রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৬:১৬:০৯ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার না চাইলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেছেন, ‘কাউকে মাইনাস করার চিন্তাও এ সরকারের নেই। তবে একটা জায়গা মাইনাস করতে চাই। যারা জুলাই-আগস্টের খুনে জড়িত, যারা টাকা পাচার করেছে, তাদের এই দেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে সামাজিক সংগঠন ‘দ্য বাংলাদেশ ডায়লগে’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘রাজনীতির অভিমুখ: সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে অতিথি হিসেবে ছিলেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. মাহাদি আমিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এসএম সাঈদ কাদের রূপক।
আলোচনায় বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি, পররাষ্ট্র নীতি, আগামী নির্বাচন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান, বিগত সরকারের লুটপাট-স্বেচ্ছাচারিতা, গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রভৃতি বিষয় স্থান পায়।
আবু সাঈদ খান বলেন, জনআকাক্সক্ষার কারণেই বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। এই সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনেক বেশি। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণের সেই সক্ষমতা নেই। সিন্ডিকেট ভাঙছে না। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে না। এখন মানুষ চাইছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। আবার বৈষম্যবিরোধীরা একটি ঘোষণা দিতে চাইছে।
কি ঘোষণা দেবে সেটা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে না। ভূতাপেক্ষ ঘোষণা মানানসই হবে না। বিপ্লবী সরকার হলে এই সরকার কি করবে। যারা শপথ নিয়েছে তারা কি করবে। এসব নিয়ে একটি ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের রূপরেখাও অভ্যুত্থানের আগে ঘোষিত হয়েছিল।
গণমাধ্যম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণমাধ্যম কখনো স্বাধীন ছিল সেটা বলা যাবে না। গণমাধ্যম তাদের নিজের কারণেই কখনো কখনো নিজেরাই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আবার কৌশলেও সংবাদ প্রকাশ করেছে। আবার এখনো সব যে লেখা যাচ্ছে তাও নয়। আগে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে সংবাদ প্রকাশে বাধা দেয়া হতো।
এখন দেখা যাচ্ছে আবার তারা গণমাধ্যম অফিসে গিয়ে ‘শুভেচ্ছা বিনিময়’ করছে। এই শুভেচ্ছা বিনিময়ও বন্ধ হওয়া উচিত। এখনো সংবাদ প্রকাশে মানসিক বাধা আছে। মব জাস্টিসের ভয় আছে। কলমের স্বাধীনতা পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাধীন সংবাদপত্রের একটি সংস্কৃতি তৈরি করা দরকার।
কিন্তু রাজনীতি যদি পচে যায়, তখন সেটা থাকে না। রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে। কিন্তু সততা ও যোগ্যতার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।
ড. মাহাদি আমিন বলেন, বিএনপি তারুণ্যকে ধারণ করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। গত ১৬ বছর সকল গণতন্ত্র ধারণকারীদের এক প্লাটফর্মে এনে বিএনপি আন্দোলন করেছে। বিএনপির ৪২২ জন আন্দোলনে শহীদ হয়েছে। সব চেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করেছে বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে।
আজকে যেসব সংস্কারের দাবি উঠছে, সেগুলো বিএনপি অনেক আগেই করে এসেছে। যে সরকার ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসবে তাদের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকবে। আওয়ামী লীগ না থাকার কারণে একটা ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে অন্য সুবিধাভোগী রাজনৈতিক দল সক্রিয় হচ্ছে।
শফিকুল আলম বলেন, গত পাঁচ মাসে সরকারের যে অর্জন তা সাধুবাদ পাওয়ার মতো। যেভাবে ডলারের রিজার্ভ কমে যাচ্ছিল, তা এ সময়ে দুই বিলিয়নে নেমে যাওয়ার কথা। এখন সেখানে রিজার্ভের পরিমাণ ২২ বিলিয়ন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত বছরের এই সময়ের মতোই আছে।
ইতিমধ্যে জিনিসপত্রের দাম কমেছে। অর্থনীতির উন্নতি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি বেশি সংস্কার না চায়, তাহলে ডিসেম্বররে মধ্যেই নির্বাচন হবে। বাকি সংস্কার পরবর্তী সরকার এসে করবে। আর বেশি সংস্কার চাইলে আগামী বছরের জুনে নির্বাচন হবে।
জুলাই ঘোষণা প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, সবাই মিলে ঘোষণা দিলে ভাল হয়। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। সরকার কি কাজ করছে তা প্রতিদিনই জানানো হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে আদেশ জারি করা হয়েছে, কোনো গোয়েন্দা সংস্থা কোনো সংবাদ নিয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
সার্ককে সক্রিয় করার কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। আশিয়ানের সদস্য হতে চাইছে। এখন অনেক তরুণ নেতা এসেছে। এখন জনগণের সামনে অনেক বিকল্পও তৈরি হবে।