপড়ে ১৩দিন ছিলেন এবং এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ছুটে চলেছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলনে শক্তি যুগিয়েছে রাজনৈতিক দল। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্র আন্দোলনে সহযোগিতা করতে সকলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ছাত্র জনতার পিছনে ছিলাম আমরা।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামীলীগ সরকার বই-এ মিথ্যা কল্প কাহিনী দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। দেবদেবীর মূর্তির ছবি দিয়েছে বইয়ে। ফ্যাসিবাদিরা বই ছাপিয়েছে বাইরের দেশে। তারা তাদের মতো করে ছাপিয়ে দিয়েছে। এবার বই আমাদের দেশেই ছাপা হবে।’ মহান স্বাধীনতার যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের মূখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। গত ১৫ বছরে বই পত্রে মুজিব বন্দনার নামে মিথ্যা গল্প কাহিনীতে বই সয়লাব করে দেয়া হয়েছে। আগামীদিনে আওয়ামীলীগের এসব মিথ্যাচার, তাদের দুর্নীতি ও লুটপাটের কথা বই পুস্তকে তুলে ধরা হবে।’
বিগত দিনে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি শিক্ষার উন্নয়নে নকল বন্ধ, অবৈতনিক শিক্ষা, নারী শিক্ষা, উপবৃত্তি, বেসরকারি শিক্ষকদের বাড়িভাড়া, অবসরভাতা, কল্যাণ সুবিধা চালু করেছিল। ফ্যাসিস্টরা তার কোন কিছুই আর বাড়ায়নি বরং শিক্ষাকে ধ্বংস করেছে। দুর্নীতিবাজ, অসৎ, মাদকসেবী. অযোগ্যদের স্কুল কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি করে শিক্ষার পরিবেশ পুরোপুরি নষ্ট করেছে। তাদের মতাদর্শ বিরোধী শিক্ষকদের লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, চাকুরীচ্যুত করেছে।’ তিনি বেসরকারি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘চাকুরী জাতীয়করণ ছাড়া হয়রানির হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন বিএনপি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে চাকুরী জাতীয়করণ করা হবে। ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও তার মায়ের সকল ওয়াদা পূরণ করবেন বলে জানিয়েছেন।’ তিনি শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান। তিনি সংগঠনের জেলা কমিটিকে শক্তিশালী করা এবং প্রতিটি উপজেলায় কমিটি করার আহবান জানান।
বাংলাদেশ স্কুল শিক্ষক সমিতি সিলেট জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ সিফত আলীর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে সূচিত অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কারিগরি শিক্ষক সমিতি সিলেট জেলা সভাপতি জিল্লুর রহমান শুয়েব, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুর্শেদ আলম, মহানগর সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মুনিম পারভেজ, মাদরাসা শিক্ষক সমিতি জেলা সভাপতি মাওলানা রওনক আহমদ, মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফয়জুর রহমান, মাদরাসা শিক্ষক সমিতি সুনামগঞ্জের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ফারুক রশিদ, হবিগঞ্জ শিক্ষক সমিতির আহবায়ক শাহ আবুল হাসান প্রমুখ।
সমাবেশে এসে সংহতি প্রকাশ করেন ও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসন কয়েছ লোদী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ আহমদ চৌধুরী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ সিলেটের সভাপতি ডা. শামিমুর রহমান, সদস্য সচিব ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী, ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জিয়াউর রহমান চৌধুরী, সিলেট জজ কোর্টের পিপি এডভোকেট আশিক উদ্দিন, শিক্ষাবিদ মুহিবুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।