জটিলতা দূর করে দ্রুত ফ্লাইট চালু করতে বিমানের এমডি’র সাথে আরিফুল হকের সাক্ষাৎ
ওসমানী বিমানবন্দরে ৬ বছর ধরে কার্গো ফ্লাইট বন্ধ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩:৪৫:০৯ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত ৬ বছর ধরে কার্গো ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বিপাকে রয়েছে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও দেশে অবস্থানরত স্বজনরা। এ অবস্থায় ‘লাভজনক’ এ রুটে ফ্লাইট চালুর দাবি জোরালো হচ্ছে।
বিমান সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৯ সালে লন্ডন-সিলেট কার্গো ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। অন্য একটি সূত্র জানায়, পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেনের সাথে সংশ্লিষ্টদের বনিবনা না হওয়াও এ ফ্লাইট বন্ধের মূলে রয়েছে।
গ্রেটার সিলেট ডেভেলপম্যান্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার (জিএসসি) কাউন্সিল ইন ইউকে’র ট্রেজারার সুফি সুহেল আহমদ অভিযোগের সুরে বলেন, বন্ধ হবার আগে তারা যুক্তরাজ্য থেকে প্রতিকেজি পণ্য কার্গোযোগে ৩.৫০ পাউন্ড (৫২৫ টাকা) মূল্যে প্রেরণ করতে পারতেন। এখন কমার্শিয়াল কার্গোযোগে প্রতি কেজি পণ্য তাদেরকে ৬.৫০ পাউন্ডে(৯৭৫টাকা) পাঠাতে হচ্ছে। কার্গোর উচ্চ মূল্যের কারণে অনেকেই কার্গোযোগে মালামাল পাঠাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। দেশে আসার আগে প্রবাসীরা বেশী মালামাল হলে তা কার্গোযোগে পাঠিয়ে আসতেন। অনেকে কার্গোযোগে চ্যারিটির মালামালসহ অন্যান্য পণ্যও দেশে পাঠাতেন। কিন্তু, এখন সুযোগ আর নেই। এখন দেশের গরীব-অসহায় লোকজনের পাশাপাশি প্রবাসী পরিবারের স্বজনরাও এ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা দ্রুত কার্গো ফ্লাইট চালুর দাবি জানিয়েছেন।
এমডি’র সাথে সাক্ষাৎ করে কার্গো ফ্লাইট চালুর দাবি জানালেন আরিফুল হক চৌধুরী :
দীর্ঘদিন থেকে কার্গো ফ্লাইট বন্ধ থাকায় সম্প্রতি ঢাকায় বলাকা ভবনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. মো. সাফিকুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।
বিমানের চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেটের বেশীরভাগ মানুষ লন্ডন প্রবাসী। দেশে আসার সময় তারা স্বজনদের জন্য অনেক জিনিসপত্র নিয়ে আসতে চান। অতিরিক্ত মালামাল তারা কার্গোযোগে প্রেরণ করতেন। এর মাধ্যমে প্রচুর রাজস্বও আয় হতো। কিন্তু, কার্গো ফ্লাইট বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা এ নিয়ে চরম বেকায়দায় রয়েছেন। তিনি কার্গো ফ্লাইট চালু করার সকল জটিলতা দূর করে তা চালুর দাবি জানান। অতীতে শেখ কবির হোসেনের কারণে এ ফ্লাইট বন্ধ হয়েছিল বলেও জানান তিনি।
বিমানের এমডি এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় বিমানের পরিচালক (মার্কেটিং ও সেলস) আশরাফুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
কাস্টমস ডিউটি অত্যধিক :
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বিমানের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ফরেন রেমিটেন্স দিয়েই প্রবাসীরা বিভিন্ন জিনিসপত্র দেশে আনেন। অনেক সময় কার্গো ফ্লাইটে আসা মালামালকে আমদানি পণ্য আখ্যা দিয়ে শতভাগ ডিউটি আরোপ করে। যে কারণে কাস্টমসের ভয়ে অনেকেই কার্গোযোগে মালামাল পাঠাতে চান না। অথচ অনেক সময় বিমানের ফ্লাইট খালি আসে। কাস্টমসের এ প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেলে এ ফ্লাইট চালু করতে কোন সমস্যা হবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
বেবিচকের চেয়ারম্যান যা বলেন :
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিককে জানান, দ্রুত কার্গো পণ্য রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে সিলেটের ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা ও পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বিষয়ক সব কিছুই প্রস্তুত রয়েছে। প্রস্তুতিশেষে আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কার্গো ফ্লাইট চালুর আশাবাদ তার।
সূত্র জানায়, ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাব এড়াতে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। তার আগেই ২০১৯ সালে শেষবার কার্গো বিমান যায় সিলেটে।
প্রসঙ্গত, সিলেট অঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ প্রবাসী যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। এর মধ্যে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কার্গো টার্মিনালও নির্মিত হয়েছে। এরই মধ্যে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ক্যাটাগরি ১ এ উন্নীত হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (আইকাও) একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করে এ ঘোষণা দেন। এই দুটি বিমানবন্দর দিয়ে ফ্লাইট চালু হলে পণ্য সরাসরি ইউরোপে যাবে। একদিকে যেমন ভোগান্তি কমবে, সেই সঙ্গে বাড়তি অর্থ খরচের হাত থেকেও রক্ষা পাবে। পাশাপাশি দ্রুত পণ্য রপ্তানি করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।