উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারে শোকের ছায়া
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১১:০২ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক : ভূমি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই প্রবীণ আইনজীবীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি এবং উপদেষ্টা পরিষদে হাসান আরিফের সহকর্মীরাও।
শুক্রবার দুপুরে বাসায় খেতে বসে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৮৩ বছর বয়সী হাসান আরিফ। পরিবারের সদস্যরা তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ অগাস্ট শপথ নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুরুতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও হাসান আরিফের ওপর দেওয়া হয়েছিল। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন।
মিশনে ডি এইট সম্মেলন শেষে দেশে ফেরার পর বিকালে হাসান আরিফের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রয়াত উপদেষ্টার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিমানবন্দর থেকেই তিনি ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে ছুটে যান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও হাসান আরিফের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাসপাতালে যান।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এক শোক বার্তায় বলেন, হাসান আরিফের মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য এক ‘অপূরণীয় ক্ষতি’।
রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তার শোকবার্তায় আইনজীবী হিসেবে হাসান আরিফের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, “তার আকস্মিক মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। উপদেষ্টা হাসান আরিফ একজন শীর্ষ আইনজীবী, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন।
“হাসান আরিফ একজন উজ্জ্বল আইনজীবী হিসেবে এবং ভিন্নমতাবলম্বী, ভিন্নমতের কণ্ঠস্বর ও আমাদের সমাজের প্রান্তিক মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এক শোক বার্তায় বলেন, প্রবীণ এই আইনজীবীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ ‘আইনের জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে’ হারাল।
হাসান আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রবীণ এই উপদেষ্টার মৃত্যুতে পৃথক বাণীতে শোক প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ আরও অনেকে।
১৯৪১ সালের ১০ জুলাই কলকাতায় হাসান আরিফের জন্ম। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং এলএলবি করেন।
১৯৬৭ সালে কলকাতা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর তিনি সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
বিএনপি জামায়াত-জোট সরকারের সময়ে ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন হাসান আরিফ। ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন জানান, এশার নামাজের পর ধানমন্ডি সাত নম্বরে বায়তুল আমান মসজিদে উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের জানাজা হবে। শনিবার বেলা ১১টায় হাই কোর্ট প্রাঙ্গণে আরেক দফা জানাজা হবে।