হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান নেতৃবৃন্দের সাথে জামায়াত আমীরের মতবিনিময়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৭:১৩ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা সাফ বলেছি-আমরা মেজরিটি-মাইনোরিটি মানি না। এদেশের যারা নাগরিক, তারা সবাই সমমর্যাদাবান গর্বিত নাগরিক। ছোট্ট একটা দেশ, এত ভাগ কিসের আবার। জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই এক। কারণ দেশ বাঁচলে আমিও বাঁচব, সবাই বাঁচবে। অশান্তি হলে সবাইকে তা ভোগ করতে হবে। আমরা একটা শান্তিপূর্ণ মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
তিনি বলেন, জামায়াতই একমাত্র সংগঠন, যারা নিজেদের সদস্যদের মাসিক চাঁদায় চলে। আমরা সব সম্প্রদায়ের মানুষ জাতীয় স্বার্থে এক হয়ে কাজ করবো, শান্তির বাংলাদেশ গড়বো। আমরা কোনো দায়িত্ব পেলে মালিক হিসেবে নয়, পাহারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবো। আমাদের নেতাকর্মীদের আগে যে সম্পদ থাকবে, নির্বাচনের পরেও সমান থাকবে। নিজের দিকে না তাকিয়ে জনগণের দিকে তাকাতে হবে। আমাদের কর্মীদের স্পষ্ট বলা হয়েছে, কারও সম্পদের দিকে তাকানো যাবে না। যদি এরকম কোনো ঘটনা ঘটে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো।’
তিনি গত শনিবার রাতে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। নগরীর জিন্দাবাজারস্থ একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সিলেটের হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শীর্ষ স্থানীয় ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহানগর সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন- সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজী মহারাজ, সিলেট বৌদ্ধ বিহারধ্যক্ষ শ্রীমৎ সংঘ্যানন্দ মহাথের, সিলেট প্রেসবিটারিয়ান মিশনমন্ডলীর সভাপতি ডিকন নিঝুম সাংমা, সিলেট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপীকা শ্যাম পূরকায়স্থ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মলয় পুরকায়স্থ, সিলেট জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক রজত কান্তি ভট্টাচার্য, সিলেট মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রদীপ দেব প্রমুখ।
সভায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা বলেন, ৫ আগস্টের পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। জামায়াত নেতৃবৃন্দ আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের সান্ত¡না দিয়েছেন। ইসলাম ধর্মে বাজে লোকদের জায়গা নেই। আমরা ধর্মীয়ভাবে সহনশীল হবো, রাজনৈতিক বিষয় রাজনীতিবিদরা বুঝবেন। বিগত সরকারের আমলে আমাদের কিছু দাবি-দাওয়া ছিল তারা তা মেনে নেয়নি। সংখ্যালঘুদের কোনো ফাউন্ডেশন দেওয়া হচ্ছে না। কল্যাণ ট্রাস্ট করে রেখেছে। সংখ্যালঘুরা নাগরিক অধিকার পাচ্ছে না। দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত। দেবোত্তর সম্পত্তিসহ আমাদের ৮টি দাবি বর্তমান সরকারকে মেনে নেয়ার জন্য জামায়াত আমীরের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিগত সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সম্প্রদায়, পক্ষ বিপক্ষ উপস্থাপন করে নিজ নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেছে। জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে আমরা বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চাই। সংখ্যালঘু নির্যাতন ঘটনা অধিকাংশ ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার। কিছু ঘটনা ঘটেছে রাজনৈতিক কারণে, তবে তাও আমরা সাপোর্ট করি না। আইনের ভিত্তিতে সবাইকে চলা উচিত। মানুষ মানুষের জন্য। মানুষ মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করবে কোনো ধর্ম হিসেবে কাউকে বিবেচনা করা উচিত না। আমরা প্রাইমারি থেকে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ পাশাপাশি বেঞ্চে বসি। যুগ যুগ ধরে আমরা এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের মানুষের সামাজিক অনুষ্ঠানে যাই। কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনায় ঐ জড়িতই দায়ী, ধর্ম দায়ী না। যেসমস্ত দাবি দাওয়া আপনারা করেছেন তা দেখবো এবং সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে এব্যাপারে কথা বলবো।