পরিদর্শন কমিটি নেই ৬ মাস ধরে
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বাড়ছে অনিয়ম-দুর্নীতি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ৪:৫৬:১০ অপরাহ্ন
কাউসার চৌধুরী.
“রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ”-কারা কর্তৃপক্ষ এই শপথবাক্য মননে, চেতনায় ধারণ করে বন্দিদের আলোর পথ দেখানোর কথা থাকলেও সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘটছে এর উল্টোটা। কারাগারের কারারক্ষী থেকে শুরু করে কর্মকর্তাও নানান অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে কারাগার পরিদর্শন করায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কিছুটা ভীতি কাজ করলেও গত ৬ মাস ধরে সেই কমিটির কোনো কার্যক্রমও নেই। ফলে অনিয়ম দুর্নীতি এখন বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।
জানতে চাইলে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক সিলেটের ডাককে বলেন, কারাগারে আগের তুলনায় এখন অনিয়ম হওয়ার কথা না। আর এখানে আমি নতুন এসেছি। তারপরেও যদি সুনির্দিষ্ট করে কোনো বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া যায় বা কেউ অভিযোগ দেন তাহলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে ।
সিলেটের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শের মাহমুদ মুরাদ বলেন, কারাগারের দিকে কড়া নজরদারি আছে। কোনো অনিয়ম দুর্নীতির সুযোগ নেই। তবুও কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক এ্যাকশন নেয়া হবে।
৫ আগস্টের পরবর্তী প্রেক্ষাপটে আগের পরিদর্শন কমিটি সরকার বাতিল করে দিয়েছে। নতুন করে কমিটি গঠনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো নির্দেশনা এখনো দেয়া হয়নি। নির্দেশনা আসার পরপরই নতুন পরিদর্শন কমিটি গঠন করা হবে।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট পরবর্তী সরকারের বিভিন্ন দপ্তর দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও ব্যতিক্রম কেবল সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার।
দুর্নীতিতে নিমজ্জিত কারাগার সেই আগের ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। আগের মতোই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে অনিয়ম দুর্নীতি বেশ দাপটের সাথেই চলছে।
পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা মাঝে মধ্যে পরিদর্শন করতে গেলে কারাবন্দিরা তাদের কাছে নানান অনিয়ম-অভিযোগ তুলে ধরতেন।
রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের বাইরেও পরিদর্শন কমিটিতে পেশাজীবীরা সদস্য থাকায় মূলত পেশাজীবীদের কাছেই বন্দিরা তাদের অভিযোগ দিতেন।
পাওয়া যেত অনিয়মের খবরও। কিন্তু, গত ৬ মাস ধরে পরিদর্শন কমিটির কার্যক্রম না থাকায় এখন আর কেউ কারাগার পরিদর্শনে যান না।
কেবল সরকারের নির্ধারিত অফিসারগণ কালেভদ্রে পরিদর্শনে গেলেও বন্দিরা তাদের কাছে কারাগারের অভ্যন্তরের অনিয়ম তুলে ধরার সুযোগ পাননা। আর এই সুযোগে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আগের তুলনায় অনিয়ম দুর্নীতি বাড়ছে বলে বাতিল হওয়া পরিদর্শন কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন।
বন্দিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বর্ণনা করে তিনি জানিয়েছেন, বন্দিদের অভিযোগের যেন শেষ নেই। যেখানে প্রতিনিয়ত হচ্ছে দুর্নীতি আর দুর্নীতি। কারাগারের অভ্যন্তরের হসপিটালের বেড পাওয়া যেন সোনার হরিণ।
সিট বাণিজ্য, ওয়ার্ড বাণিজ্য, বন্দিদের খাবার চড়া দামে কেন্টিনে বিক্রিসহ নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে যাওয়া লোকজনও এমনই দাবি করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান,আবারও নতুন করে পরিদর্শন কমিটি গঠন করা হলে তা কারাগারের অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বাইরে থেকে ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক অবাধে ঢুকছে। আর এজন্য বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয় মাদক বহনকারীরা।
বিশেষ করে সিলেট আদালতের হাজতখানা থেকে আসামি আনা নেয়ার সময় কৌশলে মাদকের চালান কারাগারে ঢোকানো হয়ে থাকে। এরকমই একটি ইয়াবার চালান আটক করেন কারারক্ষীরা।
কারাগারের অভ্যন্তরে প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে ধরা পড়ে ইয়াবার ওই চালান। একটি চালান ধরা পড়লেও এভাবে আরও ইয়াবার চালান কারাগারে ঢুকছে বলে সূত্র দাবি করেছে।
কারাগারে থাকা বন্দিদের হাতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পৌঁছে দেয়া হয়।
কারাগারের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২২৯ বছর পরে ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি সিলেট নগরের ধোপাদিঘীরপাড় থেকে সিলেট শহরতলীর বাদাঘাট এলাকায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তর করা হয়।
২০১৮ সালে ২০০০ জন বন্দি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই কারাগার স্থাপন করে সরকার। পুরনো কারাগারকে মেট্রোপলিটন কারাগারে রূপান্তর করা হয়েছে।