ধলাই সেতু রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন কি ব্যর্থ?
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩:৪০:৩৮ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার: সিলেট বিভাগের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ‘ধলাই সেতু’ রক্ষায় কি স্থানীয় প্রশাসন ব্যর্থ ? ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য অবলোকন ও উৎমা ছড়া পর্যটন স্পটে যাতায়াতের একমাত্র পথ এ সেতুটির পিলারঘেঁষে অবাধে বালু উত্তোলনকারীদের কোনভাবেই দমানো যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি, সচেতন ব্যক্তিবর্গ-এ নিয়ে দফায় দফায় পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলেও কাজের কাজ যেন কিছুই হচ্ছে না। উপরন্তু, বালুখেকোরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কখনো রাতের আঁধারে, কখনো সন্ধ্যা রাতে আবার কখনো প্রকাশ্য দিবালোকে এরা বালু উত্তোলন করছে।
স্থানীয়দের দাবি, সেতুর পিলারঘেঁষে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি-বালু উত্তোলন। আইন-শৃংখলা বাহিনীকে ম্যানেজ করেই চলছে অবাধে বালি উত্তোলন। খনিজ সম্পদে ভরপুর জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের সঙ্গে ভারত সীমান্তঘেঁষা তিনটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ লাখ মানুষের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে ধলাই সেতু। সে সেতু এলাকা লক্ষ্য করে অবাধে বালি উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বিভিন্ন সময় অভিযান চালালেও পুনরায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেতুর পিলারঘেঁষে বালি উত্তোলন শুরু করে তারা। এ পরিস্থিতিতে সেতু রক্ষায় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে সীমান্তবাসী।
পাড়ুয়া গ্রামের বাসিন্দা শওকত আলী বাবুল জানান, ধলাই সেতুর পিলারঘেঁষে বারকি নৌকা দিয়ে বালি তুলছে একটি অসাধু চক্র। দীর্ঘদিন ধরে পুরো এলাকা ধ্বংস করে দিয়ে সেতুর নিচ এলাকা লক্ষ্য করেছে ওই চক্র। তিনি সেতুটি রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
পূর্ব ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে সোস্যাল মিডিয়ায় এ মর্মে পোস্ট দিয়েছেন যে, ‘ধলাই ব্রীজটা পূর্ব পাড়ের মানুষের জন্য একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শত চেষ্টা করার পরেও ব্রিজটা ভাঙতেছে না।’
রইস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, ‘বালু উত্তোলনকারীদের ধরে আইনের আওতায় না নিলে সেতু রক্ষা হবে না, সংশ্লিষ্ট বালু ক্রেতা ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আঙ্গুর মিয়ার মন্তব্য, ‘সামান্য লাভের জন্য মূল্যবান ব্রীজটির ক্ষতি করছেন। এতো প্রচার প্রচারণার পরও যদি মানুষ বুঝে না-এদেরকে চিহ্নিত করে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে।’
জেলা প্রশাসকের বরাবরে স্মারকলিপি :
এদিকে, ধলাই সেতু রক্ষার দাবিতে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফজলুর রহমান। গত বুধবার (১২ মার্চ) তিনি স্মারকলিপিটি জমা দেন। এতে উল্লেখ করা হয় যে, ধলাই নদীর ওপর নির্মিত ধলাই সেতুটি সিলেট জেলার অন্যতম বৃহৎ সেতু, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াতের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও নৌকার শ্রমিকের মাধ্যমে অবাধে বালি উত্তোলন করছে, যা সেতুর পিলারের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে সেতুটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এই অবৈধ কার্যক্রম থামানো যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ পরিস্থিতিতে সেতুটি রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান ফজলুর রহমান। তিনি এলাকাবাসীর পক্ষে স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন এবং অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা রাখার দাবি জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৪৩৪ দশমিক ৩৫ মিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের সেতুটি সিলেট বিভাগের একসময়ে দীর্ঘতম সেতু ছিল। দৈর্ঘ্যের দিক থেকে বিভাগে বর্তমানে এর অবস্থান দ্বিতীয়। ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির পাশের ধলাই নদের উভয় তীরের মানুষের যাতায়াতের জন্য ২০০৩ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সেতুটি নির্মাণে ভূমিকা রাখেন-সিলেটের উন্নয়নের রূপকার সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। ধলাই সেতু নির্মিত হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর, উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ সরাসরি সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসে। পাশাপাশি দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে পাথর পরিবহন সহজ হয়।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ জানান, ধলাই সেতু এলাকায় বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের অভিযানে ১৩৬টি নৌকাও জব্দ করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সেখানে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ নিয়ে তারা স্থানীয়ভাবে মতবিনিময় করেছেন। তাদের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান ওসি।