জগন্নাথপুরের নলজুর নদীতে ৩টি সেতু নিয়ে লাখো মানুষের দুর্ভোগ !
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৫:৩৩:৪৮ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নলজুর নদীর ওপর তিনটি সেতু নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে আছেন উপজেলার লাখো মানুষ। প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে নলজুর নদীর ওপর স্থাপিত সেতুগুলোর বেহাল অবস্থায় চলাচলে নাগরিক দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে নলজুরের প্রধান সেতু হিসেবে পরিচিত খাদ্যগুদামের সামনের পুরোনো সেতুটি ভেঙে দীর্ঘদিন থেকে নতুন সেতু নির্মাণকাজ চলছে। নদীর আরেকটি দেবে যাওয়া ডাক বাংলোর ঝূঁর্কিপূর্ণ সেতুটি অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে হুমকির মুখে। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। এছাড়াও খাদ্যগুদামের পাশে বিকল্প বেইলি সেতু দিয়ে একমুখী যান চলাচল করছে।
একমুখী বেইলি সেতু ও সংযোগ সড়কের বেহাল দশায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে ঠেকেছে। এদিকে নির্মাণাধীন নতুন সেতুর পাশে চলাচলের জন্য তৈরি করা বাঁশের সাঁকোটির অবস্থাও নাজুক। এটি দিয়ে পায়ে হেঁটে চলা দুষ্কর হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালে নলজুর নদীর ওপর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খাদ্য গুদামের সামনে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুরোনো এ সেতুটি ভেঙে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পুননির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর হয়।
এরপর গত বছরের এপ্রিল মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৬০ ভাগ কাজ এখনও শেষ হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাজ চলছে ধীরগতিতে। সেতুর পাশে ওই সময় বিকল্প হিসেবে হেলিপ্যাড এলাকায় একটি বেইলি সেতু তৈরি করা হয়।
সেতুটি তৈরির সময় স্থানীয় এলাকার লোকজন বর্ষায় এটি ডুবে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আরও উঁচু করার দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ আমলে দেয়নি। ফলে ভারি বর্ষণ ও ঢলের পানিতে সেতুটি বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যায়। যে কারণে বর্ষায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয় জনসাধারণকে।
পানি কমে গেলে যান চলাচল করলেও ভাঙ্গাচোরা পাটাতন দিয়ে তৈরি বিকল্প সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলতে হচ্ছে। এছাড়াও অ্যাপ্রোচ সড়কের বেহাল দশা বর্ণনা করার মতো নয় বলে মন্তব্য করেন ভুক্তভোগীরা।
অপরদিকে, ২০২২ সালে ১৭ মার্চ নদী খনন কালে ডাক বাংলো সেতুর পিলারের কাছ থেকে খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার সময় সেতু দেবে যাওয়ায় ১১ মাস যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে এলজিইডি ও জগন্নাথপুর পৌরসভা উদ্যোগে সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশে স্টিলের পাটাতন বসিয়ে সেতুটি চালু করা হয়।
তারপরও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ এবং নদীতে পানি বৃদ্ধি হলে চলাচলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয় লোকজনকে। ইতোমধ্যে এ সেতু থেকে পড়ে গিয়ে কয়েকজন আহত হয়েছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক এম এ কাদির বলেন, নলজুর নদীর ওপর অপরিকল্পিতভাবে সেতুর কাজ শুরু করায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে। দ্রæত গুদামের সামনের সেতুর কাজ শেষ করে ডাকবাংলো সেতুর কাজ শুরু করা দরকার। পাশাপাশি বিকল্প সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়কে সংস্কার কাজ করা জরুরি। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও সেতুর কাজ শেষ না হওয়া দুঃখজনক।
সুনামগঞ্জ জেলা জজ আদালতের পাবলিক পসিউকিউটর (পিপি) এডভোকেট মল্লিক মঈন উদ্দিন সুহেল বলেন, নলজুর নদীর ওপর সেতুগুলোর কারণে জগন্নাথপুরবাসী সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আমি এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে দ্রæত এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী সোরবার হোসেন জানান, আর্চ সেতুর কাজ দ্রæত গতিতে চলছে। আশা করছি, ফেব্রæয়ারি মাসে দৃশ্যমান হবে। তিনি বলেন, ডাক বাংলা সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। দ্রæত দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।